Advertisement
E-Paper

সিপিএমের নেতা, তাই চাষ বন্ধ দেবের জ্যাঠার

তাঁর পা ছুঁয়ে ভোট প্রচার শুরু করেছিলেন তৃণমূলের তারকা-সাংসদ। তাই বলে তাঁকে রেয়াত করতে নারাজ এলাকার তৃণমূলী দাদারা। তিনি সিপিএম করেন যে! দেবের জ্যাঠা, কেশপুরের মহিষদার বাসিন্দা শক্তিপদ অধিকারীর অভিযোগ, শাসক দলের ফতোয়ায় এ মরসুমে তাঁর চাষ বন্ধ।

বরুণ দে

শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৬ ০৪:৫৫
এই মরসুমে জমিতে চাষ বন্ধ। (ইনসেটে) চিন্তায় দেবের জ্যাঠা শক্তিপদ অধিকারী। কেশপুরের মহিষদায়। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

এই মরসুমে জমিতে চাষ বন্ধ। (ইনসেটে) চিন্তায় দেবের জ্যাঠা শক্তিপদ অধিকারী। কেশপুরের মহিষদায়। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

তাঁর পা ছুঁয়ে ভোট প্রচার শুরু করেছিলেন তৃণমূলের তারকা-সাংসদ। তাই বলে তাঁকে রেয়াত করতে নারাজ এলাকার তৃণমূলী দাদারা। তিনি সিপিএম করেন যে! দেবের জ্যাঠা, কেশপুরের মহিষদার বাসিন্দা শক্তিপদ অধিকারীর অভিযোগ, শাসক দলের ফতোয়ায় এ মরসুমে তাঁর চাষ বন্ধ। তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা তাঁকে যে ছয় বিঘা জমিতে চাষ না-করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, তার মধ্যে তিন বিঘা আবার দেবের বাবা গুরুপদ অধিকারীর। সেই জমি অবশ্য চাষ করেন শক্তিপদবাবুই।

এ দিন মহিষদার বাড়ির দাওয়ায় বসে সিপিএমের কেশপুর জোনাল কমিটির সদস্য, জেলা পরিষদের প্রাক্তন সদস্য শক্তিপদবাবু বলেন, ‘‘আশপাশের প্রায় সব জমিতে বীজতলা ফেলা শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আমাদের জমি ফাঁকা পড়ে। ওদের (তৃণমূল) স্থানীয় নেতারা একটা তালিকা করেছে। সেখানে আমার নামও আছে। যারা মাঠে কাজ করে, তাদের বলা হয়েছে, তালিকায় নাম থাকা লোকজনের জমিতে চাষ করা যাবে না। তাই আর বীজতলা তৈরি করিনি।’’

শক্তিপদবাবুদের জমি তিন ফসলি। প্রতি মরসুমে ছ’বিঘায় প্রায় ৬০ কুইন্ট্যাল ধান হয়। ফলে, এক বার চাষ না হলে ক্ষতি অনেকটাই। শুধু শক্তিপদবাবু নন, মহিষদা গ্রামের প্রায় কুড়ি ঘর সিপিএম কর্মীকে তৃণমূলের তরফে চাষ বন্ধের ফতোয়া দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। দলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক তরুণ রায়ের কথায়, “সিপিএম করাটাই ওঁদের অপরাধ। বিধানসভা ভোটে মহিষদার তিনটি বুথেই তৃণমূল হেরেছে বলে ওঁদের উপর জোরজুলুম হচ্ছে।” তবে কেউই পুলিশ-প্রশাসনে অভিযোগ জানাননি। কেন? শক্তিপদবাবুর যুক্তি, ‘‘অভিযোগ করে কী লাভ! শেষমেশ ওরা ফসল নষ্ট করে দেবে।” আর বাকিরা নিজেদের নামটুকুও বলতে চাইলেন না। চাপা স্বরে শুধু বললেন, ‘‘গ্রামে থাকতে
তো হবে!’’

অথচ দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে বারবার জোরজুলুম, তোলাবাজি বন্ধ করার উপরে জোর দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ নিয়ে দলীয় কর্মীদের একাধিক বার সতর্ক করেছেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, তোলাবাজির অভিযোগে বিধাননগরের তৃণমূল কাউন্সিলর অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার পর্যন্ত করা হয়েছে। তার জেরে নেতাদের একটা বড় অংশ সতর্ক হলেও শাসক দলের নিচুতলার সর্বত্র যে সমান প্রভাব পড়েনি, দেবের জ্যাঠার চাষ বন্ধের ঘটনাই তার প্রমাণ।

কী বলছেন তৃণমূলের তারকা-সাংসদ? তিনি নিজে তো সাংসদ হওয়ার পরে যত বার জেলায় গিয়েছেন তত বারই বলেছেন, ‘‘আমি রাজনীতি করতে আসিনি। সবাই ভাল ভাবে থাকুক।’’ ছবির শ্যুটিংয়ের জন্য দীর্ঘদিন ব্রাজিলের মানাউস শহরে ছিলেন দেব। সোমবার কলকাতায় ফিরেছেন। এ দিন প্রশ্ন করা হলে দেব বলেন, ‘‘বিষয়টি আমার কিছুই জানা নেই। আমি খোঁজ নেব।’’

তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য অভিযোগ মানতে নারাজ। দলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি অজিত মাইতির দাবি, “আমাদের কেউ কাউকে চাষে বাধা দেয়নি। সিপিএম মিথ্যা বলছে।” তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সীও দিল্লি থেকে ফোনে বলেন, ‘‘আমার মনে হয় এর কোনও সত্যতা নেই।’’ আর কেশপুরের তৃণমূল বিধায়ক শিউলি সাহার বক্তব্য, “আমার কাছে এমন অভিযোগ কেউ করেনি। সত্যি এমন হলে দল নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেবে।’’

CPM deb leader farming
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy