Advertisement
০১ মে ২০২৪

দীপাবলির মুখে দীপ নিভছে বাম পত্রিকার

চলতি মাসেই ত্রিপুরায় রাজরোষের মুখে পড়ে বন্ধ হয়েছিল সিপিএমের দৈনিক মুখপত্র। জেলাশাসক ছাড়পত্র দিয়েও প্রত্যাহার করে নেওয়ায় মুখপত্র প্রকাশে সম্মতি ফিরিয়ে নিয়েছিল আরএনআই।

সন্দীপন চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৮ ০২:৩২
Share: Save:

উৎসবের মরসুমেই যবনিকা নেমে আসতে চলেছে ইতিহাসের এক অধ্যায়ে। শেষ পর্যন্ত বন্ধই হয়ে যাচ্ছে সিপিআইয়ের মুখপত্র। কমিউনিস্ট ও বামপন্থী দলগুলির মধ্যে ওই ‘কালান্তর’ই ছিল প্রথম সাপ্তাহিক ও দৈনিক মুখপত্র।

চলতি মাসেই ত্রিপুরায় রাজরোষের মুখে পড়ে বন্ধ হয়েছিল সিপিএমের দৈনিক মুখপত্র। জেলাশাসক ছাড়পত্র দিয়েও প্রত্যাহার করে নেওয়ায় মুখপত্র প্রকাশে সম্মতি ফিরিয়ে নিয়েছিল আরএনআই। ত্রিপুরা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির স্থগিতাদেশের জেরে এখন আবার চালু হয়েছে আগরতলার ওই কাগজ। কলকাতায় সিপিআইয়ের মুখপত্রের ঘটনা ঠিক তেমন নয়। তবে এখানেও ‘প্রাপ্য বিজ্ঞাপন’ দিতে রাজ্য সরকারের ধারাবাহিক অসহযোগিতাকে দায়ী করছেন সিপিআই নেতৃত্ব।

দলীয় সূত্রের খবর, সিপিআইয়ের রাজ্য পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আর্থিক বোঝা বইতে না পেরে এ বার বন্ধই করে দেওয়া হবে দলীয় মুখপত্রের প্রকাশনা। মাঝে আর অত্যাশ্চর্য কোনও ঘটনা না ঘটলে আগামী ১ নভেম্বর রাত থেকে ছাপাখানায় পাঠানো হবে না পরের দিন সকালের কাগজের প্লেট। মুখপত্রের সঙ্গে যুক্ত থাকা জনাষাটেক কর্মীর ভবিষ্যৎ এবং ইতিহাসের একটি পর্বে একই সঙ্গে অন্ধকার নেমে আসার ঘটনায় বিমর্ষ সিপিআই নেতৃত্ব। দলের মধ্যে অবশ্য দ্বিতীয় একটি মত ছিল দৈনিক বন্ধ করেও সাময়িকী আকারে অন্তত কাগজ চালু রাখা হোক। কিন্তু খরচের সংস্থান নিয়ে চিন্তিত দলীয় নেতৃত্ব সেই মত আপাতত মানেননি।

সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘আর্থিক সঙ্কট নিয়েও কাগজ চালু রাখা হয়েছে বহু দিন। এই ধরনের যে কোনও কাগজই ভর্তুকির উপরে চলে। কিন্তু এখানে সরকার পরিবর্তনের পর থেকে ন্যূনতম সরকারি বিজ্ঞাপনও আমরা পাইনি। উপায়ান্তর না দেখে দুঃখজনক একটা সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।’’ বাম জমানাতেও এক বার কিছু দিনের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছিল ওই মুখপত্র। সিপিআই নেতা ও বাম সরকারের মন্ত্রী নন্দগোপাল ভট্টাচার্যের উদ্যোগে নতুন মুদ্রণ যন্ত্র এনে রঙিন চেহারায় পুনঃপ্রকাশিত হয়েছিল কাগজ। এ বার অবশ্য সংস্কার বা নবকলেবরের আশা ক্ষীণ।

বাংলায় কমিউনিস্ট আন্দোলনের ইতিহাস নিয়ে ধারাবাহিক গ্রন্থের অন্যতম লেখক, সিপিআইয়ের বর্ষীয়ান নেতা ভানুদেব দত্ত জানাচ্ছেন, অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টি যখন ভাঙনের দিকে এগোচ্ছে, সেই সময়ে ১৯৬২ সালে সাপ্তাহিক আকারে প্রথম প্রকাশিত হয় মুখপত্রটি। পার্টি ভাগের পরে ১৯৬৬ সাল থেকে টানা দৈনিক হিসেবে ওই মুখপত্র চালিয়ে এসেছে সিপিআই। সিপিএমে যোগ দেননি আবার সিপিআইয়ের সব পন্থার সঙ্গে একমত ছিলেন না, এমন মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিরা মাঝে চালু করেছিলেন ‘মূল্যায়ন’ পত্রিকা। পরে তাঁরা প্রায় সকলেই সিপিআইয়ে চলে আসেন। খড়দহ, অশোকনগরের মতো মফস্সলে কিছু বামপন্থী পত্রিকাও স্থানীয় ভাবে চালু ছিল। তবে রাজ্য স্তরে বামপন্থীদের উল্লেখযোগ্য চিন্তাবাহক হিসেবে সিপিএম ছাড়া সিপিআইয়ের এই মুখপত্রই ছিল, যার দীপ নিভছে দীপাবলির আগে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Newspaper Kalantar CPI
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE