লোকসভা ভোটে তৃণমূল ধাক্কা খাওয়ার পরে শাসক দলের ঘরছাড়া কর্মী-সমর্থকদের ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। নৈহাটি পুরসভার সামনে ধর্না-অবস্থানে গিয়ে দলের নেতাদের কাছ থেকে প্রায় ৪০০ ঘরছাড়া সমর্থকদের তালিকা নিয়ে ডিজি বীরেন্দ্রের হাতে দিয়ে বৃহস্পতিবারই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছেন, তাঁদের ঘরে ফেরাতে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে পুলিশ-প্রশাসনকে। বিরোধী সিপিএম ও কংগ্রেস এ বার প্রশ্ন তুলল, এক যাত্রায় পৃথক ফল কেন হবে? লোকসভা ভোটের আগে থেকেই নানা জায়গায় ঘরছাড়া বাম বা কংগ্রেস সমর্থকদের ফেরাতে কেন উদ্যোগী হবে না প্রশাসন?
তাদের কর্মী-সমর্থকদের উপরে হামলা এবং ঘরছাড়া করার জন্য তৃণমূলের অভিযোগ বিজেপির দিকে। বাম ও কংগ্রেসের কাঠগড়ায় আবার তৃণমূলই। দুই বিরোধী দলের নেতাদের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী-সহ শাসক শিবিরের নেতৃত্ব দোষারোপ করছেন সঙ্ঘ-বিজেপিকে। অথচ তৃণমূলের অন্যায় এবং প্রশাসনের ‘পক্ষপাতমূলক’ আচরণের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা হচ্ছে না। এর ফলে বর্তমান পরিস্থিতিতে সুবিধা পেয়ে যাচ্ছে বিজেপিই।
বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী শুক্রবার বলেছেন, ‘‘নৈহাটিতে দলের মঞ্চ থেকেই তৃণমূল নেত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রী ডিজি-কে নির্দেশ দিয়েছেন ঘরছাড়াদের ফেরাতে। ওই জেলাতেই (উত্তর ২৪ পরগনা) আমডাঙায় গত বছরের পঞ্চায়েত ভোটের সময় থেকে বহু বাম সমর্থক পরিবার ঘরছাড়া হয়ে আছেন। তাঁদের ফেরানোর জন্য মুখ্যমন্ত্রী কেন প্রশাসন এবং তাঁর দলকে নির্দেশ দেবেন না?’’ নৈহাটির মঞ্চ থেকে রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক দাবি করেছিলেন, ‘‘ক্ষমতায় আসার পরে আমরা কিন্তু সন্ত্রাস করিনি, পার্টি অফিস দখল করিনি, কাউকে ঘরছাড়া হতে হয়নি।’’ সিপিএম নেতাদের অভিযোগ, শাসন হোক বা আমডাঙা— বামেদের উপরে হামলা, ঘরছাড়া করার ঘটনা ঘটেছে জ্যোতিপ্রিয়বাবুদের বাহিনীর হাতেই। তাঁদের আরও অভিযোগ, পশ্চিম মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনা, হুগলির মতো জেলায় বহু বাম সমর্থক ও তাঁদের পরিবার এখনও ঘরে ফিরতে পারেননি। অনেক ক্ষেত্রেই তাঁদের আশ্রয় দলের কার্যালয়।
একই সুর কংগ্রেস নেতৃত্বেরও। মুর্শিদাবাদের সালারে কংগ্রেস প্রার্থীর জয়ের জন্য মিছিল করার পরে ৬ জন দলীয় কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে তাঁদের অভিযোগ। বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর দ্বিচারিতার এ-ও এক নমুনা। সামান্য বিজয় মিছিল করার দায়ে জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেফতার করা হয়েছে! এক দিকে বিজেপি-আরএসএসকে দোষ দেব, অন্য দিকে কংগ্রেস-সহ অন্য বিরোধীদের উপরে আক্রমণ চালাব— এই তাঁর কৌশল!’’ বহরমপুর কেন্দ্রে কংগ্রেস জেতার পরে যে সব এলাকায় তৃণমূলের হামলা বা ভয় দেখানো চলছে, সেখানে গিয়ে স্থানীয় মানুষকেই সাহস করে রুখে দাঁড়ানোর আর্জি জানাচ্ছেন অধীরবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy