Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Cyclone Amphan

ঘর হারিয়ে নৌকোয় সংসার পেতেছেন গুরুপদ

কুলতলির ভুবনেশ্বরী পঞ্চায়েতের হালদারঘেরি এলাকায় নদীবাঁধের পাশেই ছিল গুরুপদর ঘর। বাঁধ ভেঙে ভেসে গিয়েছে মাটির সেই একচিলতে ঘর।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সমীরণ দাস
কুলতলি শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০২০ ০৩:০৭
Share: Save:

ত্রাণ, খাবার-দাবার দূরের কথা। জোটেনি এক ফালি ত্রিপলও। যে ছিল জীবিকার সঙ্গী, আপাতত সেই নৌকোতেই মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজে নিয়েছেন গুরুপদ।

নৌকো নিয়ে মাছ-কাঁকড়া ধরেন গুরুপদ ভুঁইয়া। ঘরদোর ভেসে যাওয়ায় সেই নৌকোর ছইয়ের নীচেই এখন চলছে তাঁর ঘর-গেরস্থালি। ছেলে-বৌমা, নাতি-নাতনি নিয়ে এগারোটি প্রাণী গুটিসুটি মেরে কাটিয়ে দিচ্ছেন এক খণ্ড প্লাস্টিক টাঙিয়ে। চাল-ডাল ফুটিয়ে রান্নাবান্নাও চলছে নৌকোর এক ধারে।

কুলতলির ভুবনেশ্বরী পঞ্চায়েতের হালদারঘেরি এলাকায় নদীবাঁধের পাশেই ছিল গুরুপদর ঘর। বাঁধ ভেঙে ভেসে গিয়েছে মাটির সেই একচিলতে ঘর। স্ত্রী নমিতা বলেন, ‘‘ঘরে চাল-ডাল যা ছিল, সব নোনা জলে ভিজে গিয়েছে। তা-ই খুঁজে পেতে এনে রোদে শুকিয়ে রান্না করছি। ক’দিন পরে কী খাব জানি না। পুকুর ভেসে গিয়েছে। দূরের নলকূপ থেকে খাওয়ার জল পাচ্ছি।’’

হালদারঘেরি এলাকায় এখন যে দিকে দু’চোখ যায় শুধুই জল আর জল। মাঝে মধ্যে কোনও মাটির বাড়ির ধ্বংসাবশেষটুকু জেগে। আর দূরে দূরে কিছু গাছ মাথা তুলে আছে। খেতের ফসল ডুবেছে।

আমপানের দাপটে হালদারঘেরিতে প্রায় ৫০০ মিটার নদী বাঁধ ভেঙে যায়। জল ঢুকে পড়ে সংলগ্ন গ্রাম এবং কৃষিজমিতে। ক্ষতি হয়েছে ধান, আনাজ, পান চাষে। যে ভাবে নোনা জল ঢুকেছে, তাতে আগামী বছর দু’য়েক জমিতে চাষ করা যাবে কিনা, তা নিয়ে গাঁয়ের দু’মাথা এক হলেই চলছে আলোচনা। কথাবার্তা শেষ হচ্ছে হা-হুতাশেই।

গুরুপদ জানালেন, বাড়ি তো বটেই, কিছুটা জমি-জিরেত যা ছিল, সে সবও এখন জলের তলায় হাবুডুবু খাচ্ছে। বছর পঞ্চাশের মৎস্যজীবীর আক্ষেপ, ‘‘এই ভাবে নৌকোয় কত দিন থাকতে হবে, কে জানে!’’

আরও পড়ুন: বিধ্বস্ত বহু কলেজ, পরীক্ষা হবে কী ভাবে?

প্রশাসনের তরফে এখনও কোনও সাহায্য পাননি বলে জানালেন গুরুপদ। খাবার-দাবার-ত্রিপল— মেলেনি কিছুই। নমিতা বলেন, ‘‘ভাঙা বাঁধ দেখতে নেতারা আসছেন। কিন্তু সাহায্য করা তো দূরের কথা, কেউ আমাদের দিকে ঘুরেও তাকাচ্ছেন না। কী ভাবে আছি, খোঁজও নিচ্ছেন না কেউ।’’

কুলতলি ব্লক তৃণমূল সভাপতি গোপাল মাঝি অবশ্য মানছেন, ভুবনেশ্বরী, দেউলবাড়ি-সহ বহু এলাকার অবস্থা বেশ খারাপ। তাঁর কথায়, ‘‘মানুষ খেতে পাচ্ছেন না। ঘরবাড়ি ভেসে গিয়েছে। আমি পরিস্থিতির কথা মুখ্যমন্ত্রী-সহ স্থানীয় সাংসদ— সকলকে জানিয়েছি। মুখ্যমন্ত্রী দ্রুত বাঁধ মেরামতের নির্দেশ দিয়েছেন। দুঃস্থদের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।’’ স্থানীয় যুব তৃণমূল নেতা পিন্টু মণ্ডল জানালেন, দুর্গত মানুষের জন্য ত্রিপল চাইতে ব্লক অফিসে গিয়েছিলেন। দরখাস্ত করে এসেছেন। সে ত্রিপল কবে হাতে পাবেন, জানেন না গুরুপদ। আপাতত কত রাত নৌকোর সংসারে কাটবে, তা-ও জানেন না। বললেন, ‘‘পুরনো নৌকোটা ভেঙে গিয়েছিল। ক’দিন আগে তাই এই বড় নৌকোটা বানাই। ভেবেছিলাম মাছ ধরায় সুবিধা হবে। তখন কী আর জানতাম, সব হারিয়ে এই নৌকোতেই ঠাঁই নিতে হবে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Amphan Kultali
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE