Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
CPM

CPM: শুধু তরুণ নয়, ‘উন্নত’ কর্মীর খোঁজ সিপিএমে

ভোটে লাগাতার ভরাডুবির পরে রাজ্য সিপিএমের সাংগঠনিক ময়না তদন্তে উঠে এসেছে, বিরোধী দল হিসেবে উপযুক্ত আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তোলা যায়নি।

বদল হচ্ছে দলে

বদল হচ্ছে দলে —প্রতীকী চিত্র।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০২১ ০৫:৫১
Share: Save:

শুধু নির্বাচনে লড়াই বা সরকারে যাওয়ার লক্ষ্যে কমিউনিস্ট পার্টি কাজ করে না। সমাজ বদলের বৃহত্তর লড়াই তাদের উপজীব্য, অন্যায়ের প্রতিবাদে ধারাবাহিক ভাবে সরব থাকা তাদের কর্তব্য। বাংলায় বিধানসভা ভোটে বেনজির বিপর্যয়ের পরে এখন আবার নতুন করে কর্মীদের জন্য এই নীতি-শিক্ষা দিতে হচ্ছে সিপিএমকে!

ভোটে লাগাতার ভরাডুবির পরে রাজ্য সিপিএমের সাংগঠনিক ময়না তদন্তে উঠে এসেছে, বিরোধী দল হিসেবে উপযুক্ত আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তোলা যায়নি। দলের মধ্যে রয়ে গিয়েছে ‘নিষ্ক্রিয়তা’র প্রবল সমস্যা। নেতা-কর্মীদের চিন্তা-ভাবনার মানের ধারাবাহিক অবনতি এই সমস্যার অন্যতম মূল কারণ বলে চিহ্নিত করেছে সিপিএম। দলের কাজ সংক্রান্ত শিক্ষার ক্ষেত্রে ‘অটো-পাইলট ব্যবস্থা’র কথা বলছে তারা। দলীয় রিপোর্টে বলা হয়েছে, আন্দোলনের কর্মসূচির সঙ্গে পার্টি শিক্ষার কাজ ‘অটো-পাইলট ব্যবস্থা’র মতো অব্যাহত রাখতে হবে। আসন্ন সম্মেলন-পর্বে দলের সর্ব স্তরে উপযুক্ত চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলায় নজর দিতে চাইছে সিপিএম।

দলের রাজ্য কমিটিতে গৃহীত সাংগঠনিক পর্যালোচনা রিপোর্টে বলা হয়েছে: ‘এ কথা অস্বীকার করা যাবে না যে, রাজ্যে পার্টি সদস্যদের এক বড় অংশের চেতনার মান নিম্ন। সদ্য অনুষ্ঠিত বিধানসভা নির্বাচনে এক উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পার্টি সদস্য, যাঁরা বুথ এলাকায় বসবাসকারী, সে ভাবে নির্বাচনী সংগ্রামে অংশ নিলেন না। বাসস্থান এলাকা, কর্মস্থলে জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা, রাজনৈতিক বক্তব্য মানুষের মধ্যে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুতর দুর্বলতা রয়ে যাচ্ছে’। বিপর্যয়ের কাটাছেঁড়া করতে গিয়ে সিপিএমের উপলব্ধি, কোথায় কোন কথা কী ভাবে প্রচার করতে হবে, কী ভাবে আন্দোলন দানা বাঁধানো যাবে— এ সবই সিলেবাস তৈরি করে হয় না। ভাবনা ও চেতনা ঠিক নেই বলে এই ক্ষেত্রে নেতৃত্ব ব্যর্থ হচ্ছেন, কর্মী বা সদস্যেরাও ভুল পথে চালিত হচ্ছেন।

দলে ‘নিষ্ক্রিয়তার ব্যাধি’ কাটানোর সঙ্গে সদস্যদের ‘গুণগত মানোন্নয়ন’ ওতপ্রোতভাবে জড়িত বলেই এই রিপোর্টে উল্লেখ করেছে সিপিএম। সেই সঙ্গেই বলা হয়েছে: ‘সমকালীন পরিস্থিতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার হিম্মত ব্যতিরেকে নেতৃত্ব হয় না! নিজের এলাকাকে ভাল করে জানা, জনগোষ্ঠীর সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা সংশ্লিষ্ট নেতৃত্বের সকলের রয়েছে, অভিজ্ঞতা তা বলছে না’।

নেতৃত্বে পরিবর্তনের জন্য বয়স-সীমা বেঁধে দিয়ে এ বার তরুণতর অংশকে তুলে আনার উপরে জোর দিচ্ছে সিপিএম। কিন্তু সেখানেও রয়েছে সাবধান-বার্তা। রিপোর্টের ভাষায়, ‘শুধু তরুণদের কমিটির সদস্য বা নেতৃত্বে নিয়ে আসাই যথেষ্ট নয়। সঠিক কর্মী নীতির সাহায্যে তরুণ প্রজন্মের মধ্য থেকে উন্নত কমিউনিস্ট কর্মী গড়ে তোলার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যা এই মুহূর্তে অগ্রাধিকার দাবি করছে’। দলের তথ্য বলছে, গত বছরে ৩৭৯ জন প্রার্থী-সদস্যের পূর্ণাঙ্গ সদস্যপদের আবেদন খারিজ হয়েছে। এর জন্য সংশ্লিষ্ট নেতৃত্বকেই দায়ী করেছে দল। রাজ্যে সিপিএমে সর্বক্ষণের কর্মী সংখ্যা এখন ১৪৯৯। যা আগের চেয়ে কিছুটা বাড়লেও প্রত্যাশিত হারে বাড়েনি। ‘আত্মপ্রচার’ থেকে বিরত হয়ে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সব ধরনের কর্মী যাতে দলের কাজ করেন, বিপর্যয়ের পরে সম্মেলনে সেই আহ্বানই জানাতে চলেছে সিপিএম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CPM party workers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE