চোখে-আঙুল: মোদী সরকার বিরোধী বার্তা নিজের মোবাইল কভারেও। আলিপুরে উত্তীর্ণ মুক্তমঞ্চে রুশ বিপ্লবের শতবর্ষ স্মরণের অনুষ্ঠানে সীতারাম ইয়েচুরি। শুক্রবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
রাশিয়ায় বিপ্লবের শতবর্ষ ঘটা করে পালিত হতেই পারে। কিন্তু পা়ড়ায় পাড়ায় মানুষের দাবি নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য সংগঠন রাখতে না পারলে সবই বৃথা! রুশ বিপ্লবের শতবর্ষ উদযাপনের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে দলের কর্মীদের এই বার্তাই দিলেন সিপিএম নেতৃত্ব।
বছরভর নানা অনুষ্ঠানের শেষে শুক্রবার আলিপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের তৈরি ‘উত্তীর্ণ’ মুক্তমঞ্চে সমাপ্তি সমাবেশ করে দাঁড়ি টানা হল নভেম্বর বিপ্লবের শতবর্ষ পালনে। বিপ্লবের প্রাসঙ্গিকতা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি থেকে রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, সকলেই নজর দিলেন সংগঠনে। ইয়েচুরির কথায়, ‘‘বিপ্লবের গান, কবিতা মঞ্চে শুনতে ভাল লাগে। কিন্তু স্থানীয় স্তরে সংগঠন নিজেদের কাজ করতে না পারলে সে সবের কোনও অর্থ থাকে না।’’
পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা হারানোর পর থেকে রাজ্যে বামেদের সংগঠন ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণু। ভোটব্যাঙ্কে বামেদের রক্তক্ষরণ যত বেড়েছে, পাল্লা দিয়ে ততই দুর্বল হয়েছে সংগঠন। এ রাজ্য থেকে সাংসদ-সংখ্যা কমে গিয়ে জাতীয় স্তরেও কোণঠাসা হয়েছে সিপিএম। এই বাস্তব জেনেই সিপিএম নেতৃত্ব এখন কর্মীদের চাঙ্গা করার চেষ্টা করছেন যাতে, পঞ্চায়েত ভোটে বেশির ভাগ বুথে কমিটি তৈরি করা যায়। শাসক দলের বাহিনীর বিরুদ্ধে যত বেশি জায়গায় সম্ভব, যাতে প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায়। সেই সাংগঠনিক লক্ষ্যেই নভেম্বর বিপ্লব স্মরণের মঞ্চকে ব্যবহার করেছেন ইয়েচুরি, সূর্যবাবুরা।
দলের সাধারণ সম্পাদক এ দিন বোঝাতে চেয়েছেন, নরেন্দ্র মোদী সরকারের আর্থিক নীতি ও সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতির জন্য বিজেপি-র বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে অসন্তোষ বাড়ছে। বাংলায় মুখে বিজেপি-র বিরোধিতা করলেও মুসলিম মৌলবাদকে মদত দিয়ে তৃণমূল আসলে গেরুয়া শিবিরেরই সুবিধা করে দিচ্ছে। তৃণমূল সরকার সম্পর্কেও মানুষের মোহভঙ্গ ঘটছে। কিন্তু মানুষের সেই অসন্তোষকে সংগঠিত করতে না পারলে বাংলায় তার সুযোগ নেবে দক্ষিণপন্থী (অর্থাৎ বিজেপি) শক্তি। জাতীয় স্তরেও অন্যান্য শক্তি বিজেপি-বিরোধিতার ফায়দা তুলবে। ইয়েচুরির বক্তব্য, ‘‘হঠাৎ লাফিয়ে পড়ে বিপ্লব করব ভাবলে তো হয় না! নির্দিষ্ট পরিস্থিতির বিশ্লেষণ করে নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত, এটাই লেনিনের শিক্ষা। সেই শিক্ষা তখনই কাজে লাগাতে পারব, যখন সংগঠন তৈরি থাকবে।’’
একই সুরে সূর্যবাবু বলেছেন, একশো বছর আগের রাশিয়ার সঙ্গে এখন এখানকার পরিস্থিতি কোনও ভাবেই এক নয়। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকের বক্তব্য, ‘‘বর্তমান পরিস্থিতিতে দু’টাকা কিলো চাল, ডিজিটাল রেশন কার্ড, সামাজিক সুরক্ষার আদায়যোগ্য দাবি নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তার জন্য দরকার সংগঠন।’’
আর প্রবীণ নেতা বিমান বসুর মন্তব্য, ‘‘অনেকে আছেন, যাঁরা সব সভা-সমাবেশে আসেন কিন্তু নিজের এলাকায় কাজের বেলায় লবডঙ্কা! সংগঠনের কাজ করতে না পারলে শুধু সভায় হাজির হয়ে কাজ কী!’’
তবে সংগঠন নিয়ে চিন্তায় থাকলেও সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে সাধারণ কর্মী, প্রায় সকলেই মুগ্ধ ‘উত্তীর্ণ’ মুক্তমঞ্চে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy