Advertisement
E-Paper

আহ্লাদে আট জেলা, টান পড়ল তিনে

ইচ্ছা একান্তই তাঁর — স্কুল পড়ুয়াদের বিনিপয়সার সাইকেল দেবে সরকার। তাই, সরকারি অফিসারেরা ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা হিসেব কষে ঠিক করে রেখেছিলেন, কোন কোন জেলায় কত করে সাইকেল বিলি করা হবে। সব মিলিয়ে প্রায় ২৫ লক্ষ সাইকেল!

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:৩০

ইচ্ছা একান্তই তাঁর — স্কুল পড়ুয়াদের বিনিপয়সার সাইকেল দেবে সরকার।

তাই, সরকারি অফিসারেরা ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা হিসেব কষে ঠিক করে রেখেছিলেন, কোন কোন জেলায় কত করে সাইকেল বিলি করা হবে। সব মিলিয়ে প্রায় ২৫ লক্ষ সাইকেল!

সম্প্রতি আচমকাই সরকারি অফিসারদের নবান্নে ডেকে ৮টি জেলায় সাইকেলের বরাদ্দ বাড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কোনও জেলায় ৪৮ হাজার, কোনও জেলায় ৫৩ হাজার। এ ক্ষেত্রেও সিদ্ধান্ত একান্তই তাঁর।

এই ৮ জেলায় অতিরিক্ত সাইকেল দিতে গিয়ে কোপ পড়েছে ৩টি জেলার উপরে। সেই তালিকায় মুশির্দাবাদ, মালদহ ছাড়াও রয়েছে তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত পূর্ব মেদিনীপুরও। নবান্ন সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী প্রথমে জানতে চান ওই তিন জেলায় এখনও পর্যন্ত কত করে সাইকেল বিলি করা হয়েছে। সংখ্যা শুনে বলেছেন, ‘‘ঠিক আছে। যা দেওয়া হয়েছে তাতেই হবে। এখন ওর চেয়ে বেশি দিতে হবে না।’’

আর যে ৮ জেলায় বরাদ্দের চেয়ে অতিরিক্ত সাইকেল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে দুই ২৪ পরগনা, পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, হুগলি, বর্ধমান, বীরভূম ও দক্ষিণ দিনাজপুর। দক্ষিণ দিনাজপুর ছাড়া সবগুলিই দক্ষিণবঙ্গের জেলা। এই ৮ জেলা মিলে মোট ১৫২টি বিধানসভা কেন্দ্রের ১১৬ জন বিধায়কই এখন তৃণমূলের। মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ এক সূত্রের বক্তব্য, দলের শক্ত ঘাঁটি এই সব জেলায় আরও বেশি করে মনোনিবেশ করতে চান তিনি। তাই ভোটের আগে সেই ৮ জেলাকে আরও ‘খুশি খুশি’ দেখতে চান তিনি!

এই ঘটনায় বিপাকে পড়েছেন সরকারি অফিসারেরা। এই বৈষম্য নিয়ে প্রশ্ন তোলার সাহস প্রশাসনের কারও নেই। প্রশ্ন কেউ তোলেনওনি। এমনকী ‘সাইকেল আসছে’, আগে থেকে এমন খবর পেয়েও ওই তিন জেলার যে স্কুল পড়ুয়ারা এখন সাইকেল পাবে না, তাদের কী বলে সান্ত্বনা দেওয়া হবে, তাও জানতে চাওয়ার সাহস দেখাননি কেউ। অফিসারেরাই বৈঠক করে ঠিক করেছেন সাইকেল না পেয়ে কেউ প্রশ্ন তুললে বলা হবে, ‘এখন প্রথম পর্যায়ে সাইকেল দেওয়া হচ্ছে। সবাইকে দেওয়া গেল না। নির্বাচন মিটে গেলে, পরের পর্যায়ে যখন সাইকেল আসবে তখন তোমরা পাবে।’

আবার শিকে ছিঁড়ে যাওয়া ৮ জেলায় অতিরিক্ত সাইকেল কাদের দেওয়া হবে, তা নিয়েও বিস্তর সংশয় রয়েছে। তালিকা অনুযায়ী সরকারি স্কুলগুলিতে দশম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির সমস্ত ছাত্রছাত্রীর ওই সাইকেল পাওয়ার কথা ছিল। সেই বরাদ্দের উপরে আরও ৪০-৫০ হাজার করে সাইকেল তা হলে কাদের দেওয়া হবে? মাথা খাটিয়ে তাও বার করেছেন সরকারি অফিসারেরা। ঠিক হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর পছন্দের তালিকায় থাকা ওই ৮ জেলায় শুধু নবম শ্রেণির ছাত্রীদের ওই সাইকেল দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রেও উঠতে পারে বৈষম্যের প্রশ্ন। ওই ৮ জেলার নবম শ্রেণির ছাত্রেরা প্রশ্ন তুলতে পারে, তারা কেন বঞ্চিত হল? ৮ জেলার বাইরে অন্য জেলার ছাত্রীরাও একই প্রশ্ন করতে পারে? সরকারি অফিসারেরা এ ক্ষেত্রেও যুক্তি সাজিয়ে রেখেছেন। প্রশ্নকারীকে বলা হবে, ‘তুমিও সাইকেল পাবে। অপেক্ষা করো।’ নবান্নের এক কর্তার কথায়, ‘‘প্রথমে ঠিক হয়েছিল ৪০ লক্ষ সাইকেল দেব। ধরে নিন, এ বার যে ২৫ লক্ষ সাইকেল আসছে তা প্রথম পর্যায়ে। ফলে, এখন যারা পাবে না তাদের দ্বিতীয় পর্যায়ে দেওয়া হবে।’’ সম্প্রতি চেন্নাইয়ে বন্যা হওয়ায় প্রচুর সাইকেল দেরিতে আসছে। এমন ভাবে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় সাইকেল পাঠিয়ে দেওয়ার পিছনে সেটাকেও একটা কারণ বলে দেখানো হচ্ছে। তবে কোপে পড়া তিন জেলার জেলাশাসকেরা জানিয়েছেন, সাইকেলের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে এমন কোনও লিখিত নির্দেশ এখনও তাঁদের কাছে পৌঁছয়নি।

কিন্তু কেন এই বৈষম্য? নিছকই খামখেয়ালিপনা নাকি অন্য কোনও অঙ্ক কাজ করছে এর পিছনে?

রাজনৈতিক শিবিরে কারও কারও ধারণা, কিছু জেলায় ভোটের ফল নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখনও নিশ্চিত নন। কংগ্রেস একা লড়লে এক রকম। সিপিএমের সঙ্গে সমঝোতা হলে অনেকটাই বদলে যেতে পারে সেই ছবি। সেই আশঙ্কা মূলত মালদহ ও মুর্শিদাবাদ হলেও প্রশ্নচিহ্ন দেখা দিয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর নিয়ে। ওই জেলার নেতা শুভেন্দু অধিকারীকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন মমতা। বিধানসভা ভোটে তাঁকে জিতিয়ে এনে পরবর্তী মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই অবস্থায় কেন পূর্ব মেদিনীপুরে সাইকেলের উপরে কোপ পড়ল, তা নিয়ে কৌতূহল রয়েছে। আবার অধীর চৌধুরীর মুর্শিদাবাদ এবং মালদহে কংগ্রেসের যে রমরমা ছিল, তাকেও এখন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছেন শুভেন্দু। তাই কেন মালদহ, মুর্শিদাবাদ এবং পূর্ব মেদিনীপুরে কোপ, তা কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না!

cycle distribution students eight districts sunando ghosh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy