Advertisement
E-Paper

লকডাউনে প্রভাব ‘কয়লা কারবারেও’

স্থানীয় সূত্রের দাবি, সালানপুর, বারাবনি, রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া-সহ জেলার নানা প্রান্তে পাঁচ হাজারেরও বেশি কুয়ো-খাদ (কুয়োর মতো খাদ কেটে কয়লা স্তরে ঢোকা হয়), ১৬টি খোলামুখ অবৈধ খনি এই কারবারের ভিত্তি।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১০ মে ২০২০ ০৭:০৪
রানিগঞ্জের তিরাটে অবৈধ খোলামুখ খনিতে বন্ধ রয়েছে কাজ। জমেছে জল। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ

রানিগঞ্জের তিরাটে অবৈধ খোলামুখ খনিতে বন্ধ রয়েছে কাজ। জমেছে জল। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ

ধস, আগুন, ফাটল— শব্দগুলোর সঙ্গে অনেক দিন পরিচয় পশ্চিম বর্ধমানের। জনসাধারণ থেকে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনগুলির বড় অংশের অভিযোগ, এ সবের মূলে কয়লার অবৈধ কারবার। কিন্তু জেলার নানা প্রান্তের বাসিন্দাদের অভিজ্ঞতা, লকডাউনে সে কারবার চলছে না। ফলে, কর্মহীন তাতে জড়িত ‘শ্রমিকেরা’। তাঁরা জানান, ‘মালিক’-দের (মাফিয়া) দেওয়া খাবারদাবারে সংসার চলছে তাঁদের। তবে পুলিশের দাবি, এই কারবার লকডাউন বলে নয়, অনেক দিনই বন্ধ।

স্থানীয় সূত্রের দাবি, সালানপুর, বারাবনি, রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া-সহ জেলার নানা প্রান্তে পাঁচ হাজারেরও বেশি কুয়ো-খাদ (কুয়োর মতো খাদ কেটে কয়লা স্তরে ঢোকা হয়), ১৬টি খোলামুখ অবৈধ খনি এই কারবারের ভিত্তি। এমনকি, পাণ্ডবেশ্বর, অণ্ডাল ও লাউদোহায় ইসিএল-এর কিছু বৈধ খোলামুখ খনি থেকেও কয়লা চুরির অভিযোগ উঠেছে বারবার।

বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, মজুত কয়লা ৩১ মার্চ পর্যন্ত গভীর রাতে ট্রাক বা ডাম্পারে করে (এক-একটিতে ২৬-৩০ টন) নানা কারখানায় পাচার হয়েছে। লকডাউনে অবৈধ কয়লা কাটা বন্ধ। ২০ হাজার শ্রমিক কর্মহীন, দাবি জেলায় অবৈধ কয়লা-কারবারে যুক্ত হিসেবে পরিচিতদের।

কুয়ো খাদানের ক্ষেত্রে এই শ্রমিকদের তিন ভাগ: ‘মালকাটা’ (যাঁরা কয়লা কাটছেন। দৈনিক আয়, ৮০০ থেকে ১,০০০ টাকা), ‘ঝিকা-পার্টি’ (খনিগর্ভ থেকে খনিমুখ পর্যন্ত কয়লা আনেন যাঁরা। দৈনিক আয়, প্রায় ৪০০ টাকা), ‘রসাটান’ (খনিমুখ থেকে খনির উপরে কয়লা আনেন যাঁরা। দৈনিক আয় প্রায় ৪০০ টাকা)। এখন সব আয় বন্ধ, জানান ইকড়ার শ্রমিক সোনু মল্লিক, জামুড়িয়ার স্বপন গড়াই, সুমিত মাজিরা (সব নামই পরিবর্তিত)। তাঁদের কথায়, ‘‘আনাজ বিক্রি করে, শুধু রেশনের উপরে ভরসা করে সংসার চালানো যায় না। মালিকেরা খাবার, মশলাপাতি, তেল সবই দিচ্ছেন। তাই সংসার চলছে।’’

কারবার বন্ধ থাকার প্রধান কারণ, ক্রেতা নেই। সূত্রের দাবি, অবৈধ কয়লার ক্রেতা মূলত ‘বয়লার’ রয়েছে, এমন ক্ষুদ্র শিল্প-কারখানা। কিন্তু লকডাউনে ছাড় পেলেও এগুলির বেশির ভাগেরই উৎপাদন এখনও বন্ধ। ফলে, কয়লা কাটার দরকার হচ্ছে না।

লকডাউন উঠলেও কতটা এবং কবে ‘স্বাভাবিক’ হবে কারবার, তা নিয়ে সংশয়ে এই কারবারের মাথারা। তাঁরা জানান, কয়েক সপ্তাহ কাজ না হলে, একটি কুয়ো-খাদ থেকে জল বার করতে হয়। তাতে‌ প্রায় দশ হাজার টাকা খরচ হয়। কিছু অবৈধ কুয়ো-খাদের পাশে জলাশয় বা ছোট নদীর স্রোত থাকে। সে ক্ষেত্রে জল তোলার খরচ প্রায় ৫০ হাজার টাকায় দাঁড়ায়। খোলামুখ খনি পুরোপুরি জলে ভরে গেলে, তা তুলতে অন্তত চার-পাঁচ লক্ষ টাকা খরচ হয়। লকডাউনের মধ্যে শ্রমিকদের সংসার চালানোর বন্দোবস্ত করার পরে, খনি থেকে জল তোলার জন্য বাড়তি খরচ করা তাঁদের পক্ষেও বেশি ঠেকছে।

রানিগঞ্জের সিপিএম বিধায়ক রুনু দত্ত বলেন, ‘‘করোনা-আতঙ্কের জেরে কয়লার অবৈধ কারবারে প্রভাব পড়েছে। এই কারবারকে সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ করতে সরকার এখনই উদ্যোগী হোক।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি জিতেন্দ্র তিওয়ারি অবশ্য বলেন, ‘‘সিআইএসএফ চাইলেই অবৈধ কয়লার কারবার পুরোপুরি বন্ধ হবে।’’

এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি ইসিএল-এর সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায়। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারটের কর্তাদের দাবি, জেলায় অবৈধ কয়লার কারবার লকডাউন পর্বের অনেক আগে থেকেই বন্ধ রয়েছে। সিআইএসএফের তরফে দাবি করা হয়েছে, কয়লার অবৈধ কারবার রুখতে তারা লাগাতার অভিযান চালায়।

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy