Advertisement
E-Paper

দলের ভরসা চাঁদাই, টান বিধায়কের ঘরে

দীর্ঘ দিন পরে এ বার দলের রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে মুখোমুখি বসেছিলেন সিপিএমের বিধায়কেরা। সেখানে নিজেদের অভিজ্ঞতায় তাঁরা জানিয়েছেন, দলকে ‘লেভি’ দিয়ে যে টাকা তাঁরা হাতে পান, তাতে আজকের দিনে কিছুই হয় না। 

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৯ ০৬:৫৩
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

বিধানসভায় প্রশ্নটা তুলেছিলেন পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বিধায়কদের ভাতা বাড়ানোর বিলে বাম বিধায়কেরা সমর্থন করছেন না দেখে তাঁদের উদ্দেশে পার্থবাবুর মন্তব্য ছিল, ‘‘আপনাদের বেদনা বুঝি। ভাতার টাকা নিজেরা পান না। দলকে দিয়ে দিতে হয়।’’ সেই সঙ্গেই প্রশ্ন— ‘‘আপনারাও বাজারে যান, আমরাও যাই। একই বাজার থেকে আপনাদের, আমাদের সবাইকে কিনতে হয়। দলকে টাকা দিয়ে কী ভাবে চালান?’’

এই প্রশ্নই এখন ভাবাচ্ছে সিপিএমকে। নীতিগত প্রশ্নে বিধায়কদের ভাতা বাড়ানোর বিরোধিতা করেছে তারা। প্রাক্তন বিধায়কদের পেনশনের আগে বর্তমানদের ভাতা বাড়ানো কেন এবং বিধায়কদের বেতন বা ভাতা কোনও বিশেষজ্ঞ কমিটির বদলে তাঁরা নিজেরাই ঠিক করবেন কেন— আপত্তি এই প্রশ্নে। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতির বিচারে জনপ্রতিনিধিদের খরচ চালানো নিয়ে ভাবতেই হচ্ছে সিপিএম নেতৃত্বকে।

দীর্ঘ দিন পরে এ বার দলের রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে মুখোমুখি বসেছিলেন সিপিএমের বিধায়কেরা। সেখানে নিজেদের অভিজ্ঞতায় তাঁরা জানিয়েছেন, দলকে ‘লেভি’ দিয়ে যে টাকা তাঁরা হাতে পান, তাতে আজকের দিনে কিছুই হয় না।

তাই বিধায়কেরা কত টাকা দলকে দেবেন এবং দল কত টাকা বিধায়ককে মাসোহারা দেবে, এই হিসেব নতুন করে কষা হোক। এরই মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের বিধায়কদের দৈনিক ভাতা এক হাজার টাকা করে বাড়ানোর (মাসের দুই পক্ষ কালের মধ্যে দু’টি করে মোট চারটি বিধানসভার বৈঠকে হাজির থাকার সাপেক্ষে) সিদ্ধান্ত নিয়ে আরও ভাবনায় ফেলে দিয়েছেন সিপিএম নেতৃত্বকে!

এখন সিপিএম বিধায়কদের মাসে ২০ হাজার টাকা করে দিতে হয় দলকে। ভাতাবৃদ্ধির পরে বিধায়কদের মাসিক আয় যখন ৮১ হাজার ৮৭০ টাকায় দাঁড়াবে, তখন ওই মাসিক দলীয় চাঁদার পরিমাণ আরও একটু বাড়ানোর পক্ষপাতী সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘আমাদের বিধায়কদের কষ্ট করে খরচ টানতে হয়, আমরা জানি। কিন্তু এখন দলের তহবিলের দিকটাওে দেখতে হচ্ছে। তাই অল্প হলেও বিধায়কদের কাছ থেকে নেওয়া টাকার অঙ্কটা বাড়াতে পারলে ভাল হয়।’’ দলেরই এক বিধায়ক অবশ্য বলছেন, ‘‘রাজ্যের সংস্কৃতিটাই সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে। তৃণমূল বা বিজেপির কাছে গেলে মানুষ দেখছেন, জরুরি চিকিৎসা হোক বা অন্য কাজে আর্থিক সাহায্য পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের কাছেও তাঁরা একই রকম প্রত্যাশা নিয়ে আসছেন। লোকে যখন দেখেন সিপিএম বিধায়কের কাছে গেলে কিছু পাওয়া যায় না, তাতে উল্টে হতাশা তৈরি হয়।’’

রাজ্যের মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি, দফতর, নিখরচায় রান্নার গ্যাসের ব্যবস্থা আছে। বিধায়কদের সে সব কিছু নেই। সিপিএমের হাতে গোনা কয়েক জন ছাড়া বাকি বিধায়কদের ব্যক্তিগত গাড়িও নেই। দলকে টাকা দিয়ে তার পরে এলাকায় যথাযথ ভাবে জনসংযোগ রক্ষা করতে হিমশিম তাঁরা। আবার দলের চাহিদাও তাঁদের অস্বীকার করার উপায় নেই।

এই টানাটানির মধ্যেও সিপিএম বিধায়ক আমজাদ হোসেন অবশ্য পার্থবাবুকে বলতে ছাড়েননি যে, ‘‘এত কিছু সত্ত্বেও আমাদের বিরুদ্ধে কাটমানির অভিযোগ নেই!’’

CPM MLA Donation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy