Advertisement
E-Paper

ঘুসুড়ি-কাণ্ডে জেরা সিপিএম নেতাকে

বালি পুরসভার সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার প্রণব অধিকারী যে দীর্ঘ দিন ধরেই নির্মাণ সংক্রান্ত কাজে মোটা টাকা ঘুষ নিচ্ছিলেন এ সম্পর্কে কিছুই জানতেন না তিনি। শনিবার দুর্নীতি দমন শাখার অফিসারদের জেরার মুখে এমনই দাবি করলেন বালি পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান সিপিএম-এর অরুণাভ লাহিড়ী।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৫ ০১:০৭
ঘুসুড়ির বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে প্রণব অধিকারীকে। — নিজস্ব চিত্র।

ঘুসুড়ির বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে প্রণব অধিকারীকে। — নিজস্ব চিত্র।

বালি পুরসভার সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার প্রণব অধিকারী যে দীর্ঘ দিন ধরেই নির্মাণ সংক্রান্ত কাজে মোটা টাকা ঘুষ নিচ্ছিলেন এ সম্পর্কে কিছুই জানতেন না তিনি। শনিবার দুর্নীতি দমন শাখার অফিসারদের জেরার মুখে এমনই দাবি করলেন বালি পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান সিপিএম-এর অরুণাভ লাহিড়ী। বহু সময়ে সাধারণ মানুষ থেকে প্রোমোটারেরা প্রণবের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ তুললেও প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে তিনি কেন তদন্ত করাননি এবং জানতেন না বলে দায় এড়াতে পারেন কি না সে নিয়েও শনিবার অরুণাভবাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

২০০০ সালে প্রথম ভোটে জিতে বালি পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান হন অরুণাভবাবু। ২০০৫ সালেও তিনি একই পদে ছিলেন। ২০১০ সালে তিনি চেয়ারম্যান পদে বসেন। বালি পুরসভার নিয়মানুযায়ী ভাইস চেয়ারম্যানই নকশা অনুমোদন করতেন। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে টানা দশ বছর ওই পদে থাকা সত্ত্বেও অরুণাভবাবু কি প্রণবের এই দুর্নীতি সম্পর্কে কিছুই জানতেন না, এই বিষয়টাই এখন খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। যদিও অরুণাভবাবু স্পষ্ট বলেছেন, ‘‘কে কি জানতেন তা বলতে পারবো না। তবে আমি কখনও কিছু জানতে পারিনি। বেআইনি নির্মাণ সম্পর্কে অভিযোগ পেলেই কাজ বন্ধ করার নোটিস পাঠাতাম।’’

রাজ্য দুর্নীতি দমন শাখা সূত্রে খবর, জেরায় প্রণব অধিকারী, তাঁর ছেলে ও স্ত্রী কয়েক বার ওই প্রাক্তন চেয়ারম্যানের নাম বলেছিলেন। লিলুয়ার বাসিন্দা প্রোমোটার আত্মপ্রকাশ সিংহও পুলিশকে জানিয়েছিলেন, প্রণবের বিরুদ্ধে তিনি যখন অভিযোগ জানান, তখন অরুণাভবাবু তাঁর কথায় আমল না দিয়ে প্রণবের সঙ্গেই কথা বলে তার দাবি অনুযায়ী কাজ করতে বলেন। সেই প্রসঙ্গ তুলেও এ দিন অরুণাভবাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারীরা।

শনিবার সকাল সওয়া ১১টা নাগাদ নিজের আইনজীবীকে সঙ্গে নিয়ে নব মহাকরণে আসেন অরুণাভবাবু। শুধু তাঁকেই নব মহাকরণের সাত তলায় দুর্নীতি দমন শাখার অফিসে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। দুর্নীতি দমন শাখা সূত্রে খবর, বেলা সাড়ে ১২টা থেকে তাঁকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন পুলিশকর্তারা। মাঝে ছিল কিছুক্ষণের বিরতি, জিজ্ঞাসাবাদ চলে দুপুর আড়াইটে পর্যন্ত। এ দিন প্রাক্তন চেয়ারম্যানের ভোটার কার্ড ও প্যান কার্ডের জেরক্স জমা নেন তদন্তকারীরা। বেলা তিনটে নাগাদ ওই সিপিএম নেতা বাইরে এসে বলেন, ‘‘ওঁদের যা জানার ছিল জিজ্ঞাসা করেছেন। উত্তর দিয়েছি। প্রথম থেকেই বলেছি তদন্তে সব রকম সহযোগিতা করব।’’ তবে ওই প্রাক্তন চেয়ারম্যান ঠিক কি জানিয়েছেন, কারও নাম বলেছেন কি না তা এখনই স্পষ্ট করে বলতে নারাজ তদন্তকারীরা।

এ দিন অরুণাভবাবুকে তাঁর নিজের সম্পর্কেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এমনকী ওই সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারের বাড়ি থেকে বাজেয়াপ্ত করা ডায়েরিতে যে সমস্ত প্রোমোটারের নাম মিলেছে বা জেরায় তিনি যে সব নেতাদের নাম বলেছেন তাঁদের সম্পর্কেও অরুণাভবাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে জানান তদন্তকারীরা। দুর্নীতি দমন শাখা সূত্রে খবর, জেরার পরে অরুণাভবাবুকে ছেড়ে দেওয়া হলেও তাঁর সমস্ত সম্পত্তি ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য অবিলম্বে জমা দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি, তদন্তের স্বার্থে ফের তাঁকে দ্বিতীয় দফায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হবে বলেও জানানো হয়েছে।

এ দিন সকালেই ভবানী ভবন থেকে প্রণব অধিকারী ও তার ছেলে তন্ময়কেও দুর্নীতি দমন শাখায় নিয়ে আসা হয়। প্রণব-তন্ময়কেও তদন্তকারীরা দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জেরা ও জিজ্ঞাসাবাদ মিটতেই বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ নব মহাকরণ ভবন থেকে প্রণব অধিকারীকে কোমরে দড়ি বেঁধে ঘুসুড়ির নস্কর পাড়ায় তাঁর বাড়িতে নিয়ে যায় দুর্নীতি দমন শাখা। সেখানে প্রণব ও তাঁর স্ত্রী কৃষ্ণা অধিকারীকে মুখোমুখি বসিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ চলে।

দুর্নীতি দমন শাখা সূত্রে খবর, এ দিন প্রণব ও তন্ময়কে দফায় দফায় জেরা করে বেশ কিছু নতুন তথ্য পাওয়া যায়। তদন্তকারীরা জানতে পারেন, প্রণবের বাড়িতে আরও কিছু গোপন নথি রয়েছে, যাতে আরও প্রোমোটার ও নেতাদের নাম রয়েছে। সেগুলির খোঁজেই এ দিন বিকেলে ফের তল্লাশিতে যান তদন্তকারীরা। রাত পর্যন্ত চলে সেই তল্লাশি। তদন্তকারীরা জানান, কিছু নথি মিলেছে প্রণবের বাড়িতে।

CPM Ghusuri police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy