E-Paper

গণনা কেন্দ্রেই ‘বেধড়ক মারধর’, আহত বাম প্রার্থী ও তাঁর এজেন্ট

বারাসত-১ ব্লকে জেলা পরিষদের ২৭ নম্বর আসনে বাম-আইএসএফ জোট প্রার্থী এই হাবিব আলি। অভিযোগ, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ গণনা চলাকালীন কেন্দ্রের ভিতরেই তৃণমূল কর্মীরা তাঁকে মারধর করেন।

চন্দন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৩ ০৭:০৫
An image of the person

প্রহৃত: হাসপাতালের শয্যায় মারধরে জখম হাবিব আলি। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র।

সামনের দুটো দাঁত গোড়া থেকে উপড়ে নেওয়া হয়েছে। চোখে এমন ভাবে খোঁচানো হয়েছে যে, আর খোলাই সম্ভব নয়। অবিরাম জল পড়ছে দু’চোখ থেকে। গোটা মুখে কালশিটে। মুখটা ফুলে রয়েছে এমন ভাবে যে, ঠিক মতো নাড়াতেও পারছেন না। শরীরে এমন আঘাতের চিহ্ন অজস্র। কথা বললে মুখের কাছে কান নিয়ে গিয়ে তা বোঝার চেষ্টা করতে হচ্ছে। বিছানায় উঠে বসার ক্ষমতাটুকুও অবশিষ্ট নেই। কেউ উঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেই যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন।

বারাসত-১ ব্লকে জেলা পরিষদের ২৭ নম্বর আসনে বাম-আইএসএফ জোট প্রার্থী এই হাবিব আলি। অভিযোগ, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ গণনা চলাকালীন কেন্দ্রের ভিতরেই তৃণমূল কর্মীরা তাঁকে মারধর করায় এই অবস্থা হয় হাবিবের। বাধা দিতে গেলে মারধর করা হয় হাবিবের কাউন্টিং এজেন্ট হিসাবে গণনা কেন্দ্রে থাকা তাঁর ভাই মহম্মদ জামির হোসেনকেও। দু’জনকে রাতে বারাসত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। যদিও স্থানীয় তৃণমূলের তরফে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।

বুধবার হাসপাতালে পৌঁছে দেখা গেল, গোঙাচ্ছেন হাবিব। পাশের শয্যায় শুয়ে তাঁর ভাই জামির। তবে হাবিবের তুলনায় তাঁর আঘাত কম। ভাই-ই দাদাকে ওষুধ থেকে শুরু করে অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এগিয়ে দিচ্ছেন। কেন মারল? প্রশ্নটা শুনেই অস্ফুটে হাবিব বলে উঠলেন, ‘‘ভোটে এগিয়ে ছিলাম। হেরে যাওয়ার ভয়ে ওরা প্রিসাইডিং অফিসারের সই না থাকা ব্যালটগুলোও গোনার জন্য জোর করতে থাকে। আমি প্রতিবাদ করেছিলাম। এর পরেই সাত-আট জন ঘিরে ধরে মারতে শুরু করল।’’

এ দিকে, হাবিবের শারীরিক অবস্থা নিয়ে এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলতে চাইছেন না চিকিৎসকেরা। সিটি স্ক্যান হয়েছে। চোখ ও অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গও পরীক্ষা করা হয়েছে। সে সব রিপোর্ট দেখার পরেই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

জামির বলেন, ‘‘প্রথম থেকেই আমাদের উপরে চাপ দেওয়া হচ্ছিল। গণনা কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ বাড়ছিল ক্রমশ। কিন্তু, আমরা দাঁতে দাঁত চেপে পড়ে ছিলাম। কেন্দ্রের ভিতরেই গণনায় কারচুপির চেষ্টা করায় আমরা রুখে দাঁড়িয়েছিলাম। তখনই ঘিরে ধরে আমাদের মারতে শুরু করল।’’ জামির বলে চলেন, ‘‘জেলা পরিষদের গণনা দেরিতেই শুরু হয়। গণনার কয়েক রাউন্ড এগোতেই কদম্বগাছি, কাটরা, ছোট জাগুলিয়ার সব জায়গায় এগিয়ে যাচ্ছিলাম। শাসকদল হার নিশ্চিত বুঝতে পেরেই মারধর শুরু করে। লোহার চেয়ার দিয়ে দাদার মুখে একের পর এক আঘাত করতে থাকে। গণনা কেন্দ্রে থাকা আমাদের কয়েক জন এগিয়ে আসতেই সকলকে ধরে মারতে শুরু করে।’’

হাসপাতালে শুয়েও আতঙ্ক থেকে বেরিয়ে আসতে পারছেন না হাবিব। শুয়ে শুয়ে জড়ানো গলায় অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিও করছেন। হাবিব বলেন, ‘‘ভোটের দিনেও ওরা সাধারণ ভোটারদের আটকে ছাপ্পা দিয়েছিল। এত কিছুর পরেও গণনায় ফল নিজেদের পক্ষে না যাওয়ায় মারধর শুরু করে।’’

মারধরের অভিযোগ প্রসঙ্গে তৃণমূল নেতা তথা জেলা পরিষদের প্রার্থী মহম্মদ আরশাদুজ্জামানের দাবি, ‘‘আমাদের কর্মীদের অনুপস্থিতিতে ওখানে ব্যালট বাক্স খোলা হয়েছিল। এমনকি, গণনাও হচ্ছিল। আমরা প্রতিবাদ করে পুনর্গণনার দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু হাবিব সেটার বিরোধিতা করে। এই নিয়েই বচসা। তবে মারধরের ঘটনা ঘটেনি।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

West Bengal Panchayat Election 2023 CPM Polling Booth TMC-CPM Clash

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy