Advertisement
E-Paper

কুয়াশাকে বাজি ধরে ওরা

নোট বাতিলের পা পড়েছিল সীমান্তেও, কুয়াশার আড়ালে চুপি চুপি এসে সে বুঝি নিঃসারে নিয়ে গিয়েছিল পাচারের বোলবোলাও। পুরনো নোটে তাই কখনও গরু, কখনও বা সোনা কিনে গোলা ভরেছে সীমান্তের গ্রাম। আর, শীত পড়তেই পদ্মার জলে ফের বিলি কাটছে গরু-কুল। উঁকি মারল আনন্দবাজার।নোট বাতিলের পা পড়েছিল সীমান্তেও, কুয়াশার আড়ালে চুপি চুপি এসে সে বুঝি নিঃসারে নিয়ে গিয়েছিল পাচারের বোলবোলাও। পুরনো নোটে তাই কখনও গরু, কখনও বা সোনা কিনে গোলা ভরেছে সীমান্তের গ্রাম। আর, শীত পড়তেই পদ্মার জলে ফের বিলি কাটছে গরু-কুল। উঁকি মারল আনন্দবাজার।

সুজাউদ্দিন ও সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:৫৬
ছবি: সুমিত্র বসাক

ছবি: সুমিত্র বসাক

পৌষ কুয়াশায় ঢেকে আছে চরাচর। উত্তুরে হাওয়ায় কাঁপছে সীমান্তের জনপদ। অথচ এমন শীত-সকালেও রানিনগরের মোতালেব আলির (নাম পরিবর্তিত) কপালে বিনবিনে ঘাম। গায়ের চাদরটা বাড়ির দাওয়ায় ছুড়ে ফেলে বলছে, ‘‘বিশ্বাস করেন, ভরা পৌষে এমন সর্বনাশ হবে, টেরটিও পাইনি!’’

মোতালেব একা নয়, নোট বাতিলের জেরে তামাম নদিয়া-মুর্শিদাবাদের পাচারকারীদের একই হাল। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা— কোনও ঋতুকেই তারা পরোয়া করেনি। সীমান্তের রাঙা চোখ? সে-ও তারা আমল দেয়নি কোনও দিন। মোতালেব বলছে, ‘‘কুয়াশায় ভর করে ব্যবসায় বিস্তর টাকা ঢেলেছিলাম। কিন্তু এই প্রথম বড় দুশ্চিন্তায় আছি।’’

ওরা জানে পাচার নিষিদ্ধ এবং বেআইনি। তারপরেও ‘কী করেন’ জানতে চাইলে বুক ঠুকে ওরা জবাব দেয়, ‘‘কেন, বর্ডারে ব্যবসা করি!’’ সীমান্তের অনুশাসন ফুৎকারে উড়িয়ে দিব্যি পারাপার করে মানুষ, গরু, কাশির সিরাপ, গাঁজা এবং সোনা। বিএসএফ তক্কে তক্কে থাকে। সতর্ক থাকে ওরাও। বছরভর এই চোর-পুলিশ খেলা চলতে থাকে। তাই পাচারও বন্ধ হয় না।

বিএসএফের সব থেকে মাথাব্যথা গ্রীষ্মের কালবৈশাখী, বর্ষার পাট আর শীতের কুয়াশা। কালবৈশাখীর ধুলো ঝড় শুরু হতেই মুহূর্তে এ পার থেকে ও পারে মিলিয়ে যায় গরুর পাল। বর্ষায় বড় আড়াল পাট। আর শীতে কুয়াশা। পাচারকারীরা অপেক্ষায় থাকে এই আড়ালের।

এ বছর পাচারকারীরা হোঁচট খেল কুয়াশায়। নভেম্বরের ৮ তারিখে নোট বাতিলের ঘোষণা তো নয়, মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছিল পাচারকারীদের। কৃষ্ণগঞ্জের ভরত মণ্ডল (নাম পরিবর্তিত) বলছে, ‘‘পুরো শীতকালটা মাঠে মারা গেল মশাই। এই এত বছর ধরে সীমান্তে নানা ঝড়-ঝাপ্টা দেখেছি। কিন্তু এই প্রথম এমন বেকায়দায় পড়লাম। তবে এখনও হাল ছাড়ছি না।’’ বিএসএফও এই প্রথম কিছুটা স্বস্তিতে। পাচার বন্ধ হয়নি ঠিকই। কিন্তু আগের বছরগুলোর মতো সেই রমরমাতে যেন কিছুটা ভাটার টান। বিএসএফের এক কর্তাও কবুল করছেন, ‘‘ওদের ক্ষমতা তো ছিল পাঁচশো আর হাজার টাকার নোটে। আর সটান ধাক্কাটাটা লেগেছে সেই মেরুদণ্ডে।’’

কিন্তু দমে যাওয়ার পাত্র নয় ওরাও। নিকোনো উঠোনে পায়চারি করতে করতে মোতালেব বলছে, ‘‘হাল ছাড়লে চলবে কেন! ও পারের সঙ্গে কথা হয়ে গিয়েছে। পুরনো টাকা না হয় কাগজ হয়ে গেল। কিন্তু সোনা তো এখনও অচল হয়নি।’’ (চলবে)

Demonetisation Cow Trafficking Smuggling Business Border Area
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy