Advertisement
E-Paper

স্ট্রেনের ধাঁধায় দিগ্‌ভ্রান্ত করোনার পূর্বাভাস

সংক্রমণের জন্য করোনাভাইরাসের পুরনো স্ট্রেন কতটা দায়ী, তাও ভাবাচ্ছে গবেষকদের।

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২১ ০৫:৪১
প্রাণবায়ু: করোনার জন্য অক্সিজেনের চাহিদা তুঙ্গে। তার মধ্যেই কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছল সিলিন্ডার। শুক্রবার।

প্রাণবায়ু: করোনার জন্য অক্সিজেনের চাহিদা তুঙ্গে। তার মধ্যেই কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছল সিলিন্ডার। শুক্রবার। ছবি: সুমন বল্লভ।

করোনা সংক্রমণের গতিবিধির পূর্বাভাস দিতে গিয়ে রীতিমতো অন্ধকারে হাতড়াতে হচ্ছে বিশেষজ্ঞদের। পূর্বাভাস দেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যার কারণ ব্যাখ্যা করে তাঁরা জানাচ্ছেন, বর্তমান সংক্রমণের জন্য দায়ী একাধিক স্ট্রেন। কিন্তু বড় সমস্যা হল, কোন স্ট্রেনে কত জন সংক্রমিত হচ্ছেন, সে ভাবে তার কোনও তথ্যই নেই। ফলে কবে করোনা লেখচিত্র শীর্ষে উঠবে, তা নির্দিষ্ট ভাবে বলা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। নিয়ম মতো সংক্রমণের লেখচিত্র শীর্ষে ওঠার পরেই ধীরে ধীরে তা নীচে নামার কথা। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে সেই পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব নয় বলেই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। তাই গত বছর সংক্রমণের গতিবিধি নিয়ে পূর্বাভাস শোনা গেলেও সাম্প্রতিক করোনা-ঝড়ে সে সমস্ত অতীত।

‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ’-এর প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল নির্মল গঙ্গোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, মহারাষ্ট্রে সংক্রমণের জন্য যেমন করোনাভাইরাসের বি ১.৬১৭ স্ট্রেন দায়ী। পশ্চিমবঙ্গে আবার বি ১.৬১৮ স্ট্রেনের প্রাধান্য। তাঁর কথায়, ‘‘এই থার্ড মিউট্যান্টের কারণে পশ্চিমবঙ্গে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে।’’ সার্স-কোভ-২-সহ যে কোনও ভাইরাসই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চরিত্র বদল করে। যখন কোনও ভাইরাস নিজেরই ‘কপি’ তৈরি করে, তখন তাতে বদল আসে। এই বদল বা পরিবর্তনকেই মিউটেশন বলা হয়ে থাকে। কোনও ভাইরাসের এক বা একাধিক বার মিউটেশন হলে তাকে ‘অরিজিনাল’ ভাইরাসের ‘ভ্যারিয়্যান্ট’ বলা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে যুক্ত এক গবেষকের কথায়, ‘‘কোনও ভাইরাস যত বেশি মাত্রায় ছড়িয়ে পড়তে পারে, তত সেই ভাইরাস কপি তৈরি করে। ফলে নিজেকে পরিবর্তনের সুযোগ পায়। যেমনটা সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের ক্ষেত্রে হচ্ছে।’’ সেটাই সংক্রমণের গতিবিধি সম্পর্কে ধোঁয়াশা তৈরি করেছে বলে মনে করছেন অনেকে।

তাঁদের বক্তব্য, গত বছর সার্স-কোভ-২-এর যে স্ট্রেনের কারণে জনগোষ্ঠীর একটি অংশ সংক্রমিত হয়েছিল, নতুন স্ট্রেনের কারণে তারা যে ফের সংক্রমিত হবে না, এমন নিশ্চয়তা নেই। ‘দ্য ইনস্টিটিউট অব ম্যাথেমেটিক্যাল সায়েন্সেস’-এর বিজ্ঞানী সিতাভ্র সিংহ গত বছর থেকেই করোনা সংক্রমণের ম্যাথেমেটিক্যাল মডেল নিয়ে কাজ করছেন। সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘‘সমস্যার বিষয়টি হল, কোন স্ট্রেনের মাধ্যমে কত জন সংক্রমিত হচ্ছেন, সেই সংক্রান্ত তথ্য আমাদের হাতে নেই। ফলে সংক্রমণের গতিবিধি পুরোটাই অনুমানের উপরে দাঁড়িয়ে। এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে বলা খুব মুশকিল।’’

এমনকি, সংক্রমণের লেখচিত্র ঠিক কোন কারণের জন্য ঊর্ধ্বমুখী সে ব্যাপারেও নানা তত্ত্ব উঠে আসছে। নতুন স্ট্রেন তো রয়েছেই। সেই সঙ্গে সংক্রমণের জন্য করোনাভাইরাসের পুরনো স্ট্রেন কতটা দায়ী, তাও ভাবাচ্ছে গবেষকদের। এ ক্ষেত্রে একটি ‘অল্টারনেটিভ হাইপোথিসিস’ দিচ্ছেন তাঁরা। তা হল, কেউ পুরনো স্ট্রেনের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়ে থাকলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর শরীরে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি কমে যেতে পারে। ফলে তিনি পুনরায় সংক্রমিত হতে পারেন। এক গবেষকের কথায়, ‘‘এই অনুমান যদি ঠিক হয়, সে ক্ষেত্রে নতুন স্ট্রেনের মাধ্যমে সবাই সংক্রমিত না-ও হতে পারেন। সংক্রমণের পিছনে দায়ী থাকতে পারে পুরনো স্ট্রেনও। কিন্তু পর্যাপ্ত তথ্য না থাকায় এগুলি সবই অনুমানের উপরে দাঁড়িয়ে রয়েছে।’’ কানপুরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির ‘ম্যাথেমেটিক্স ও স্ট্যাটিস্টিক্স’-এর অধ্যাপক মলয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘কোন রাজ্যে কত জন, কোন স্ট্রেনে আক্রান্ত, সে সম্পর্কিত তথ্য আমাদের কাছে নেই। ফলে এই মুহূর্তে করোনা সংক্রমণের গতিবিধি সম্পর্কে পূর্বাভাস করা মুশকিল।’’

ফলে কবে করোনার লেখচিত্র ফের নিম্নমুখী হবে, তার অপেক্ষা করা ছাড়া আপাতত বিকল্প নেই বলেই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা।

Corona coronavirus COVID19
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy