Advertisement
০৭ মে ২০২৪
দেবীবরণ আর বিসর্জনে অপেক্ষা আগামীর
Durga Puja 2023

দশমী-রাতে ঘাটে ভিড়, ভরা মণ্ডপও

কলকাতার বনেদি বাড়িগুলির প্রতিমা দুপুরের পরেই গঙ্গার ঘাটমুখো হয়েছে। তার আগে চলেছে বরণ, সিঁদুর খেলা। মনে বিষাদের সুর নিয়েই ঘরের মেয়ে উমাকে কৈলাসের উদ্দেশে রওনা করিয়েছে বাঙালি।

An image of Durga Idol

আবার এসো: চলছে কলকাতার শোভাবাজার ঘাটে দেবী বরণ। ছবি: সুমন বল্লভ।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২৩ ০৭:৩১
Share: Save:

পঞ্জিকার হিসাবে, তিথি-নক্ষত্র মেনে পুজো শেষ হয়েছে মঙ্গলবার সকালেই। কিন্তু বাঙালির উৎসবের পঞ্জিকা অবশ্য ভিন্ন। তাই দুর্গাপুজো শেষ হয়েও শেষ হল না। দশমী পেরিয়ে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিসর্জনের সময়সীমা আছে। তার পরে শুক্রবার আছে সরকার আয়োজিত কার্নিভাল। সে দিন রাতভর বিসর্জন হবে। সেই বিসর্জন শেষে ভোর হলেই বাজবে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর শাঁখ। তাই তিথি শেষ হলেও মণ্ডপে প্রতিমা থেকে যাওয়ায় কিছু দর্শনার্থী এ দিনও মণ্ডপমুখো হয়েছেন। বাড়ির পুজো এবং শাস্ত্রীয় আচার মেনে চলা বারোয়ারি পুজোগুলি অবশ্য এ দিনই বিসর্জন সেরেছে। তাই বিকেল থেকে কলকাতা এবং বিভিন্ন জেলার বিসর্জনের ঘাটগুলিতে মানুষের ঢল নেমেছিল। পরিস্থিতি সামলাতে তৎপর ছিল পুলিশও।

কলকাতার বনেদি বাড়িগুলির প্রতিমা দুপুরের পরেই গঙ্গার ঘাটমুখো হয়েছে। তার আগে চলেছে বরণ, সিঁদুর খেলা। মনে বিষাদের সুর নিয়েই ঘরের মেয়ে উমাকে কৈলাসের উদ্দেশে রওনা করিয়েছে বাঙালি। বনেদি বাড়ির রীতি, লোকাচার মেনে দুর্গার আগে কৈলাসে বার্তা নিয়ে গিয়েছে মাটি কিংবা শোলার নীলকণ্ঠ। খাস কলকাতার সাবেক বারোয়ারি পুজোগুলিও এ দিন প্রতিমা বিসর্জন দিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, বিসর্জন উপলক্ষে নিমতলা ঘাট, বাগবাজার ঘাট, বাজে কদমতলা, দইঘাট-সহ বিভিন্ন জায়গায় নিরাপত্তা ছিল। ছিল পুরসভার কর্মী এবং বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীও। জলপথে টহল দিয়েছে রিভার ট্রাফিক পুলিশের লঞ্চগুলি। রাত পর্যন্ত কোনও বড় মাপের বিপদের কথা শোনা যায়নি। শুধু খাস কলকাতা নয়, শহরতলিতেও বিসর্জন হয়েছে। গঙ্গা বা অন্য কোনও নদীর অভাবে পাড়ার কিংবা স্থানীয় পুরসভার নির্দিষ্ট স্থানে প্রতিমা বিসর্জন হয়েছে। গঙ্গার তীরবর্তী পুর-শহরগুলিতে অবশ্য বিসর্জন হয়েছে গঙ্গাতেই। জেলার বিভিন্ন নদীতেও বিসর্জনের ব্যবস্থা করেছিল প্রশাসন।

কোচবিহারে সকালে কিছু বাড়ির প্রতিমা বিসর্জন হলেও বিকেলের পরে শোভাযাত্রা বেরিয়েছিল। প্রতি বছরের মতো এ বারও প্রথম বিসর্জন হয়েছে কোচবিহারের বড়দেবী বাড়ির প্রতিমার। মন্দিরের কাছেই যমুনা দিঘিতে ওই বিসর্জন ঘিরে ভিড় উপচে পড়েছিল। শহর সংলগ্ন তোর্সা নদীর ঘাটে দশমীর মেলা বসে। সেখানে শহরের একাধিক প্রতিমা বিসর্জন হয়। এ ছাড়া তোর্সা নদীর ঘাটেই ঘুঘুমারি, ফাঁসির ঘাটে দশমীর মেলা হয়। এ দিন সন্ধ্যায় কোচবিহার শহরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে এক যুবক ছুরিকাহত হন বলে অভিযোগ ওঠে। পুলিশ অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে। প্রতি বছরের মতো এ বারও ইছামতী নদীতে বিসর্জন দেখতে লোকের ঢল নেমেছিল উত্তর ২৪ পরগনার টাকিতে। পর্যটকদের নদীতে ঘোরানোর জন্য ১০০টি জলযান ছিল। তবে প্রতিমা নিয়ে নদীতে নেমেছিল মাত্র ৪-৫টি নৌকা। বাংলাদেশের দিক থেকে একটি প্রতিমাও ইছামতীতে নামেনি। তাই পর্যটকেরা মোটেও খুশি হননি। তুলনায় বনগাঁয় ইছামতীতে বিসর্জন বেশি হয়েছে বলে খবর। বনগাঁ পুরসভার তরফে জাল দিয়ে ইছামতী নদীর একটি অংশ বিপদ এড়াতে ঘিরে দেওয়া হয়েছিল। পর্যাপ্ত পুলিশি ব্যবস্থা ছিল, একাধিক স্পিডবোট রাখা হয়েছিল।

দুই বর্ধমানে এ দিন অধিকাংশ সর্বজনীন পুজোরই বিসর্জন হয়নি। পূর্ব বর্ধমানে দামোদর, ভাগীরথী এবং পশ্চিম বর্ধমানে অজয়, দামোদরে কিছু পারিবারিক পুজোর বিসর্জন হয়। ঘটনাচক্রে, কয়েক দিন আগে কালনা ও কাটোয়ায় ভাগীরথী থেকে কুমির উঠে এসেছিল লোকালয়ে। বিসর্জন চলাকালীন যাতে কুমিরের হামলার মতো কোনও ঘটনা না ঘটে, সে জন্য এ দিন ভাগীরথীতে জল-বোমা ফাটান বনকর্মীরা। পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার অসংখ্য বাড়ির পুজো-সহ একাধিক সর্বজনীনেরও প্রতিমা বিসর্জন হয়েছে। পুরুলিয়া শহরের নতুন বাঁধে ছিল প্রতিমা নিরঞ্জনের ভিড়। প্রতিমার কাঠামো তুলতে ছিলেন পুরকর্মীরা।

হুগলির আরামবাগ মহকুমার ৫৯২টি অনুমোদিত পুজোর ৫০৯টির বিসর্জন হয়েছে মঙ্গলবার। পারিবারিক শ’খানেক পুজোর ৫৫টিও এদিনই ভাসান হয়। বাকি প্রতিমা বুধবার বিসর্জন হবে জানিয়ে এসডিপিও (আরামবাগ) অভিষেক মণ্ডল বলেন, “বিশৃঙ্খলা এড়াতে ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিমা বিসর্জনের ঘাটগুলি নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।” শ্রীরামপুরের দিকে বিকেলে ছিটে ফোঁটা বৃষ্টি পড়লেও বিসর্জনের মেজাজে ভাটা পড়েনি। গঙ্গার বিভিন্ন ঘাটে বিসর্জনে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কাঠামো দ্রুত তুলে ফেলে গঙ্গা দূষণ কতটা আটকানো যায় সেই প্রশ্নও রয়েছে। হাওড়ার উলুবেড়িয়া নদী ঘাটে বিসর্জনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে সমস্ত রকম ব্যবস্থা করা হয়েছিল পুরসভার পক্ষ থেকে।

দক্ষিণ দিনাজপুরে বৃষ্টির মধ্যে ছাতা নিয়েই সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন মহিলারা। বালুরঘাটে আত্রেয়ীতে, গঙ্গারামপুরে পুনর্ভবায় এবং বুনিয়াদপুরে টাঙ্গন নদীতে এ দিন বেশ কিছু প্রতিমা বিসর্জন হয়। মালদহে কিছু বাড়ির এবং ক্লাবের পুজোর বিসর্জন হয়েছে। রায়গঞ্জের খরমুজাঘাট ও বন্দর এলাকার কুলিক নদীর ঘাটে প্রতিমা বিসর্জন হয়েছে। সেখানে পুরসভার ঘাট সহায়করা প্রতিমা বিসর্জন দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE