Advertisement
E-Paper

ইন্দ্রনীল না একাংশের, ফয়দা তুলতে চায় বামেরা

২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে প্রবল মমতা হাওয়ায় হই হই করে জিতে গিয়েছিলেন তিনি। পাঁচ বছরে গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। বর্তমান তৃণমূল সরকারের পক্ষে-বিরুদ্ধে নানা কথা উঠলেও এবং তৃণমূল নেত্রীর ‘প্রয়োজন না পড়লে প্রার্থী বদল করা হবে না’ এমন মন্তব্যে আশা করেছিলেন এ বার তাঁর টিকিট পাওয়া কেউ রুখতে পারবে না।

তাপস ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৬ ০২:৪৭
দলের হয়ে প্রচারে দুই সেনানি। বাঁদিকে, তৃণমূল প্রার্থী ইন্দ্রনীল সেন। ডানদিকে, সিপিএমের গৌতম সরকার।

দলের হয়ে প্রচারে দুই সেনানি। বাঁদিকে, তৃণমূল প্রার্থী ইন্দ্রনীল সেন। ডানদিকে, সিপিএমের গৌতম সরকার।

২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে প্রবল মমতা হাওয়ায় হই হই করে জিতে গিয়েছিলেন তিনি। পাঁচ বছরে গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। বর্তমান তৃণমূল সরকারের পক্ষে-বিরুদ্ধে নানা কথা উঠলেও এবং তৃণমূল নেত্রীর ‘প্রয়োজন না পড়লে প্রার্থী বদল করা হবে না’ এমন মন্তব্যে আশা করেছিলেন এ বার তাঁর টিকিট পাওয়া কেউ রুখতে পারবে না। কিন্তু দলনেত্রী নির্বাচনে প্রার্থী ঘোযণায় তাঁকে বাদ দেওয়ায় যারপরনাই হতাশ, ক্ষুব্ধও চন্দননগরের তৃণমূল নেতা অশোক সাউ।

দলের একাংশের মতে, বিভিন্ন সময় দলের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন তিনি। তার ফলই এটা। অশোকবাবুর জায়গায় চন্দননগর পেয়েছে তৃণমূলের গায়ক প্রার্থী ইন্দ্রনীল সেনকে। যদিও জয়ী প্রার্থীকে সরিয়ে বাইরে থেকে নতুন মুখ আনা মানতে পারছেন না দলের একাংশ। ‘গানের যুগ গিয়েছে, তাই হালে পানি পেতে দিদিকে ধরে রাজনীতিতে জমিয়ে বসার (পড়ুন কামানোর) চেষ্টা করছেন’ এমন টিপ্পনিও ভাসছে চন্দননগরের বাতাসে।

তবে দলের একাংশ সূত্রে খবর, গত পুরভোটে দলকে ভুল বার্তা দিয়ে নিজের দুই নিকটজনের টিকিট সংগ্রহ করেছিলেন অশোকবাবু। দলনেত্রীর নির্দেশ অমান্য করে একই পরিবার থেকে নিজের ছেলে এবং বউমাকে প্রার্থী করেছিলেন তিনি। তখন থেকেই খাঁড়া ঝুলছিল অশোকবাবুর মাথায়। তবে এখানে পান্ডুয়া অথবা সিঙ্গুরের মতো দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রাস্তায় না নামলেও এলাকার উন্নয়ন নিয়ে দলের অন্তর্দ্বন্দ্ব চরমে।

ঐতিহাসিক এই শহর বরাবরই সংস্কৃতি মনোভাবাপন্ন। এলাকার উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিধায়কের আচরণে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। চন্দননগর পুর এলাকার উন্নয়নে নাক গলিয়ে ঘোঁট পাকানো নিয়ে অশোকবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ তিলজলার তৃণমূল ভবনে বার বারই পৌঁছে গিয়েছে ক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের হাত ধরে। নেত্রী যে সে সব উড়িয়ে দেননি, তা এ বার ভোটে টিকিট না পাওয়াতেই পরিষ্কার। চন্দননগরবাসীর অভিযোগ, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে এলাকাবাসীর উন্নয়নের জন্যই কিছু করেননি অশোকবাবু। উল্টে নিজের পরিবারের জন্য পাঁচ বছর ধরে নানা সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন।

যদিও অশোকবাবুর কথায়, ‘‘আমাকে প্রার্থী না করায় কোনও ক্ষোভ নেই। দলনেত্রী যেটা ভাল বুঝেছেন করেছেন। দলের অনুগত সৈনিক হয়েই ভোটের কাজ করব।’’ তাঁর বিরুদ্ধে স্বজন-পোষণের অভিযোগ নিয়ে বিধায়কের দাবি, ‘‘আমি কী করেছি তা জনগণ জানেন। কে কী বলল তাতে কিছু যায় আসে না।’’

এলাকার মানুষ নন। এর আগে মুশির্দাবাদে দল দায়িত্ব দিলেও সেখানে ব্যর্থ। যোগ্যতা বলতে ‘দিদির স্নহধন্য’। আর সেটাই ইন্দ্রনীল সেনের প্রার্থী হওয়ার ইউএসপি। এমনটাই বলছেন স্থানীয় তৃণমূলের একাংশ। যদিও ইন্দ্রনীলবাবুর দাবি, এখানকার বাসিন্দা না হলেও চন্দননগরের সঙ্গে শ্বশুরবাড়ির সূত্রে টান রয়েছে। এখানকার মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের অভাব অভিযোগের সমাধান করতেই তাঁর নির্বাচনী লড়াইয়ের ময়দানে নামা।

জেতা প্রার্থীকে সরিয়ে নতুন মুখকে প্রার্থী করায় বিরোধীদেরই আদতে সুবিধা হবে এমন কথাও শোনা যাচ্ছে তৃণমূলের আনাচে-কানাচে। এই কেন্দ্রে সিপিএমের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন শিক্ষক গৌতম সরকার। রাজনীতিতে পোড় খাওয়া গৌতমবাবু বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিপক্ষের মতো নবাগত হলেও পুরভোটে লড়াই করে দু’বারের কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করেছেন। সেটাকেই তুরুপের তাস করে প্রতিপক্ষকে কাত করতে দিনরাত চষে বেড়াচ্ছেন এদিক-ওদিক।

উল্টোদিকে তারকা প্রার্থী সম্পর্কে কী বলছেন তিনি? সিপিএম প্রার্থীর কথায়, ‘‘ভুলে যাবেন না আমি দু’বার কাউন্সিলার হয়েছি। মানুষের দরকারে তাঁদের পাশে থেকেছি। তা ছাড়া আগের ভোটে তো ওরা কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে জিতেছিল।

গৌতমবাবুর সুর শোনা গেল দলের কিছু নেতার গলাতেও। তাঁদের কথায়, কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে তৃণমূল আগের বিধানসভায় জিতেছে। এ বার কংগ্রেস ও তাঁরা একসঙ্গে। এ বার উল্টো ফল হওয়াটাই তো স্বাভাবিক।

এখন দেখার জোটকে ব্যবহার করে কতটা ফয়দা তুলতে পারে সিপিএম।

assembly election Chandannagar advantages indranil sen cpm tmc gautam sarkar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy