Advertisement
০২ মে ২০২৪
Coronavirus in West Bengal

করোনার ভয়ে এল না কেউ, শ্মশান-সঙ্গী হলেন রেজাউল

ইঁদপুরের গৌরবাজার গ্রামের বছর বাহান্নর দিনমজুর রোহিত ঘোষ কয়েক দিন ধরে সর্দি-কাশি-জ্বরে ভুগছিলেন।

শ্মশানে পিপিই পরে রেজাউল খান। নিজস্ব চিত্র

শ্মশানে পিপিই পরে রেজাউল খান। নিজস্ব চিত্র

শুভেন্দু তন্তুবায়
ইঁদপুর শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০২১ ০৫:২৭
Share: Save:

প্রৌঢ়ের আকস্মিক মৃত্যুর পরে, করোনা সংক্রমণের ভয়ে দাহের কাজে এগিয়ে আসেননি পাশের বাড়িতে থাকা ভাইয়েরা। পড়শিদেরও পাশে পাওয়া যায়নি দাবি মৃতের পরিবারের। এমন পরিস্থিতিতে ‘পিপিই কিট’ পরে দেহ নিয়ে শ্মশানে গিয়ে দাহ করালেন বাঁকুড়ার ইঁদপুর পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূলের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ রেজাউল খান। শুক্রবার রাতের ঘটনা। মৃতের স্ত্রী কল্যাণী ঘোষ বলেন, ‘‘চরম বিপদে একমাত্র উনি যে ভাবে পাশে দাঁড়ালেন, চিরদিন কৃতজ্ঞ থাকব।’’’ বছর চৌত্রিশের রেজাউল অবশ্য বলছেন, ‘‘এখানে সব ধর্মের মানুষ বিপদে-আপদে একে অন্যের পাশে দাঁড়ান। সেটাই করেছি।’’

ইঁদপুরের গৌরবাজার গ্রামের বছর বাহান্নর দিনমজুর রোহিত ঘোষ কয়েক দিন ধরে সর্দি-কাশি-জ্বরে ভুগছিলেন। তাঁর ছেলে ঠিকা শ্রমিকের কাজে কেরলে রয়েছেন। রোহিতবাবুর স্ত্রী কল্যাণীদেবী জানান, শনিবার ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে স্বামীকে করোনা পরীক্ষা করাতে নিয়ে যাবেন বলে ঠিক ছিল। কিন্তু শুক্রবার সন্ধ্যায় বাড়িতে শৌচালয় থেকে বেরিয়ে হঠাৎ পড়ে যান রোহিতবাবু। কল্যাণীদেবীর দাবি, হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। খবর পেয়ে মেয়ে-জামাই পৌঁছন। পরিবারটির দাবি, দাহকার্যের জন্য পড়শিরা দূরের কথা, পাশের বাড়িতে থাকা রোহিতবাবুর ভাইয়েরাও
এগিয়ে আসেননি।

খবর পেয়ে পাশের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত গ্রাম সাতস্যগড়্যার যুবক তথা ইঁদপুর পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূলের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ রেজাউল খান পৌঁছন। তিনিই আশপাশের গ্রাম থেকে যুব তৃণমূলের কয়েক জন কর্মীকে জোগাড় করেন। ‘পিপিই কিট’ পরে দেহ নিয়ে যান শ্মশানে। রাত তখন প্রায় ১২টা বাজে। সৎকারের পুরো সময় রেজাউলরা ছিলেন পরিবারটির পাশে। এ দিন বহু চেষ্টা করেও কথা বলা যায়নি রোহিতবাবুর ভাইয়েদের পরিবারের সঙ্গে। তবে পড়শি ধনঞ্জয় বাউরির দাবি, ‘‘করোনা হয়েছিল কি না, জানতে না পারায় গ্রামের লোকেরা যাননি।’’

কল্যাণীদেবী জানান, এ দিন সকালে তিনি এবং মেয়ে-জামাই ইঁদপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে র‌্যাপিড কিটে করোনা পরীক্ষা করিয়েছেন। ইঁদপুর ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক কাজল দে জানান, তিন জনেরই রিপোর্ট ‘নেগেটিভ’ এসেছে। বিডিও (ইঁদপুর) সৌমেন দাস বলেন, ‘‘করোনা নিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে। সচেতনতা তৈরি করে তা কাটানোর চেষ্টা করছি। এই সময়ে মানবিকতা সব থেকে জরুরি বিষয়। রেজাউলের ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।’’ রাজনীতিকে সীমানার বাইরে রেখে বিজেপির ইঁদপুর ১ মণ্ডলের সভাপতি তারকনাথ গোস্বামীর মন্তব্য, ‘‘আমাদের এলাকায় সম্প্রীতির বাতাবরণ চিরকালের। ভাল কাজ করেছেন রেজাউল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in West Bengal COVID19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE