Advertisement
E-Paper

ভোটে রুদ্ধ না হয় আন্দোলন, মরিয়া সিপিএম

দিল্লিতে শনি ও রবিবার ছিল দলে পলিটব্যুরোর বৈঠক। পলিটব্যুরোয় বঙ্গ সিপিএমের দুই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধি রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র ও সাংসদ মহম্মদ সেলিম সেই বৈঠকে যাননি।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:২৮

দিল্লিতে শনি ও রবিবার ছিল দলে পলিটব্যুরোর বৈঠক। পলিটব্যুরোয় বঙ্গ সিপিএমের দুই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধি রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র ও সাংসদ মহম্মদ সেলিম সেই বৈঠকে যাননি। তাঁরা সময় দিচ্ছেন আসন্ন কয়েকটি পুরসভা ও মহকুমা পরিষদের ভোট এবং কিছু উপনির্বাচনের প্রচারে। যে নির্বাচনে বামেদের ফল শোচনীয় হবে বলে এখন থেকেই তীব্র জল্পনা, তার প্রস্তুতির জন্য এত গুরুত্ব দিচ্ছেন রাজ্য সিপিএমের শীর্ষ নেতারা?

তৃণমূল বলছে, বিধাননগরে ৪১-০ এবং বালিতে ১৬-০ হওয়া বাঁধা! আসানসোলের ১০৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে শ’খানেক আসনে ঘাসফুল ফোটা নিশ্চিত। প্রচারের জাঁকজমকেও বামেদের চেয়ে ঢের ঢের এগিয়ে শাসক শিবির। এমন একতরফা বাজারেও কেন প্লেনামের আগে পলিটব্যুরো বৈঠক ছেড়ে প্রচারে পরিশ্রম করছেন সূর্যবাবুরা?

বস্তুত, ফলাফল নয়। এ বারের অকাল ভোটকে আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে অন্য লড়াইয়ের প্রস্তুতি হিসাবেই দেখতে চাইছে আলিমুদ্দিন। রাস্তায় নেমে ধারাবাহিক আন্দোলনের তীব্রতা বাড়িয়ে হালফিল যে সাড়া পাওয়া যাচ্ছে, তার রেশ বজায় রেখে এ বার ভোটের দিন শাসক দলের বিরুদ্ধে কিছুটা হলেও বাস্তবিক প্রতিরোধ দেখতে চাইছেন সূর্যবাবুরা। কয়েক মাস আগে কলকাতা-সহ রাজ্যের ৮১টি পুরসভার ভোটের আগেও বামেদের তরফে প্রতিরোধের ডাক ছিল। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে শিলিগুড়ি ছাড়া কোথাওই শাসক দলের তাণ্ডব রুখতে বামেদের সে ভাবে পথে দেখা যায়নি। বিশেষত, উত্তর ২৪ পরগনার একের পর এক পুরসভায় প্রায় খালি ময়দানে দাপিয়ে বেড়িয়েছিল তৃণমূলের বাহিনী! এ বারও বিধাননগর-রাজারহাট পুর-নিগম নিয়ে চিন্তায় আছেন সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব। তবু নবান্ন অভিযান ও সাধারণ ধর্মঘটের পরে কর্মী-সমর্থকদের মনোবল আগের চেয়ে বেড়েছে বলেই এ বার প্রতিরোধের জন্য মরিয়া হচ্ছেন তাঁরা।

আসানসোলের জামুড়িয়া হোক বা শিলিগুড়ি, সর্বত্রই গিয়ে সূর্যবাবুরা বলছেন ভোটের দিন সকাল থেকে বাধা পেলে ব্যারিকে়ড গড়ে তুলুন। নির্বাচন ও উপনির্বাচন মিলে আগামী ৩ অক্টোবর ভোট হবে ৩ হাজার ২২১টি বুথে। প্রতি বুথে ১০ জন করে কর্মী নিয়ে রক্ষী বাহিনী গড়তে গেলেও ৩০ হাজার লোক লাগে! বামেদের একার পক্ষে এই প্রতিরোধ সম্ভব নয় বুঝেই কংগ্রেস এবং ক্ষেত্রবিশেষে বিজেপি-সহ সব বিরোধী দলের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে এককাট্টা হয়ে মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার লড়াই চাইছেন সিপিএম নেতৃত্ব। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘আমাদের জয়ী করুন, আমরা বলছি। কিন্তু তার চেয়েও বেশি করে মানুষকে এ বার বলছি, নিজের ভোট নিজে দিন। মানুষ নিজের ভোট দিতে উদ্যোগী হলে প্রতিরোধ সম্ভব।’’

কাজটা যে যথেষ্ট কঠিন, তা-ও অবশ্য জানে আলিমুদ্দিন। সাধারণ চোখেই ধরা পড়ছে সল্টলেকের কিছু অংশ বাদ দিলে রাজারহাট, গোটা বালি বা আসানসোলের বহু এলাকায় বামেদের প্রচারে কোনও দমই নেই! ইতিউতি অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, তা হলে কি মার খাওয়ার ভয়ে আগেই ঘরে ঢুকে পড়ার পুনরাবৃত্তি ফের হতে চলেছে? সিপিএমের এক পলিটব্যুরো সদস্যের বক্তব্য, ‘‘রাতারাতি কোনও কিছুই বদলে যায় না! কিন্তু নবান্ন অভিযান ও সাধারণ ধর্মঘটে সাফল্যের পরে দলের মনোভাবে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। আন্দোলন যে গতি এনে দিয়েছে, তার জেরেই এ বার কিছুটা হলেও প্রতিরোধ হবে বলে আশা করছি।’’ ভোটের ঠিক আগে ১ অক্টোবর ‘লালবাজার অভিযান’ করবে কলকাতা জেলা বামফ্রন্ট। পর দিন, ২ অক্টোবর মথুরাপুরে এসএফআই রাজ্য সম্মেলনে বক্তৃতা করবেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। এই সমস্ত কর্মসূচি থেকে ভোটের তিন শহরে কর্মীদের কাছে বার্তা পাঠাতে চান বাম নেতৃত্ব।

তবে তিন শহরের পুরভোটের ফল রাতারাতি তাঁদের পুরোপুরি পক্ষে আসবে, এমন আশা করছেন না আলিমুদ্দিনের নেতারা। তাঁরা জোর দিচ্ছেন প্রতিরোধের উপরেই। ব্যতিক্রম অবশ্য শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ। সেখানে অশোক ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে সেয়ানে সেয়ানে টক্কর হবে বলেই আলিমুদ্দিন মনে করছে। আর অশোকবাবুও বলছেন, ‘‘আসল কথা হল সাহস। শিলিগুড়ি পুরভোটের প্রচারে আমি সব সময় বলতাম, ওরে ভীরু, তোমার হাতে নাই ভুবনের ভার! ভয় পেয়ে গেলে আর লড়াই হয় না!’’

এরই মধ্যে রাজারহাটে আবার অন্য এক বিতর্ক বেধেছে! রাজারহাট-গোপালপুরে সিপিএমের ২, ৩, ৪ ও ৮ নম্বর লোকাল কমিটির সম্পাদকেরা চারটি ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েছেন! যাঁরা সচরাচর ভোটে লড়েন না। জেলা সিপিএম সূত্রের বক্তব্য, শাসক দলের মোকাবিলায় কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করতেই লোকাল সম্পাদকদেরও সরাসরি ময়দানে নামানো হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় সূত্রের খবর, এঁদের মধ্যে এক জনের ভাই তৃণমূলের মা-মাটি-মানুষ স্লোগানের নামাঙ্কিত একটি টিভি চ্যানেলের সঙ্গে যুক্ত। এই ধরনের সৈনিকদের রেখে কত দূর লড়াই সম্ভব, প্রশ্ন আছে দলের অন্দরেই!

CPM Delhi Left front
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy