Advertisement
E-Paper

খুঁটি ধরে দু’ঘণ্টা ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলেন পুণ্যলক্ষ্মী

গোটা গ্রাম আপাতত বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো। চার দিন পরেও জোটেনি এক মুঠো চাল। ভিজে উনুন জ্বলছে না। ইট দিয়ে উনুন বানিয়ে শাক সিদ্ধ করে খাচ্ছেন অনেকে।

দিলীপ নস্কর

শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০২০ ০৩:৪৮
নতুন করে ঘর বাঁধছেন পুণ্যলক্ষ্মী। নিজস্ব চিত্র

নতুন করে ঘর বাঁধছেন পুণ্যলক্ষ্মী। নিজস্ব চিত্র

মাথার উপরের চাল উড়েছে। প্রবল ঝড়ে একটা খুঁটি প্রাণপণে ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন বৃদ্ধা। দু’ঘণ্টা সে ভাবেই কেটে যায়। ততক্ষণে বাঁধ ছাপিয়ে জল ঢুকে ডুবুডুবু অবস্থা। বৃদ্ধা পুণ্যলক্ষ্মী বলেন, ‘‘জল আরও বাড়লে তো ডুবেই মরতাম!’’

কাকদ্বীপের বিবেকানন্দ পঞ্চায়েতের গ্রাম সতীশনগর। পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে কালনাগিনী নদী। শ’খানেক পরিবারের বাস। নদীর সঙ্গেই কোনও কোনও ভাবে জড়িয়ে জীবন। কিন্তু আমপানের দাপটে সেই নদী যে এমন অচেনা হয়ে উঠবে, ভাবতে পারেনি মৎস্যজীবীদের গ্রাম। বছর সত্তরের নিতাই দাস বলেন, ‘‘আয়লা-বুলবুল-ফণী অনেক ঝড় দেখেছি। নদীর এমন ভয়ঙ্কর রূপ আগে দেখিনি। ফুঁসে ফুঁসে উঠছিল। সে কী গর্জন। মনে হচ্ছিল গিলে খাবে।’’

গোটা গ্রাম আপাতত বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো। চার দিন পরেও জোটেনি এক মুঠো চাল। ভিজে উনুন জ্বলছে না। ইট দিয়ে উনুন বানিয়ে শাক সিদ্ধ করে খাচ্ছেন অনেকে।

বৃদ্ধ জানান, ঝড়ের আগের দিনই প্রশাসন গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের শিবিরে সকলকে চলে যেতে বলেছিল। কিন্তু আগের দিন তাঁরা কেউই যাননি। কিন্তু বিকেলের দিক থেকে হুড়হুড় করে জল ঢুকতে শুরু করে গ্রামে। হাঁটু জল কিছুক্ষণের মধ্যে কোমর ছুঁল। আর ঝুঁকি নেননি গ্রামের বাসিন্দারা। কৃষ্ণা দাস, শম্ভু দাস, পার্বতী দাসরা বলেন, ‘‘ছোটদের আগে শিবিরে পৌঁছে দিই। সন্ধ্যার আগেই গ্রামে গলা-জল দাঁড়িয়ে গেল। কোনও রকমে কিছু মালপত্র সঙ্গে করে শিবিরে পৌঁছে যাই।’’

আরও পড়ুন: ভেজা চাল রোদে শুকিয়ে বাঁচার লড়াই

লকডাউনের জেরে এমনিতেই কাজ নেই। মাছ ধরার মরসুম নয় বলে গ্রামের বেশিরভাগ পুরুষ ভিন্ রাজ্যে কাজ করতে গিয়েছিলেন। আটকে পড়েছেন সেখানেই। বাড়ি আগলে রয়েছেন মহিলারা। মাঝবয়সি বিন্দুবাসিনী দাসের আবার সংসারে কেউ নেই। মঙ্গলবার গ্রামে জল ঢুকতে দেখে ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। বললেন, ‘‘ঝড় আগেও দেখেছি। পাকাবাড়ির স্কুলঘরটাও কেঁপে কেঁপে উঠছিল। মনে হচ্ছিল এই বুঝি সব উড়িয়ে নিয়ে যাবে। এত সময় ধরে ঝড় চলল, মনে হচ্ছিল আর বুঝি সকাল দেখতে পাব না।’’

পুণ্যলক্ষ্মীর স্বামী চিত্ত দাস ছিলেন ট্রলারের মাঝি। বছর দশেক আগে ট্রলারডুবিতে মৃত্যু হয় তাঁর। পাঁচ বছর আগে বড় ছেলেকেও হারিয়েছেন ট্রলারডুবিতেই। ঝড়ে বাড়ি-ঘর সবই গিয়েছে। আপাতত ছোট ছেলে-বৌমা আর নাতিকে নিয়ে অন্যের ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন। খাবার কিছু নেই। শুক্রবার ত্রাণ শিবির থেকে ফিরে চেনা গ্রামটাকে আর চিনতে পারেননি। কোনও বাড়িই অক্ষত নেই!

আরও পড়ুন: ক্ষতি আনাজের, চড়তে পারে দাম

প্রশাসন থেকে চিঁড়ে-গুড়েরও ব্যবস্থা করা হয়নি বলে অভিযোগ গ্রামবাসীদের। তাঁরা জানান, পঞ্চায়েতের লোকেরা থেকে একবার গ্রামে এসে সব দেখে গিয়েছেন। কিন্তু এক মুঠো চালও মেলেনি। ক্ষোভে ফুঁসছে গোটা গ্রাম। বাচ্চারা খিদেয় কাঁদছে। আগে থেকে মজুত করে রাখা সামান্য চিড়ে-মুড়ি ছাড়া সম্বল কিছুই নেই। পুকুর থেকে তুলে আনা শাক সিদ্ধ করে খাচ্ছেন বলে জানালেন অনেকে।

পঞ্চায়েত প্রধান বসুদেব দাস ফোনই ধরেননি। কাকদ্বীপ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি সত্যব্রত মাইতি বলেন, ‘‘ওঁরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করুন। ত্রাণের ব্যবস্থা করে দেব।’’ কাকদ্বীপের বিডিও দিব্যেন্দু সরকার বলেন, ‘‘ওঁরা এই অবস্থায় আছেন শুনে খারাপ লাগছে। ত্রাণ এসে গিয়েছে। সকলেই দ্রুত পাবেন।’’

সে সব কবে হাতে পৌঁছবে, তত দিন কী ভাবে চলবে— কিছুই জানেন না গ্রামের মানুষ।

Cyclone Amphan Cyclone
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy