E-Paper

সমাজমাধ্যমে বেহিসেবি হলে পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি সিপিএমে

দলের সদস্যদের জন্য দেওয়া সাম্প্রতিক ওই চিঠিতে সিপিএম রাজ্য কমিটির নির্দেশ, সমাজমাধ্যমে দলের সদস্যদের ব্যক্তিগত মতামত দেওয়া বন্ধ করতে হবে। দলের পর্যবেক্ষণ— ‘অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, ব্যক্তিগত মতামত দলের সিদ্ধান্তের পরিপন্থী হয়ে যায়।’

রাজীব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ মে ২০২৫ ০৯:১০

— প্রতীকী চিত্র।

‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পে দেওয়া রাজ্য সরকারের অনুদানকে বাম কর্মী-সমর্থকদের একাংশ সমাজমাধ্যমে ‘ভিক্ষাভাতা’ বলায় অসন্তোষ গোপন করেননি সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমও। লোকসভা ভোটের পরে তাঁর স্পষ্ট বার্তা ছিল, এই ধরনের মন্তব্য থেকে বিরত থাকতে হবে দলের নেতা-কর্মীদের। আগেও সমাজমাধ্যমের ব্যবহার নিয়ে দলের অন্দরে বারবার সতর্কবার্তা দিয়েছেন সিপিএম নেতৃত্ব। কিন্তু সেই বার্তা সর্বস্তরে পৌঁছয়নি বলেই মনে করছেন তাঁরা। এই প্রেক্ষিতে ফের এক বার দলের সর্বস্তরে সমাজমাধ্যমের ব্যবহার সম্পর্কিত লিখিত বার্তা পাঠিয়েছে সিপিএম। তাতে সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়েছে যে, এই বার্তা লঙ্ঘন করলে ‘কঠোর পদক্ষেপ’ গ্রহণ করা হবে। সিপিএমের উপলব্ধি, সমাজমাধ্যমে ব্যক্তিপ্রচারের প্রবণতা থেকে দলকে সম্পূর্ণ মুক্ত করা যায়নি।

দলের সদস্যদের জন্য দেওয়া সাম্প্রতিক ওই চিঠিতে সিপিএম রাজ্য কমিটির নির্দেশ, সমাজমাধ্যমে দলের সদস্যদের ব্যক্তিগত মতামত দেওয়া বন্ধ করতে হবে। দলের পর্যবেক্ষণ— ‘অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, ব্যক্তিগত মতামত দলের সিদ্ধান্তের পরিপন্থী হয়ে যায়।’ নেতা-কর্মীদের প্রতি দলের পরামর্শ, ‘সমাজমাধ্যমে কার্যধারা আরও সুসংহত করতে হবে। রাজ্য কমিটি ও জেলা কমিটির সমাজমাধ্যমের কার্যধারার মধ্যে যথাযথ সমন্বয় প্রয়োজন’।

এই বার্তা আদৌ নিচু তলার নেতৃত্বের কানে পৌঁছচ্ছে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে দলের অন্দরে। সাম্প্রতিক একটি ঘটনাকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে এক সিপিএম নেতা জানাচ্ছেন, মুর্শিদাবাদের এক দলীয় সদস্যা দলেরই এক নেতার বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুলেছিলেন। অভিযোগ পেয়েই তা দলের অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটির (আইসিসি) কাছে পাঠানো হয়। তদন্তও চলছিল স্বাভাবিক গতিতে। তা জেনেও আচমকা অভিযোগকারিণী সমাজমাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশ্যে আনেন। তাঁর সমর্থনে নানা মন্তব্যে সমাজমাধ্যম ভরিয়ে দেন দলের বহু মহিলা কর্মী। এর পরেই বিতর্ক দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। তার ফলে অস্বস্তিতে পড়তে হয় দলকে। ঘটনাচক্রে তার পরেই অভিযুক্ত নেতাকে ‘গুরুতর নৈতিক অবক্ষয়ে’র কারণে বহিষ্কার করে সিপিএম। দলের এক রাজ্য নেতার কথায়, “বিষয়টি এমন ভাবে মানুষের সামনে হাজির করানো হয়, যেন অভিযোগকারিণী সমাজমাধ্যমে ঘটনাটি ফাঁস না করলে দল ব্যবস্থা নিত না!” ওই নেত্রী অবশ্য পরে স্বীকার করেছেন, “সমাজমাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশ না করলেই ভাল করতাম। দলের উপরে আস্থা রেখে আমার অপেক্ষা করা উচিত ছিল।”

কোনও বিষয় নিয়ে বক্তব্য থাকলে তা দলের অন্দরে জানানোই সিপিএমে দস্তুর। কিন্তু দলের পর্যবেক্ষণ, সমাজমাধ্যমের প্রভাব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এই মাধ্যমের বেহিসেবি ব্যবহারের প্রবণতা। সিপিএম নেতৃত্বের নজরে এ-ও এসেছে, সম্মেলন-পর্ব চলার সময়ে দলের একাংশ অন্য অংশের বিরুদ্ধে সমাজমাধ্যমে প্রচার করছে! আগে এই নিয়ে দল সতর্ক করেছিল সদস্যদের। কিন্তু অভ্যাস বদল না-হওয়ায় এ বার লিখিত ভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলতে হয়েছে সিপিএমকে। চিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘সমাজমাধ্যমকে কোনও ভাবেই আন্তঃপার্টি সংগ্রামের মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করা চলবে না। এ ব্যাপারে প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট পার্টি কমিটিকে কঠোর পদক্ষেপ করতে হবে’। সমাজমাধ্যম ব্যবহারের কৌশল নিয়ে দলের তরফে স্পষ্ট নির্দেশিকা দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা সিপিএমের অন্দরে বারবার আলোচিত হয়েছে। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব বারবার এই নিয়ে সতর্ক করেছেন নিচু তলাকে। কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছু হয়নি, মানছেন নেতৃত্বের একাংশ।

সমাজমাধ্যমের কাজে দক্ষ, এমন এক জনকে সর্ব ক্ষণের কর্মী হিসেবে জেলা-কেন্দ্রে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সিপিএম। এখনও তা সর্বত্র বাস্তবায়িত হয়নি বলে চিঠিতে জানিয়েছে সিপিএম। দ্রুত সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে বলা হয়েছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

CPM Social Media

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy