Advertisement
E-Paper

ঘর ভাঙায় নিজের দোষও খুঁজছে সিপিএম

দলে লাগাতার ভাঙনের ধাক্কা আটকাতে তাঁদেরও যে ব্যর্থতা আছে, স্বীকার করে নিচ্ছেন সিপিএম নেতৃত্ব। মেনে নিচ্ছেন, শুকনো বিবৃতি দিয়ে বা পার্টি ক্লাস করেই এই প্রবণতা

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৬ ০৩:১৮

দলে লাগাতার ভাঙনের ধাক্কা আটকাতে তাঁদেরও যে ব্যর্থতা আছে, স্বীকার করে নিচ্ছেন সিপিএম নেতৃত্ব। মেনে নিচ্ছেন, শুকনো বিবৃতি দিয়ে বা পার্টি ক্লাস করেই এই প্রবণতা

রোখা যাবে না। দরকার গণ-প্রতিরোধ। আর মানুষকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ গড়তে গেলে সর্বাগ্রে চাই সংগঠন। যে জায়গায় সিপিএম এখন দুর্বল!

বিধানসভা ভোটে বিপর্যয় এবং তার পরে দল ভাঙার ধাক্কা সামলে সংগঠন গুছিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যেই আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে কলকাতায় হতে চলেছে সিপিএমের রাজ্য প্লেনাম। সেই বিশেষ সম্মেলনের খসড়া রিপোর্ট নিয়ে আলোচনার জন্য দলের দু’দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠকে অবধারিত ভাবেই উঠে এসেছিল ভাঙনের প্রসঙ্গ। সেই সূত্রেই প্রশ্নের জবাবে বৃহস্পতিবার দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এবং পলিটব্যুরোর সদস্য মহম্মদ সেলিম তাঁদের ত্রুটি-বিচ্যুতির কথা মেনে নিয়েছেন। তবে একই সঙ্গে তাঁদের বক্তব্য, রাজ্যে শাসক দল তৃণমূল যে ভাবে টাকার প্রলোভন বা মামলার ভয় দেখিয়ে বিরোধী দল ভাঙছে, এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি বাংলা তো বটেই, দেশের কোথাওই তাঁরা কখনও হননি।

রাজ্য কমিটির বৈঠকের শেষ দিনে প্রশ্নের জবাবে ইয়েচুরি বলেন, ‘‘দলের কর্মীদের উপরে এখন ভয়ঙ্কর চাপ। এমন সর্বাত্মক ভীতির পরিবেশে কেউ কেউ হয়তো তাঁদের মতো করে নিজেদের বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। মনে রাখতে হবে, এই অংশ সংখ্যায় অল্প। বাকিরা কঠিন অবস্থায়

লড়াই করছেন।’’ মতাদর্শই যে

তাঁদের সেরা হাতিয়ার, সিপিএম কর্মীদের গোড়া থেকেই সেই শিক্ষা দেওয়া হয়। তা হলে সিপিএমের প্রতীকে ভোটে জেতার পরে জনপ্রতিনিধিরা অন্য দলে নাম লেখাচ্ছেন কী করে? দলের বাঁধন কি একই শিথিল হয়ে গিয়েছে? পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি নিয়ে বিশদে রাজ্য নেতৃত্বই বিশদে বলতে পারবেন বলে জানিয়েও ইয়েচুরি বলেছেন, ‘‘এই প্রবণতা আটকানোর উপায় কী? রাস্তা তো একটাই— মানুষকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ। তার জন্য সংগঠন দরকার। সংগঠন যাতে শক্তিশালী হয়, মানুষের সঙ্গে সংযোগ ফিরে পায়, সেই চেষ্টাই চলছে।’’

ইয়েচুরির অভিযোগ, কয়েক মাস আগে বিধানসভা নির্বাচনে যে সব এলাকায় তৃণমূলের ফল তুলনামূলক ভাবে খারাপ হয়েছে, সেখানেই বিরোধী দলের লোকজনকে নিশানা করা হচ্ছে বেছে বেছে। সেলিমের সংযোজন, যখন সিপিএম বা বামফ্রন্ট ছেড়ে কোনও বিধায়ক, জেলা পরিষদ বা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন, সেই একই সময়ে দলের বহু সাধারণ কর্মী আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন বা মিথ্যা মামলায় জামিনের জন্য আদালতে লড়াই করছেন। তাঁদের ওই লড়াই আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। তবে সাংসদ সেলিমও কবুল করেছেন, ‘‘দলে কর্মী নেওয়া, তাঁদের দায়িত্ব দেওয়া বা ভোটে প্রার্থী করার ক্ষেত্রে আমাদেরও কোথায় কোথায় ভুল হয়েছিল, সে সবও আমরা আলোচনা করছি। আরও করব।’’

দলের মধ্যে থেকে যাঁরা শাসক শিবিরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বা নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে রয়েছেন, তাঁদের ঝেড়ে ফেলে এখন ঘর সাফ করতে চাইছে আলিমুদ্দিন। এ বারের রাজ্য কমিটির বৈঠকেই মুর্শিদাবাদ, মালদহ ও উত্তর দিনাজপুর জেলার এক ঝাঁক স্থানীয় নেতা-কর্মীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়েছে। তার মধ্যে অন্তত তিন জন জেলা কমিটি সদস্যও আছেন। বর্ধমানের অচিন্ত্য মল্লিক বৈঠকে বলেছেন, শুধু নিচু তলার কর্মীদের ধরলেই হবে না। একেবারে নেতৃত্বের উপরের স্তরে কে কতটা সক্রিয়, নিজেদের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করতে পারছেন কি না, সেটাও দেখতে হবে। রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র জবাবি ভাষণে বলেছেন, কাজের ধারাবাহিক মূল্যায়ন উপর থেকে নিচু পর্যন্ত সকলের জন্যই হবে।

ভাঙন ঠেকানো নিয়ে উদ্বেগের মাঝেই রাজ্য কমিটির শেষ দিনে এক প্রস্ত বিতর্ক বেধেছিল দলের চরিত্র নিয়ে! জলপাইগুড়ির সলিল আচার্য বৈঠকে বলেন, দলের কাজকর্ম দেখে তাঁর মনে হচ্ছে তাঁরা আর কমিউনিস্ট নেই! সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট হয়ে যাচ্ছেন! এই ভাবে চললে ঘুরে দাঁড়ানো আর সম্ভব নয়। পরে সূর্যবাবুর কড়া জবাব, সিপিএমকে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট বলে কেউ কেউ মজা পান! নিজেদের হীনমন্যতা কাটাতে না পারলে ঘুরে দাঁড়ানোর কথা আলোচনা না করাই ভাল। নিজেদের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করলে বরং দলের উপকার হবে।

CPM
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy