E-Paper

পঞ্চায়েতে সিপিএমের নজরে এ বার ‘রিভার্স স্যুইং’

আক্রমণাত্মক কৌশল নিয়েই ভোটের ময়দানে নেমেছে সিপিএম। দলের কর্মী-সমর্থকেরাই এর নাম দিয়েছেন ‘রিভার্স স্যুইং’!

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০২৩ ০৭:৫৪
CPIM

—প্রতীকী ছবি।

রানিনগর, ডোমকল বা বারাবনি। মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে হামলার মুখে পড়ে প্রথমে পিছু হটলেও পরে আবার পাল্টা তাড়া করেছেন বাম কর্মী-সমর্থকেরা। এই দৃশ্য সামনে রেখেই সিপিএম নেতৃত্ব মনে করছেন, এ বারের পঞ্চায়েত ভোটের পরিস্থিতি অন্য রকম। আক্রমণাত্মক কৌশল নিয়েই ভোটের ময়দানে নেমেছে সিপিএম। দলের কর্মী-সমর্থকেরাই এর নাম দিয়েছেন ‘রিভার্স স্যুইং’!

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক হিসেবে মহম্মদ সেলিম দায়িত্ব নেওয়ার পরে এটাই প্রথম পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন। সেলিমের সাফ কথা, ‘‘রাজ্যে ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোট আর ২০২৩ সাল কিন্তু এক নয়! শাসক দলের গা-জোয়ারি, লুট এখন আর সর্বত্র মানুষ চুপ করে মেনে নেবেন না। গোলমাল করতে এলে মানুষ পাল্টা তাড়া করবেন! আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত।’’ সিপিএম নেতৃত্ব অবশ্য পুলিশের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ। তাঁরা মনে করছেন, বহু জায়গায় পুলিশ সরাসরি শাসক দলকে মদত না করলে মাঠে-ময়দানে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে আরও বেশি পাল্লা দেওয়া যেত। যদিও তৃণমূলের পাল্টা কটাক্ষ, পুলিশের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে সিপিএম-সহ বিরোধীরা সাংগঠনিক দুর্বলতা আড়াল করতে চাইছে।

প্রতিরোধের মেজাজ অবশ্য সিপিএমে রাতারাতি তৈরি হয়নি। রাজ্যে তৃণমূলকে ধাক্কা দিতে গেলে বিজেপিই ভরসা হতে পারে, এই ধারণা এক সময়ে জোরালো হতে শুরু করেছিল। তৃণমূলের সঙ্গে টক্কর দেওয়ার লক্ষ্যেই বাম শিবির থেকে অনেকে গেরুয়া শিবিরে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছিলেন। কিন্তু বিরোধী পরিসরের সেই সমীকরণ আবার বদলাতে শুরু করেছে বেশ কিছু দিন ধরে। বিধানসভা নির্বাচনে শূন্য পেলেও পুরভোটে বিজেপির তুলনায় ভাল ফল করেছিল বামেরা। তার পরে দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে রাজ্যে তোলপাড় শুরু হতে প্রতিবাদ-আন্দোলনের ময়দানে তারাই এগিয়ে এসেছে। এবং সেই প্রতিবাদী কর্মসূচিকে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়েছে জেলা এবং স্থানীয় স্তর পর্যন্ত। এই প্রচেষ্টার জেরেই পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে দলের কর্মী-সমর্থক বাহিনীকে সক্রিয় ভূমিকায় নামানো গিয়েছে বলে সিপিএম নেতৃত্বের মত। আসন সমঝোতা হোক বা না হোক, প্রতিরোধ হলে কোথাও কোথাও তাতে শামিল হচ্ছে কংগ্রেসও।

সব জেলায় গত কয়েক মাসে কর্মিসভা করে দলের রাজ্য সম্পাদক নিজে ওই ২০১৮ আর ২০২৩-এর ফারাকের কথাই বারবার বুঝিয়ে এসেছেন। জেলায় জেলায় পরপর কর্মসূচি নিয়ে কর্মীদের চাঙ্গা করা হয়েছে। দলের অন্দরে একাংশের অবশ্য প্রশ্ন আছে, মনোনয়নের পরে মূল ভোট আসবে। তখন কত দূর প্রতিরোধ করা যাবে? কর্মী-সমর্থকদের উপরে আক্রমণ, মামলা হতে পারে, তার দায়ও নিতে হবে। কিন্তু সিপিএম রাজ্য নেতৃত্বের যুক্তি, পঞ্চায়েত ভোটে শেষ পর্যন্ত শাসকের ‘গা-জোয়ারি’র কাছে যদি হারতেও হয়, তা হলেও লোকসভা নির্বাচনে তার ফল মিলবে। ফলে, ভবিষ্যতের জন্যও রাজনৈতিক লাভের অঙ্ক থাকছে।

দলকে লড়াইয়ের ময়দানে নিজেদের জোরে দাঁড়ানোর বার্তা দিতেই বিজেপির মতো সরাসরি কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবি এখন তুলছে না সিপিএম। তাদের সুর ভিন্ন। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট হবে নাকি অন্য রাজ্য থেকে পুলিশ আনবে, সেটা কমিশনকে ঠিক করতে হবে। আমরা বলছি, মনোনয়ন থেকে শুরু করে গণনা পর্যন্ত গোটা প্রক্রিয়ায় সব রকমের নিরাপত্তার দায়িত্ব কমিশনকে নিতে হবে। আর পুলিশকে এখনও বলছি, নিজেদের উর্দির মর্যাদা রাখুন!’’

তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের অবশ্য পাল্টা বক্তব্য, ‘‘সিপিএম হোক বা বিজেপি, কংগ্রেস নিজেদের সাংগঠনিক দুর্বলতা ঢাকতে পুলিশের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে! পঞ্চায়েতের সব স্তরে ওদের কে কোথায় প্রার্থী, সেই তালিকাটা ঘোষণা করে দিক না। তা হলেই বোঝা যাবে, কে কতটা প্রস্তুত, কেউ কোথাও বাধা দিচ্ছে কি দিচ্ছে না।’’

প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর স্মৃতি উস্কে কর্মী-সমর্থকদের বাড়তি উদ্দীপনা জোগানোরও চেষ্টা করছে সিপিএম। এই বছর পঞ্চায়েত ভোট পড়েছে ৮ জুলাই, যে দিনটা জ্যোতিবাবুর জন্মদিন। তাঁর আমলেই প্রথম ত্রিস্তর পঞ্চায়েত চালু হয়েছিল। ‘সরকার মহাকরণ থেকে নয়, চলবে গ্রাম থেকে’— জ্যোতিবাবুর সেই বক্তব্যকে মনে রেখে পঞ্চায়েত ভোটের জন্য ডাক দেওয়া হচ্ছে ‘বাম পথে গ্রাম’।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

WB panchayat Election 2023 CPIM md salim

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy