Advertisement
১১ মে ২০২৪
Crime Against Women

সালিশি সভায় সতর্ক করা হয় পাঁচ যুবককে

ছাত্রীর দিদি জানান, তাঁকে অপরিচিত এক নম্বর থেকে ফোন করে জানানো হয় যে, তাঁর বোন মারা গিয়েছে। তাঁকে দ্রুত বাড়ি ফিরে আসতে বলা হয়।

ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ।

ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ। প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২৩ ০৭:০০
Share: Save:

প্রতিবেশী পাঁচ যুবক প্রায়ই বিরক্ত করত দশম শ্রেণির ছাত্রীটিকে। এমনকি, মেয়েটির বাড়ি পর্যন্ত ধাওয়া করত তারা। এমনই অভিযোগ উঠছিল বার বার। কয়েক মাস আগে তাই পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রামে সালিশি সভাও বসে। স্থানীয় সূত্রের খবর, সেখানে অভিযুক্তদের পরিবার ও ছাত্রীর পরিবার— দু’পক্ষই ছিল। সেদিন সালিশি সভায় উপস্থিত গ্রাম পঞ্চায়েতের এক সদস্য রবিবার জানান, আলোচনার মাধ্যমে তখন সমস্যার সমাধান করা হয়েছিল। ওই পঞ্চায়েত সদস্য বিকাশ বসাক এ দিন বলেন, ‘‘কয়েকজন পড়শি যুবক ওই ছাত্রীকে বেশ কয়েকদিন ধরেই বিরক্ত করত। সালিশি সভা করে সমস্যা মেটানো হয়েছিল। এরই মধ্যে এমন ঘটনা ঘটে গেল। দোষীদের শাস্তি চাইছি।’’

বছরের শেষ দিনে জলপাইগুড়িতে ওই ছাত্রীটিকে ওই পাঁচ যুবক গণধর্ষণ করে খুন করে বলে অভিযোগ। ঘটনায় হতবাক মেয়েটির বাবা। তিনি এ দিন কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, ‘‘প্রায় দিনই আমার মেয়েটাকে বিরক্ত করত পড়শি ওই যুবকেরা। এর আগে সালিশি সভায় ওই পাঁচ জনকে সর্তক করা হয়েছিল। শনিবার মেয়েকে রেখে শ্বশুরবাড়ি গিয়েছিলাম। বাড়ি ফাঁকা ছিল। পাঁচ যুবক দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে মেয়ে ধর্ষণ করে খুন করে পালিয়ে যায়। অভিযুক্তদের ফাঁসি চাই।’’ মৃতার মামার দাবি, ‘‘আমার ভাগ্নিকে হত্যা করা হয়েছে। প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করে। অভিযুক্তদের পড়া শাস্তি চাই।’’

পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, ছাত্রীটি যে কোনও কারণেই হোক, গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এই তত্ত্বে বিশ্বাসী নন মেয়েটির পড়শিরা। উত্তেজিত গ্রামবাসী অভিযুক্তদের বাড়ি ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ। দোষীদের শাস্তির দাবি তুলে থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীরা। থানা চত্বরে প্রায় এক ঘণ্টা বিক্ষোভ চলে। পুলিশ অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে বিক্ষোভ তুলে নেন তাঁরা। এ দিকে, পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ। বাকিরা পলাতক।

কী হয়েছিল শনিবার রাতে? পরিবারের দাবি, সন্ধ্যায় টিউশন থেকে বাড়ি ফিরে আসে পনেরো বছরের ওই নাবালিকা। বাবা-মা ও ভাই ময়নাগুড়িতে মামার বাড়িতে গিয়েছিলেন। ছাত্রীর দিদি টিউশন পড়তে গিয়েছিলেন। এ দিকে বর্ষবরণের রাতে এলাকায় চলছিল পিকনিক। ছাত্রীটি বাড়িতে একাই ছিল। অভিযোগ, বাড়ির পিছন দিক দিয়ে পাঁচ যুবক তার ঘরে সামনে চলে আসে। এর পরে, ঘরের দরজা ভেঙে ছাত্রীকে গণধর্ষণ করে বালিশ চাপা দিয়ে খুন করে বলে অভিযোগ। প্রমাণ লোপাট করতে গিয়ে অভিযুক্তেরা ছাত্রীর দেহ ঝুলিয়ে দেওয়া চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। ঘরের মেঝেতে দেহ ফেলে আলো নিভিয়ে পালিয়েযায় বলে দাবি।

ছাত্রীর দিদি জানান, তাঁকে অপরিচিত এক নম্বর থেকে ফোন করে জানানো হয় যে, তাঁর বোন মারা গিয়েছে। তাঁকে দ্রুত বাড়ি ফিরে আসতে বলা হয়। বাড়ি ফিরে তিনি বোনকে ঘরের মেঝেয় মুখ থুবড়ে পড়ে থাকতে দেখেন। তাঁর চীৎকারে পড়শিরা ছুটে আসেন। এর পরে ছাত্রীটিকে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে জানান। এ দিকে ছাত্রীর ঘর থেকেপাওয়া যায় অভিযুক্তদের মোবাইল ও জুতো। পড়শিদের দাবি, বর্ষবরণের পিকনিকে বক্স বাজানো হচ্ছিল চারিদিকে। সেই কারণেই ছাত্রীর চিৎকার পাওয়া যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Against Women Rape and Murder Jalpaiguri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE