Advertisement
E-Paper

দলকে না মেনে মিছিলে, সিপিএমে ভর্ৎসিত তন্ময়

কলকাতায় রাহুল গাঁধীর সঙ্গে এক মঞ্চে এক মালা ভাগ করে নিয়েছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সেই কংগ্রেসেরই অধীর চৌধুরীদের সঙ্গে এক মিছিলে পা মিলিয়ে এবং এক ম্যাটাডোর-মঞ্চে উঠে দলে হলুদ কার্ড দেখলেন সিপিএমের বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৬ ০৮:৫৯

কলকাতায় রাহুল গাঁধীর সঙ্গে এক মঞ্চে এক মালা ভাগ করে নিয়েছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সেই কংগ্রেসেরই অধীর চৌধুরীদের সঙ্গে এক মিছিলে পা মিলিয়ে এবং এক ম্যাটাডোর-মঞ্চে উঠে দলে হলুদ কার্ড দেখলেন সিপিএমের বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য।

কংগ্রেসের সভায় বুদ্ধবাবু গিয়েছিলেন দলের সিদ্ধান্ত পালন করতে। আর দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে ‘ব্যক্তিগত উদ্যোগে’ কংগ্রেসের মিছিলে যাওয়ায় প্রকাশ্যে ভর্ৎসনা করা হল তন্ময়বাবুকে। সিপিএমের এক পলিটব্যুরো সদস্যের কথায়, ‘‘মিছিলে যাওয়া বা না যাওয়াটা শুধু বড় কথা নয়। কমিউনিস্ট পার্টিতে শৃঙ্খলার আলাদা গুরুত্ব। সেখানে শিথিলতা মেনে নেওয়া যায় না।’’

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং তা নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের উদাসীনতার প্রতিবাদে শনিবার রামলীলা ময়দান থেকে ময়দানের গাঁধী মূর্তি পর্যন্ত মিছিলে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র ও বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। সূর্যবাবু মিছিলের দিন কলকাতায় ছিলেন না। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী সুজনবাবুকেই দায়িত্ব দিয়েছিল পরিষদীয় দলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে। বাম শরিকদের আপত্তিতে ঠিক হয়েছিল, কংগ্রেসের মিছিলে বামেরা অংশ নেবে না। কিন্তু উত্তর দমদমের সিপিএম বিধায়ক তন্ময়বাবু একাই মিছিলে হাজির হয়েছিলেন শনিবার। তাতে বেজায় ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন শরিক নেতৃত্ব। দলের মধ্যেও শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। ওড়িশা থেকে ফিরে রবিবারই সূর্যবাবু রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করে তন্ময়বাবুকে প্রকাশ্যে নিন্দা ও সতর্ক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর ফলে জোটে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কাও সূর্যবাবুরা উড়িয়ে দিচ্ছেন।

রাজ্য সম্পাদকের নামে জারি করা সিপিএমের বিবৃতিতে এ দিন বলা হয়েছে, ‘বামফ্রন্টের পরিষদীয় দলে মিছিলে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পরিষদীয় দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে তন্ময় ভট্টাচার্য কংগ্রেস আহুত মিছিলে যোগ দেওয়ার কারণে তাঁকে প্রকাশ্যে নিন্দা করা হচ্ছে। পার্টি আশা করে, ভবিষ্যতে তিনি এ বিষয়ে সতর্ক থাকবেন’। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘সাসপেনশনের মতো আরও কড়া পদক্ষেপের দাবিও বামফ্রন্টের মধ্যে ছিল। কিন্তু প্রথম বারের বিধায়ক একটা ভুল করে ফেলেছেন। তাঁর শুধরে নেওয়ার আরও সুযোগ প্রাপ্য বলেই দল মনে করেছে।’’

তন্ময়বাবু আগের দিন বলেছিলেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি শুধু কংগ্রেসের বিষয় বলে তিনি মনে করেন না। তা ছাড়া, রাজ্যের দু’কোটি ১৫ লক্ষ মানুষ জোটের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। তাঁদের প্রতি অমর্যাদা তিনি করতে চাননি বলেই মিছিলে গিয়েছেন। দলের সিদ্ধান্তের পরে এ দিন অবশ্য আর তিনি মন্তব্য করতে চাননি। দলের একটি সূত্রের খবর, ভর্ৎসনা করার আগে তন্ময়বাবুর বক্তব্যও জেনে নিয়েছেন রাজ্য নেতৃত্ব। যদিও তন্ময়বাবুর বক্তব্য, তাঁকে কেউ কিছু বলেনি। আর তন্ময়বাবুর যুক্তি খণ্ডন করে দলেরই এক রাজ্য নেতার মন্তব্য, ‘‘জোটের প্রতি মর্যাদা বা মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ নিয়ে প্রশ্ন নয়। প্রশ্নটা এখানে দলের শৃঙ্খলা মেনে চলার।’’ কোনও কোনও মহল থেকে বলা হচ্ছিল, মিছিলে যাওয়া হবে না বলে আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করে দিয়েও সিপিএমই আসলে তন্ময়বাবুকে পাঠিয়েছিল কংগ্রেসকে হাতে রাখার জন্য! সেই প্রচারের মোকাবিলার জন্যও তন্ময়বাবুর রাশ টেনে ধরা দরকার ছিল বলে দলীয় সূত্রের ব্যাখ্যা।

উত্তর ২৪ পরগনার সিপিএম রাজনীতিতে তন্ময়বাবু জেলা সম্পাদক গৌতম দেবের ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। গৌতমবাবু নিজে প্রবল ভাবে জোটপন্থী। তন্ময়বাবুকে ভর্ৎসনা করার আগে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হিসাবে গৌতমবাবুর সঙ্গেও কথা বলেছে আলিমুদ্দিন। ঘটনাচক্রে, ভোটের পর্যালোচনা করতে আজ, সোমবার থেকেই সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটির দু’দিনের বৈঠক শুরু হচ্ছে। সেখানে তন্ময়-পর্ব কাটাঁছেড়ায় উঠে আসার সম্ভাবনা।

CPM rally
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy