Advertisement
E-Paper

প্রয়াত নিরুপম, শোক মমতা থেকে টাটারও

বাম জমানায় রাজ্যে শিল্পায়নের প্রচেষ্টার সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য ভাবে জড়িত নিরুপমবাবুর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন রতন টাটা। শোক জানিয়েছেন বর্তমান ও প্রাক্তন দুই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:১৬
প্রয়াত নিরুপম সেন। —ফাইল চিত্র।

প্রয়াত নিরুপম সেন। —ফাইল চিত্র।

অসুস্থ ছিলেন পাঁচ বছর। সম্প্রতি শারীরিক সঙ্কট গুরুতর হয়েছিল। সল্টলেকের এক বেসরকারি হাসপাতালে সোমবার ভোরে প্রয়াত হলেন রাজ্যের প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী ও সিপিএম নেতা নিরুপম সেন (৭২)। বাম জমানায় রাজ্যে শিল্পায়নের প্রচেষ্টার সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য ভাবে জড়িত নিরুপমবাবুর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন রতন টাটা। শোক জানিয়েছেন বর্তমান ও প্রাক্তন দুই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও।

মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের জেরে পাঁচ বছর আগে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন নিরুপমবাবু। তবু হুইল চেয়ারে বসে দলের নানা সভায় দেখা যেত তাঁকে। সম্প্রতি বুকে সংক্রমণজনিত সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল। সল্টলেকের আবাসন ঘুরে এ দিন কলকাতার ‘পিস ওয়ার্ল্ডে’ রাখা হয়েছে তাঁর মরদেহ। সিটুর রাজ্য দফতর ও আলিমুদ্দিন স্ট্রিট ঘুরে কাল, বুধবার শেষ যাত্রা হবে বর্ধমানে।

বাম জমানার শেষ ১০ বছর রাজ্যের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলেন নিরুপমবাবু। শেষ দিকে দায়িত্ব ছিল বিদ্যুৎ দফতরেরও। সিঙ্গুরে টাটার মতো বড় বিনিয়োগ ছাড়াও বেশ কিছু লগ্নি নিয়ে আসা, রুগ্ণ সংস্থার পুনরুজ্জীবন এবং অলাভজনক কিছু সংস্থা গুটিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তে বড় ভূমিকা ছিল নিরুপমবাবুর। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তখন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। শিল্পায়নের সেই প্রয়াস অবশ্য শেষ পর্যন্ত রুদ্ধ হয়েছিল জমি অধিগ্রহণ বিতর্কে। সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামের ঘটনা যে বিতর্কের দুই ভরকেন্দ্র। বাম সরকারের পতনের পরে বিক্ষুব্ধ মন্ত্রী আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা যে কারণে নিরুপমবাবুকেই ‘নাটের গুরু’ বলে তীব্র কটাক্ষ করেছিলেন।

তবু নিরুপমবাবুর চেষ্টার কথা স্মরণ করেই টাটা ট্রাস্ট্‌সের চেয়ারম্যান রতন টাটা এ দিন বলেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের শিল্পোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তাঁর।’’ আর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধবাবুর কথায়, ‘‘দীর্ঘ দিন পার্টিতে এবং সরকারে একসঙ্গে কাজ করেছি। তাঁর দক্ষতা ও সততা চিরকাল আমার স্মরণে থাকবে।’’ রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা সরিয়ে তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা টুইট করেছেন, ‘‘প্রাক্তন মন্ত্রী নিরুপম সেনের মৃত্যুতে শোকাহত। তাঁর পরিবার ও শুভান্যুধায়ীদের সমবেদনা জানাচ্ছি।’’

আরও পড়ুন: কাটোয়ায় ছিলেন ‘হরিদাস’ নামে

সিপিএমের বর্ধমান জেলার প্রাক্তন সম্পাদক, পলিটব্যুরোর প্রাক্তন সদস্য নিরুপমবাবুর নাম জড়িয়েছিল সত্তরের দশকে সাঁইবাড়ির ঘটনাতেও। মামলায় অবশ্য বেকসুর খালায় পেয়েছিলেন তিনি। জীবদ্দশায় বলতেন, রাজ্যে দ্বিতীয় যুক্তফ্রন্ট সরকার ভেঙে দেওয়ার পর দিন বর্ধমানে যে মিছিলে বোমা পড়া এবং তার প্রত্যাঘাত হিসেবে সাঁইবাড়ির ঘটনা, সেই মিছিলে তিনি ছিলেনই না। তাঁর মৃত্যুতে শোক জানাতে গিয়ে সিপিএমের পলিটব্যুরোও নিরুপমবাবুকে ‘মিথ্যা মামলা’য় জড়ানোর অভিযোগ উল্লেখ করেছে।

শিল্প ও আমলা মহল অবশ্য মনে করিয়ে দিচ্ছে, সিঙ্গুর বিতর্কের মধ্যেও নিরুপমবাবুর দফতর আরও পাঁচ-ছয় হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করে খড়্গপুর, পানাগড়, অণ্ডাল-সহ একাধিক শিল্প পার্ক গড়েছিল। লগ্নি করেছিল টাটা হিতাচি, ম্যাটিক্স, ট্র্যাক্টর ইন্ডিয়ার মতো সংস্থা। টাটা গোষ্ঠীর দুই প্রাক্তন কর্তা রানা সোম ও সন্দীপন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘শিল্পায়নের জন্য ওঁর দূরদৃষ্টি ছিল।’’ আবার বিধানসভায় এক বার বিরোধীরা ছাঁটাই প্রস্তাব জমা না দেওয়ায় শিল্প বাজেট নিয়ে বিতর্ক হচ্ছিল না। মন্ত্রী নিরুপমবাবুই স্পিকার হাসিম আব্দুল হালিমকে বিশেষ অনুরোধ করে আলোচনার ব্যবস্থা করেছিলেন।

Death Nirupam Sen CPM Leader
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy