রোজ ভ্যালির তিন কর্তাকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে আদালতে পেশ করার জন্য এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-কে নির্দেশ দিলেন ব্যাঙ্কশালে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের বিচারক চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়। মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ১১ জানুয়ারি।
এ দিন আদালতে রোজ ভ্যালির কর্ণধার গৌতম কুণ্ডুর আইনজীবী বিপ্লব গোস্বামী অভিযোগ করেন, ২০১৫ সালে ১৮ অগস্ট এই মামলায় আদালতে চার্জশিট পেশ করেছে ইডি। সেই থেকে তাঁর মক্কেল গৌতম চুপ করে জেলে বসে রয়েছেন। তাঁকে জেরা করে মামলার বিচার প্রক্রিয়া এখনও শুরু হয়নি। এমনকী, চার্জশিটের প্রতিলিপিও তাঁর মক্কেলকে দেওয়া হয়নি। ইডি আদালতে এর ব্যাখ্যা দিয়ে জানায়, যত দিন পর্যন্ত এই মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে আরও চার জনকে গ্রেফতার করে আদালতে পেশ করা যাচ্ছে না, তত দিন বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে না।
কেন তাঁদের গ্রেফতার করা যাচ্ছে না? ইডি জানায়, এই চার জনের মধ্যে অন্যতম রোজ ভ্যালির প্রধান হিসেব রক্ষক সুধীর সাউকে হাইকোর্টের নির্দেশে গ্রেফতার করা যাচ্ছে না। বাকি তিন জনের মধ্যে সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর শিবময় দত্ত, ডিরেক্টর অশোক সাহা এই মুহূর্তে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়ে ওড়িশার জেলে রয়েছেন। তৃতীয় জন ডিরেক্টর রামলাল গোস্বামী অসুস্থ। তিনি কলকাতায় রয়েছেন।
বিপ্লববাবুর অভিযোগ, এর আগেই আদালত এই তিন জনকে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছিল। সেই নির্দেশের প্রতিলিপি ওড়িশা জেলে পাঠানো হয়েছিল। তার ভিত্তিতে রামলালের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি হয়েছিল। এ কথা শুনে ইডি-র আইনজীবী ও অফিসারদের চেপে ধরেন বিচারক। ইডি জানায়, রামলাল যে ঠিকানায় ছিলেন সেখানে তাঁকে পাওয়া যায়নি। বিচারক পাল্টা বলেন, আগের দিন তো ইডি-র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল রামলাল শয্যাশায়ী। তাঁর প্রশ্ন, এক জন শয্যাশায়ী ব্যক্তি কী ভাবে ঠিকানা বদলে ফেললেন?
এর পরেই বিচারক জানান, আগামী ১১ জানুয়ারি পরবর্তী শুনানির দিন ওই তিন জনকে আদালতে হাজির করতে হবে। এ দিন গৌতমের অন্তর্বর্তিকালীন জামিনের জন্যও আবেদন করেন বিপ্লববাবু। তবে তা মঞ্জুর হয়নি।
এ দিন যখন শুনানি চলছিল তখন এজলাসের এক কোণে মেরুন রঙের সোয়েটার আর নীল ডেনিম পরে চুপচাপ বসেছিলেন গৌতমবাবু। এই মামলায় তাঁর সংস্থা থেকে কোটি কোটি টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রাজনৈতিক নেতা-সহ বহু নামী ব্যক্তির বিরুদ্ধে। তার ভিত্তিতে একের পর এক প্রভাবশালী ব্যক্তি গ্রেফতার হওয়ায় যথেষ্ট চাপে রয়েছেন তিনি। এ দিন খানিকটা ক্ষোভের সঙ্গে গৌতম ঘনিষ্ঠ মহলে জানান, তাঁর বয়ানের ভিত্তিতে প্রভাবশালীদের ধরপাকড় করা হচ্ছে বলে যা প্রচার হচ্ছে, তা ঠিক নয়। সিবিআই তদন্তকারীদের কাছে কোনও রাজনৈতিক নেতার নাম তিনি করেননি বলে দাবি করেছেন রোজ ভ্যালি কর্ণধার। তাঁর থেকে টাকা নিয়ে যে ব্যবসায়ীরা তা ফেরত না-দিয়ে প্রতারণা করেছেন, তিনি শুধু তাঁদের নামই সিবিআই অফিসারদের বলেছেন বলে জানিয়েছেন।