কলকাতার পরে শনিবার বাকি ৯১টি পুরসভার ভোটেও ভোট লুঠের ঘটনা ঘটলে বামেরা সাধারণ ধর্মঘট বা হরতালের পথে যেতে পারে বলে জানিয়ে দিলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। ভোটের আগে নির্বাচন কমিশন, পুলিশ-প্রশাসন এবং শাসক দলের উপরে চাপ সৃষ্টি করতেই বৃহস্পতিবার বামফ্রন্টের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের ব্যাখ্যা।
রাজ্যের ৯১টি পুরসভার ভোটে শাসক দলের মোকাবিলা করে বামেরা পাল্টা প্রতিরোধের পথে যেতে পারবে কি না, তা নিয়ে এ দিন ফ্রন্টের বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সিদ্ধান্ত হয়েছে, শনিবার সকালে ভোট-পরিস্থিতি দেখে বামফ্রন্টের রাজ্য নেতৃত্ব মিছিল করে নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবিপত্র জমা দিতে যাবেন। তার আগে কলকাতায় কোনও জায়গায় তাঁরা জড়ো হবেন। অভিযোগ পেয়েও কমিশন কোনও ব্যবস্থা না নিলে বামেরা সাধারণ ধর্মঘটের পথে যেতে পারে। ফ্রন্টের বৈঠকের পরে এ দিন বিমানবাবু বলেন, ‘‘গণতন্ত্র বাঁচাতে আমরা সব কিছু করব। এমনকী, ধর্মঘট বা হরতালের পথেও যেতে পারি।’’ কবে হরতাল হতে পারে? জবাবে বিমানবাবু বলেন, ‘‘এর জন্য প্রস্তুতি লাগে। এখনই বলা সম্ভব নয়। আগে শনিবার ভোট হোক। পরিস্থিতি দেখে বামফ্রন্টে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’
আর এক বিরোধী পক্ষ বিজেপি-ও দলের কর্মী এবং সাধারণ মানুষের কাছে আহ্বান জানিয়েছে ভোটের দিন রাস্তায় নামতে। কলকাতা পুরসভার ভোটের অভিজ্ঞতার পরেই বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বলেছিলেন, ‘‘কলকাতার ভোট হাঁড়ির একটা ভাত। এটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে, ২৫ এপ্রিল বাকি ৯১টি পুরসভার ভোট কেমন হবে!’’ ভোট-প্রচারের শেষ দিনেও বিজেপি নেতৃত্বের সুর বদলায়নি। দলের রাজ্য সহ-সভাপতি প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেছেন, ‘‘আমরা তো আর অস্ত্র নিয়ে মারামারি করতে পারব না। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। ফলে কী আর করব? মানুষ এবং দলীয় কর্মীদের বলছি, রাস্তায় নামতে।’’ একই কথা বলেছেন রাহুলবাবুও। তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘শুধু আমাদের দল নয়, সাধারণ ভাবে সব মহিলার কাছেই আমার আবেদন, দা, ঝাঁটা যা পাবেন, নিয়ে প্রতিরোধ করুন! কিন্তু পুলিশ যদি তৃণমূলের সশস্ত্র হামলা নীরবে দেখে আর বিরোধীদের প্রতিরোধ ঠেকাতে গ্রেফতার করে, তা হলে এই আবেদনে আর কী লাভ হবে!’’ শাসক দলের শীর্ষ নেতৃত্ব অবশ্য জানিয়েছেন, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা হলে প্রশাসন উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।
বিজেপির সুরেই কলকাতার পুরভোট প্রহসনে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করে এ দিন বিমানবাবু বলেছেন, ‘‘৩২ নম্বর ওয়ার্ডের একটি বুথে যত পুরুষ ভোটার, তার থেকে বেশি পুরুষ ভোট দিয়েছেন! মৃত ব্যক্তিও ভোট দিয়েছেন!’’ এই প্রেক্ষিতেই শনিবারের জন্য বাম কর্মীদের প্রতি বিমানবাবুর নির্দেশ, ‘‘যদি এর পরেও ভোট লুঠ হয়, তা হলে সঙ্গে সঙ্গে বাম নেতৃত্বকে তা জানাতে হবে। যাতে তাঁরা কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেন।’’ বাম কর্মীদের চাঙ্গা করতে বিমানবাবু বলেন, ‘‘ভোট-লুঠ প্রতিরোধ করতেই হবে। যে পরিস্থিতিই আসুক!’’
বামফ্রন্টের বৈঠকে এ দিন শরিক দলের নেতারা বলেন, দক্ষিণবঙ্গের কিছু জেলায় তৃণমূল একতরফা ভোট করতে পারে। কিন্তু উত্তরবঙ্গে কিছু করতে গেলে প্রতিরোধ হবে। বাম নেতৃত্ব মনে করছেন, কলকাতার পরে শিলিগুড়ি পুরসভা দখল করতে তৃণমূল মরিয়া প্রচেষ্টা চালাবে। কিন্তু সেখানে ভোট লুঠ করতে গেলে বামেরা প্রতিরোধ গড়ে তোলার মতো সাংগঠনিক অবস্থায় আছে। ফলে শিলিগুড়ি-সহ উত্তরবঙ্গে পুরসভাগুলির ক্ষেত্রে সংঘর্ষের মতো পরিস্থিতিও হতে পারে। এ ব্যাপারে নেতৃত্বকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য কোনও নির্দিষ্ট জায়গা নিয়ে আশাবাদী নন। দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ এ রাজ্যে সংগঠনকে পোক্ত করার জন্য বুথরক্ষী বাহিনী গড়ায় জোর দিয়েছিলেন। কিন্তু এই পুরভোটে বিজেপি বেশির ভাগ জায়গাতেই বুথরক্ষী বাহিনী গড়তে পারেনি। দলের এক নেতা বলেন, ‘‘বুথরক্ষী বাহিনী হবে কী ভাবে? তৃণমূলের অস্ত্রের সামনে আমাদের কর্মীদের কি প্রাণ দেওয়ার জন্য ঠেলে দেব?’’ তবে এর মধ্যেও দলের এক নেতার হুঁশিয়ারি, ‘‘আমরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই আস্থা রাখতে চাই। কিন্তু দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দেওয়া হলে যার বাড়িতে যা আছে, যেমন রড, লাঠি ইত্যাদি বার করতে হবে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy