প্রথমেই বলা হচ্ছে, হাতে সময় নিয়ে পরিষেবার বরাত দিন। তার পরে নির্ধারিত তারিখ হিসাবে এমন দিন জানানো হচ্ছে, যা আসতে অনেকটাই দেরি। সেই তারিখও পেরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু জরুরি সামগ্রী হাতে পৌঁছচ্ছে না। সীমান্ত সংঘর্ষে বহু উড়ান বাতিলের জেরে এই সময়ে দেশের মধ্যে কুরিয়র পরিষেবা পেতে এমনই নাজেহাল হতে হচ্ছে বলে ভুক্তভোগীদের দাবি। কবে প্রয়োজনীয় সামগ্রী এসে পৌঁছবে, সেই তারিখ নির্দিষ্ট করে বলতে পারছে না ই-কমার্স সংস্থাও। ভুক্তভোগীদের দাবি, আটকে থাকছে ওষুধ, অস্ত্রোপচারের সামগ্রী থেকে জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জাম। পরীক্ষার দিন পেরিয়ে গেলেও হাতে এসে পৌঁছচ্ছে না জরুরি নথি। অফিসের জরুরি নথিও আটকে ভোগান্তি হচ্ছে।
একটি কুরিয়র সংস্থার পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান হিমেশ শর্মা বলছেন, ‘‘করোনার সময়েও এমন পরিস্থিতি হয়নি। করোনার সময়ে, বিশেষ করে ওষুধ বা জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জামের জন্য সরকার উদ্যোগী হয়ে ব্যবস্থা করেছিল। কিন্তু গত এক সপ্তাহেই যা অবস্থা, তাতে কত দিন ভুগতে হবে, এখনই আন্দাজ করা যাচ্ছে না।’’ কুরিয়র সংস্থার সঙ্গে যুক্তদের দাবি, এই মুহূর্তে দেশের উত্তর, পশ্চিম এবং মধ্য এলাকা মিলিয়ে প্রায় ২৭টি বিমানবন্দর বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়াও একাধিক বিমানবন্দরে কিছু পরিষেবা আংশিক বন্ধ রয়েছে। যার চাপ পড়ছে দেশের অন্য বিমানবন্দরের উপরে। যার জেরে আটকে বহু কুরিয়র। প্রসাধনী থেকে ই-কমার্স সংস্থার যে সমস্ত পণ্য আকাশপথে পৌঁছয়, সেগুলিও কবে পৌঁছবে, উত্তর নেই।
একটি কুরিয়র সংস্থার সল্টলেক শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত তন্ময় ঘোষ আবার বললেন, ‘‘প্রতিদিনই আটকে থাকা সামগ্রীর ভিড় বাড়ছে। সমস্ত বিমানবন্দরে এই মুহূর্তে কড়া পরীক্ষা চলছে। গেট পাস পেতে কড়া পরীক্ষার মুখে পড়তে হচ্ছে। জরুরি এবং অতি প্রয়োজনীয় সামগ্রী ছাড়া প্রায় সমস্ত কিছুই আটকে দেওয়া হচ্ছে।’’ একটি বহুজাতিক কুরিয়র সংস্থার কর্তা রমেশ ঝা-র মন্তব্য, ‘‘পোশাক, ঘর সাজানোর সামগ্রী বা বৈদ্যুতিন সামগ্রী— মূলত উত্তর ভারত দিয়ে যে সমস্ত জিনিস বেশি মাত্রায় দেশের বিভিন্ন অংশে পৌঁছয়, সেগুলিতেই মূল সমস্যা। সময়ে কুরিয়র না পৌঁছনোর ভূরি ভূরি অভিযোগ পাচ্ছি। কিন্তু পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে, নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।’’
এই পরিস্থিতির জন্যই ভুগতে হচ্ছে বলে দাবি বেলেঘাটার বাসিন্দা সন্দীপ তপাদারের পরিবারের। তাঁর মেয়ে জানালেন, কর্কট রোগের অস্ত্রোপচারে সন্দীপের ইউরিনারি ব্লাডার বাদ গিয়েছে। আইলিয়োস্টমি ব্যাগের মাধ্যমে মূত্র ত্যাগ করাতে হয় তাঁকে। সেই কারণে তাঁর পেটের কাছে ইউরোস্টমি ফ্লাঞ্চ লাগানো থাকে। লন্ডনের একটি সংস্থার এই ফ্লাঞ্চ তাঁদের আনাতে হয় দিল্লি হয়ে। বর্তমানে দিল্লি বিমানবন্দর চালু থাকলেও কুরিয়র সংস্থার গোলমালে কবে তাঁদের কাছে সেটি পাঠানো সম্ভব হবে, জানা নেই বলে জানিয়ে দিয়েছে দিল্লির সংশ্লিষ্ট সংস্থা। সন্দীপের মেয়ে বলেন, ‘‘কত দিন এই পরিস্থিতি থাকবে, কিছুই নাকি বলা যাচ্ছে না। ই-কমার্স ওয়েবসাইটও সময়ে ডেলিভারি করতে পারবে না দেখাচ্ছে। এ দিকে, এই ফ্লাঞ্চ ছাড়া বাবাকে রাখাই মুশকিল।’’
কর্কট রোগের চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, ‘‘বহু জীবনদায়ী ওষুধ এবং মেডিক্যাল সরঞ্জাম পাওয়ার ক্ষেত্রে এই পরিস্থিতিতে সমস্যা হতে পারে। জরুরি অস্ত্রোপচারের সময়ে হাসপাতালগুলিতেও সমস্যা হবে।’’ স্নায়ুরোগ চিকিৎসক বিমানকান্তি রায় আবার বলছেন, ‘‘নিউরো সংক্রান্ত বেশ কিছু জরুরি ওষুধ বাইরে থেকে আনাতে হয়। ইতিমধ্যেই সীমান্ত সংঘর্ষ পরিস্থিতির প্রভাব পড়তে শুরু করেছে রোগীদের উপরে।’’
‘বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক পৃথ্বী বসু যদিও বলছেন, ‘‘সাধারণ পাইকারি ক্ষেত্রে এখনও সমস্যা নেই। কিন্তু কুরিয়র ঘিরে সমস্যা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে নিশ্চয়ই সরকার ভেবে পদক্ষেপ করবে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)