—ফাইল চিত্র।
ক্রমবর্ধমান সংক্রমণের সঙ্গে পাল্লা দিতে আরও সাত হাজার অক্সিজেন ফ্লো-মিটার কিনতে চলেছে রাজ্য সরকার। এ ছাড়াও অক্সিজেন ব্যবহারের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনাতেও জোর দিচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর। প্রশাসন সূত্রের খবর, বর্তমানে রাজ্যের ভাঁড়ারে ২০-৩০ হাজার অক্সিজেন ফ্লো-মিটার রয়েছে। যার থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী সরবরাহ করা হচ্ছে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে। স্বাস্থ্য শিবিরের ব্যাখ্যা, আপৎকালীন পরিস্থিতিতে অক্সিজেন সিলিন্ডার, ফ্লো-মিটার, কনসেনট্রেটর এই তিনটি জিনিস কতটা আছে, কী ভাবে সেটি ব্যবহার হচ্ছে এবং সর্বোপরি একটি হাসপাতালে দৈনিক চাহিদা কতটা হচ্ছে তার সঠিক মূল্যায়নটা খুবই জরুরি। আর সেটি করে অন্তত ২-৩ দিন আগে হিসেবটি সংশ্লিষ্ট জায়গায় জানালে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
হাসপাতালে অক্সিজেন প্লান্ট বা ট্যাঙ্ক থাকার পরেও, 'বি' (১৪০০ লিটার) ও ‘ডি’ (৭ হাজার লিটার) টাইপ সিলিন্ডার ৩ হাজার পিস করে মোট ৬ হাজার কেনার জন্য ইতিমধ্যে টেন্ডারও ডাকা হয়েছে। আজ, বৃহস্পতিবার সেই টেন্ডার খোলা হবে। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘আপাতত ৬ হাজার সিলিন্ডার কেনা হচ্ছে। প্রয়োজনে পরে আরও ৬ হাজার কেনা হবে।’’ এক স্বাস্থ্য আধিকারিকের কথায়, ‘‘মূল্যায়নে যাতে কোনও খামতি না থাকে তার জন্য কোভিড পেশেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম-এ জোর দেওয়া হয়েছে। রিয়েল টাইমে যাতে সমস্ত রোগীর সমস্ত তথ্য সেখানে আপলোড করা হয় তার জন্য প্রতিটি হাসপাতালের একজন সহকারী সুপার ও এক জন নার্সকে দায়িত্ব বেঁধে দেওয়া হয়েছে। অক্সিজেনের যাবতীয় বিষয়ও নজরদারির জন্য একজন নার্সকে নির্দিষ্ট করতে বলা হয়েছে।’’
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, সংক্রমণ বৃদ্ধির বিপদ আঁচ করে কয়েক দিন আগেই রাজ্য প্রথমে এক হাজার ফ্লো-মিটার কেনার জন্য অর্ডার দেয়। তার মধ্যেই মঙ্গলবার বিদ্যাসাগর হাসপাতালের ঘটনাটি ঘটে যায়। এরপরে বুধবার স্বাস্থ্য দফতর আরও ছয় হাজার ফ্লো-মিটার কেনার সিদ্ধান্ত নেয়।
অক্সিজেন সিলিন্ডারের ঘাটতি নিয়েও সমস্যা ছিল। সূত্রের খবর, সরকারি হাসপাতালে বি টাইপ সিলিন্ডার রয়েছে ২৫ হাজার, বেসরকারি হাসপাতাল, ওষুধের দোকান, শ্বাসকষ্টের রোগীদের বাড়িতে থাকা সিলিন্ডার মিলিয়ে সেটির সংখ্যাও প্রায় ৫০ হাজার। আবার ডি টাইপ সিলিন্ডার সরকারি হাসপাতালে রয়েছে প্রায় ২৫ হাজার। বেসরকারি স্তরে সেই সংখ্যা প্রায় ২৪ হাজার। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি ১৬০০টি ‘বি’ টাইপ এবং ৪০০টি ‘ডি’ টাইপ সিলিন্ডার কিনে তা বিভিন্ন সরকারি কোভিড হাসপাতালেও দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য শিবিরের খবর, দৈনিক চাহিদাতে কোনও ঘাটতি না রাখতে সরকারি স্তরে এই মুহূর্তে ৪৯ হাজার ৫২৬টি 'ডি' টাইপ এবং ১৯ হাজার ৪৫৪টি 'বি' টাইপ সিলিন্ডার বিভিন্ন অক্সিজেন সরবরাহকারী সংস্থা থেকে ভাড়া নেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল আরও ২০ হাজার সিলিন্ডারকে মেডিক্যাল সিলিন্ডারে পরিবর্তন করা হয়েছে। দুর্গাপুর, হলদিয়া শিল্পাঞ্চল থেকে আনা হচ্ছে সেই সব সিলিন্ডার।
সিলিন্ডারের পাশাপাশি চাহিদা অনুযায়ী অক্সিজেনের জোগান ঠিক রাখতে ব্যবহার করা হচ্ছে কনসেনট্রেটর। রাজ্যের সমস্ত সরকারি হাসপাতালেই ওই যন্ত্র রয়েছে। তার পরেও করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলাতে গত বছরই অতিরিক্ত ১৫০০ টি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর বিভিন্ন হাসপাতালকে দেওয়া হয়েছে। এ বছর এখনও পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের চাহিদা অনুযায়ী ৪৫০টি কনসেনট্রেটর দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়াও রাজ্যে এ মুহূর্তে এম আর বাঙুর হাসপাতাল, চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউট (সিএনসিআই), বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল সহ অন্যান্য জায়গা মিলিয়ে ৭টি তরল-অক্সিজেন প্লান্ট রয়েছে। সেই তালিকায় আরও ৬টি হাসপাতালকে যুক্ত করা হচ্ছে। পাশাপাশি ডায়মন্ড হারবার, কোচবিহার, মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ এবং আলিপুরদুয়ার, ইসলামপুর জেলা হাসপাতালে ‘পিএসএ’ সিস্টেমের অক্সিজেন প্লান্ট বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। যা বাতাস থেকে অক্সিজেন তৈরি করবে। এক স্বাস্থ্য কর্তার কথায়, ‘‘আগামী দিনে আরও ১০৫টি সরকারি হাসপাতালে পিএসএ-সিস্টেম অক্সিজেন প্লান্ট বসতে চলেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy