Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Cyber Crime

‘জামতাড়া গ্যাং’ এখন অতীত, ভরতপুরে অফিস খুলে শেখানো হচ্ছে প্রতারণার নানা কৌশল

গত কয়েক মাসে জমা পড়া সাইবার ক্রাইমের তথ্য বিশ্লেষণ করে সিআইডি জানাচ্ছে, এই তিন ধরনের পন্থা (মোডাস অপারেন্ডি) এখন বেশি করে ব্যবহার করছে প্রতারকেরা।

cyber crime

—প্রতীকী ছবি।

রাজীব চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২৪ ০৬:২৮
Share: Save:

ঘটনা ১: অনলাইনে মানালির একটি হোটেলের রুম বুক করেছিলেন কলকাতার এক দম্পতি। টাকা জমা দেওয়ার পরে পেয়েছিলেন রসিদও। হোটেলে গিয়ে শোনেন তাঁদের নামে কোনও রুম বুক নেই। তদন্তে জানা যায়, অনলাইনে হোটেলের রুম বুক করিয়ে দেওয়ার নামে টাকা আত্মসাৎ করছে সাইবার অপরাধ চক্র।

ঘটনা ২: সার্চ ইঞ্জিন থেকে কলকাতার এক প্রখ্যাত চিকিৎসকের যোগাযোগের নম্বর পেয়েছিলেন এক ব্যক্তি। ওই নম্বরে ফোন করলে তাঁকে একটি লিঙ্ক পাঠিয়ে রেজিস্ট্রেশন বাবদ ১০ টাকা জমা করতে বলা হয়। টাকা পাঠানোর পরে তাঁর কাছে একটি ওটিপি আসে। ফোনে সেই ওটিপি জানতে চান এক ব্যক্তি। ওটিপি বলার কিছুক্ষণ পরেই তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে থাকা টাকা উধাও হয়ে যায়। তদন্তে জানা যায়, টাকা হাতানোর এই পন্থা সাইবার অপরাধীদের নবতম আবিষ্কার।

ঘটনা ৩: কলকাতার উপকণ্ঠের এক বাসিন্দার বাড়ির দরজার কড়া নেড়েছিলেন এক যুবক। নিজেকে অনলাইন শপিং সংস্থার ডেলিভারিম্যান দাবি করে তিনি বাড়ির মালিকের হাতে একটি প্যাকেট ধরিয়ে দেন। ওই ব্যক্তি পাল্টা জানান, তিনি অনলাইনে কিছু অর্ডার করেননি। উত্তরে ডেলিভারিম্যান তাঁকে জানান, তা হলে অর্ডার বাতিল করতে হবে। একটি নম্বরও তিনি বাড়ির মালিককে দেন। সেই নম্বরে ফোন করলে উল্টো দিক থেকে তাঁকে বলা হয়, অর্ডার বাতিল করা হচ্ছে। এর পরেই প্যাকেট নিয়ে চলে যান ডেলিভারিম্যান। কিছু ক্ষণ পরে ওই ব্যক্তির ফোনে একটি ওটিপি আসে। ফোনে এক ব্যক্তি সেই ওটিপি জানতে চান। বলা হয়, অর্ডার বাতিলের জন্য ওই ওটিপি-টি প্রয়োজন। সেটি জানানোর কিছু ক্ষণের মধ্যেই বাড়ির মালিকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে উধাও হয়ে যায় বেশ কয়েক হাজার টাকা।

গত কয়েক মাসে জমা পড়া সাইবার ক্রাইমের তথ্য বিশ্লেষণ করে সিআইডি জানাচ্ছে, এই তিন ধরনের পন্থা (মোডাস অপারেন্ডি) এখন বেশি করে ব্যবহার করছে প্রতারকেরা। ব্যাঙ্ক অফিসার বা বেসরকারি মোবাইল ফোন পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থার প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে ফোন করে টাকা হাতানোর কৌশল এখন আর কাজে আসে না। বছর খানেক আগে ইলেকট্রিক বিল বকেয়া আছে, এই মর্মে মেসেজ পাঠিয়েও টাকা হাতানোর বহু অভিযোগ জমা পড়ত। এখন সেই কৌশলও মানুষ জেনে গিয়েছে। তাই সাইবার অপরাধীরা আবিষ্কার করেছে অপরাধের ওই নতুন তিন পন্থা।

তদন্তে আরও ধরা পড়েছে, এই প্রতারণা চক্র মূলত পরিচালিত হচ্ছে উত্তর ভারতের তিনটি রাজ্যের কিছু জায়গা থেকে। সেগুলি হল রাজস্থানের ভরতপুর, পঞ্জাবের জলন্ধর এবং হরিনায়ার নুহ। আগে সাইবার অপরাধ চক্রের রাজধানী বলা হত ঝাড়খণ্ডের জামতাড়াকে। সাইবার অপরাধ বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, জামতাড়ার গ্যাং এখন অতীত। উল্টে ভরতপুরে চড়া মূল্যের বিনিময়ে রীতিমতো অফিস খুলে প্রতারণার নানা পন্থা শেখানো হচ্ছে।

সিআইডি-র এক অফিসার বলেন, ‘‘গত ছ’-সাত মাসে যে সব সাইবার চক্রের হদিস মিলেছে, তার অধিকাংশই সক্রিয় ছিল উত্তর ভারতের ওই তিন রাজ্যে। মানুষকে বোকা বানানোর নিত্যনতুন পন্থা শেখানো হয় যুবকদের।’’ এ ছাড়া, নামী রেস্তরাঁর নামে ভুয়ো ওয়েবসাইট খুলে টাকা হাতানোর চক্রও সক্রিয় হয় উৎসবের সময়ে। লিঙ্ক পাঠিয়ে খাবারের অর্ডার দিতে বলা হয়। সেই লিঙ্কে টাকা পাঠালেই তা আত্মসাৎ করা হয়। খাবার আসে না।

এই প্রেক্ষিতে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, অনলাইনে হোটেলের রুম বা রেস্তরাঁর খাবার বুক করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনে একাধিক সূত্র থেকে জেনে নেওয়া উচিত ওয়েবসাইটটি ভুয়ো কিনা। অনলাইনে কোনও জিনিসের অর্ডার বাতিল করার জন্য ফোনে ওটিপি এলেই সতর্ক থাকতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cyber Crime Crime Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE