Advertisement
E-Paper

লাইন ভাঙছে কি বাংলা, তর্ক তুঙ্গে কেন্দ্রীয় কমিটিতে

যুক্তি উঠছে, পশ্চিমবঙ্গে এক রাজনৈতিক লাইন, গোটা দেশে আর এক রাজনৈতিক লাইন চলতে পারে না।পাল্টা প্রশ্ন, দলই না থাকলে রাজনৈতিক লাইন কোথায় থাকবে!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৬ ০৯:২৪

যুক্তি উঠছে, পশ্চিমবঙ্গে এক রাজনৈতিক লাইন, গোটা দেশে আর এক রাজনৈতিক লাইন চলতে পারে না।

পাল্টা প্রশ্ন, দলই না থাকলে রাজনৈতিক লাইন কোথায় থাকবে!

প্রশ্ন উঠছে, পশ্চিমবঙ্গে বামেরা যে ভোট পেয়েছে, তা অন্য কোন রাজ্যে বামেরা পেয়েছে? জবাব আসছে, কমিউনিস্ট পার্টিতে কি ভোটটাই সব? মতাদর্শের কোনও জায়গা নেই!

পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে ভোটে যাওয়াটা সঠিক পন্থা ছিল কি না এবং তা আগামী দিনেও চলবে কি না, তা নিয়ে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটিতে বিবাদ চরমে উঠল। আলিমুদ্দিনের নেতারা একজোট হয়ে দাবি তুললেন, আগামী দিনেও কংগ্রেসের সঙ্গে একজোট হয়ে লড়াইয়ে তাঁদের ছাড়পত্র দেওয়া হোক। সেখানে যেন কোনও বাধা-নিষেধ তৈরি না করা হয়।

শনিবার সকাল থেকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে আলোচনা রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চলেছে। এই পর্যন্ত মোট ৭৩ জন বক্তার মধ্যে সিংহভাগই বাংলার পথের বিরুদ্ধে। তবে দলীয় সূত্রের ইঙ্গিত, বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের প্রশ্নে বিতর্ক শেষ পর্যন্ত ভোটাভুটির দিকে গড়াবে না। লাইন ভাঙার দায়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য কমিটির বিরুদ্ধে তিরস্কার বা অন্য শাস্তির সিদ্ধান্তও সম্ভবত হচ্ছে না। দু’ধরনের মতের মধ্যে ভারসাম্য রেখে কেন্দ্রীয় কমিটি কী অবস্থান নেবে, সোমবার বৈঠকের শেষ অর্ধ শুরুর আগে পলিটব্যুরোকে সেই সিদ্ধান্তই নিতে হবে। পলিটব্যুরোর এক সদস্যের কথায়, ‘‘বাংলায় যা হয়েছে, সেটা কেন্দ্রীয় কমিটির লাইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না। কিন্তু বাংলায় পরিস্থিতি মোকাবিলায় গণতান্ত্রিক শক্তিকে সঙ্গে নিয়ে লড়তে হবে। দু’টো দিকই আগে পলিটব্যুরো স্পষ্ট করে দিয়েছে। এখন আবার পুরো অবস্থান উল্টে দেওয়া কঠিন!’’

সূর্যবাবুর পরে আজ কেন্দ্রীয় কমিটিতে গৌতম দেব, মৃদুল দে, মিনতি ঘোষ, শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, শ্যামল চক্রবর্তী, রামচন্দ্র ডোম, রেখা গোস্বামী, অঞ্জু করেরা জোটের প্রয়োজনীয়তার পক্ষে সওয়াল করেছেন। আগামী দিনেও কংগ্রেসকে পাশে নিয়েই চলার কথা বলেছেন তাঁরা। যদিও রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর দুই সদস্য দীপক দাশগুপ্ত ও নৃপেন চৌধুরী এর মধ্যেও একটু ভিন্ন সুর গেয়ে রেখেছেন! নিজেদের ঘরে ঈষৎ বেসুর বাজলেও বিহারের এক নেতা আবার বলেছেন, লাইন নিয়ে এমন চুলচেরা তর্ক না করে ঘরছাড়াদের জন্য কী করা যায়, ভাবলেই ভাল হতো!

দীপক-নৃপেনেরা যা-ই বলুন, বাংলার নেতাদের মনোভাব থেকে স্পষ্ট, তাঁরা আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচন তো বটেই, প্রয়োজনে লোকসভা ভোট পর্যন্ত এই জোট ধরে রাখার পক্ষে। সেখানেই কেরল ও অন্য রাজ্যের নেতাদের আপত্তি। তাঁদের যুক্তি, পশ্চিমবঙ্গের জন্য অন্য রাজ্যে কংগ্রেস-বিরোধিতা লঘু হয়ে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের মাঝেই দিল্লিতে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন জানিয়ে দিয়েছেন, কংগ্রেস ও বিজেপি, দু’দলের সঙ্গেই সিপিএমকে সমান দূরত্ব রেখে চলতে হবে। জাতীয় স্তরে এবং সব রাজ্যেও। কট্টরপন্থী নেতাদের প্রশ্ন, বিশাখাপত্তনম পার্টি কংগ্রেসে এমনটাই সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তার সঙ্গে বাংলার রণকৌশল যে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না, তা আগে পলিটব্যুরোই বলে দিয়েছে। তা হলে আগামী দিনে কী ভাবে আবার বাংলার কৌশলের পুনরাবৃত্তি হতে দেওয়া যায়? কমিউনিস্ট পার্টি কি ভোটের দিকে তাকিয়ে পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক লাইন, মতাদর্শ জলাঞ্জলি দেবে?

সীতারাম ইয়েচুরির অনুগামীরা আবার মনে করছেন, বিশাখাপত্তনমে প্রকাশ কারাটের জমানায় যে রাজনৈতিক লাইনই ঠিক হয়ে থাক, ২০১৮-র পার্টি কংগ্রেসে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে। লোকসভা ভোটের এক বছর আগে বিজেপি-কে ঠেকাতে তখন ফের কংগ্রেসকে নিয়ে চলার প্রয়োজনীয়তা মনে হতে পারে। তাই আগে ভাগে আলিমুদ্দিনের নেতাদের কংগ্রেস-সঙ্গ ত্যাগ করতে নিদান দেওয়ার কোনও অর্থ হয় না। শেষ দিনে এই ভারসাম্যের কৌশলেই যুদ্ধে ইতি টানতে হবে ইয়েচুরিকে!

cpm Congress
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy