Advertisement
E-Paper

Cyclone yaas: ঘোড়ামারার প্রতি কোণে লুকিয়ে বিপদ, আতঙ্ক

ঘরবাড়ি ভেসে যাওয়ায় বেশির ভাগ বাসিন্দারই এই মুহূর্তে কপর্দকহীন অবস্থা।

রবিশঙ্কর দত্ত

শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০২১ ০৫:৫৬
থইথই জলে জেগে আছে তুলসীতলা।

থইথই জলে জেগে আছে তুলসীতলা। নিজস্ব চিত্র।

ঘোড়ামারায় আটকে পড়া বাসিন্দাদের আরও দু’দফায় সরানো হল গঙ্গাসাগরের সরকারি ত্রাণ শিবিরে। জল সরে যাওয়ার অপেক্ষায় আগামী কিছুদিন শিবিরেই থাকতে হবে দ্বীপের বাসিন্দাদের।

যে মাটিতে পূর্বপুরুষের মমতা জড়িয়ে, এক রাতের ব্যবধানে তার প্রায় প্রতি ইঞ্চিতে এখন আতঙ্কের ছায়া। ঘূর্ণিঝড়, বর্ষণ আর সমুদ্রের নোনাজলের প্লাবনে সেই সাধের ঘোড়ামারার প্রায় প্রতিটি কোণে এখন বিপদ লুকিয়ে। টানা বৃষ্টি আর ঝোড়ো হাওয়া উপেক্ষা করে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত হাজার তিনেক মানুষের জন্য চিঁড়ে, মুড়ি, চাল ও রান্না করে খাওয়ার জন্য তেল পাঠানো হয়েছে। পানীয় জল পাঠানো হলেও তা যথেষ্ট নয়।

ঘরবাড়ি ভেসে যাওয়ায় বেশির ভাগ বাসিন্দারই এই মুহূর্তে কপর্দকহীন অবস্থা। সেই সঙ্গে চারপাশ জুড়ে বুকসমান যে জল ঘিরে রেখেছে তাঁদের, মরা মাছ, গবাদি পশু আর হাঁস-মুরগিতে তা ক্রমেই বিষাক্ত হতে যেতে পারে। চারপাশের জমা জল থেকে ইতিমধ্যেই দুর্গন্ধ বেরোতে শুরু করেছে। রাস্তায়, গাছের গোড়ায় কুণ্ডলী পাকিয়ে রয়েছে সাপ। তাই ঘোড়ামারায় এখনও আটকে থাকা বাসিন্দাদের সাগরদ্বীপে সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, এ দিন দুপুরে দু’টি ভেসেলে মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে কচুবেড়িয়ায়। নিম্নচাপের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত এই আধ ঘণ্টার জলপথ পেরোতে পদক্ষেপ করেছে প্রশাসন। সাগরের বিডিও সুদীপ্ত মণ্ডল জানিয়েছেন, দু’দফায় ৭৩০ জনকে সরিয়ে আনা হয়েছে গঙ্গাসাগরের বামনখোলার আশ্রয় শিবিরে। আরও কিছু মানুষ কাকদ্বীপে নিজেদের আত্মীয়দের বাড়িতে গিয়েছেন। জমা জল থেকে দূষণ আটকাতে ব্লিচিং পাউডার পাঠানো হয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

নদীর পাড় ভাঙার অভিজ্ঞতা এখানে নতুন নয়। ঘরবাড়ি নদীতে দিয়ে ঘোড়ামারার মানুষ বারবার মাথার ছাদ বদল করেছেন। কিন্তু এ বারের ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক দুর্যোগ
তাঁদের গোটা দ্বীপকে গ্রাস করেছে। তবে, কত জনকে ভিটেমাটির বন্ধন ছাড়িয়ে নেওয়া যাবে, তা নিশ্চিত নয়। স্থানীয় মিলন বিদ্যাপীঠ হাইস্কুলের কর্মী জয়দেব মাইতি বলেন, ‘‘এখন যা পরিস্থিতি, তাতে দ্বীপের গ্রামগুলি থাকার উপযুক্ত নেই। তাই আপাতত মানুষকে সাগরের নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে হচ্ছে। কেউ শিবিরে যাবেন। কেউ আত্মীয়-পরিজনের বাড়িতে যাবেন।’’

অনেকে অবশ্য এখনও নিজের মাটি ছেড়ে যেতে চাইছেন না। চুনপুরী গ্রামের তরুণ শেখ শাহজাহান কর্মসূত্রে তামিলনাড়ুতে থাকেন। তাঁর স্ত্রী সোনামণি বিবি এখন দুই মেয়েকে নিয়ে গ্রামের হাইস্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন। শ্বশুর-শাশুড়ি রয়েছেন কাছেই একটি উঁচু জায়গায়, ত্রিপলের তাঁবুর নীচে। সোনামণি গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র যেতে দ্বিধায় রয়েছেন এখনও। বললেন, ‘‘কোথায় যাব? কার ভরসায় যাব? শ্বশুর-শাশুড়ি আর দু’টো বাচ্চা মেয়েকে নিয়ে এখানেই থাকব।’’ এ দিন দুপুরে যখন এ কথা বলছেন ততক্ষণে তাঁদের কাঁচাবাড়ি ভেঙে পড়েছে। ঘরে রাখা একমাত্র সম্বল রেশনের চাল ভেসে গিয়েছে বলেই জেনেছেন তিনি।

টানা বৃষ্টি আর কটালের প্রভাবে জল আছে সর্বত্র। তবে, ঝড় না থাকায় বিভিন্ন জায়গায় আটকে থাকা লোকজন নিজেদের ঘরবাড়ির খোঁজ করতে শুরু করেছেন। কমবয়সিরা জল ভেঙেই এগিয়েছেন এ পাড়া-ও পাড়ায়। পাড়ার পর পাড়া জনশূন্য। যে সব বাড়ি থেকে জল নেমেছে, সেই জলের সঙ্গে ভিতের মাটি ধুয়ে যাওয়ায় সেগুলি বিপজ্জনক হয়ে রয়েছে। সেই জলের সঙ্গেই ভেসে গিয়েছে কাগজপত্র ও অন্যান্য জিনিস। মন্দিরতলার এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘ঘরে তো কিছু নেই। বাসনপত্র, জামাকাপড় সব শেষ। ক’টা টাকা রাখা ছিল, সে সবও শেষ।’’

তছনছ হয়ে যাওয়া গ্রামগুলিতে চোখে পড়ছে টালির চালে থাকা সোলার প্যানেল, ডিশ অ্যান্টেনা। আর বিধ্বস্ত গৃহস্থালির প্রমাণ হিসেবে জেগে আছে বাড়ির উঠোনে বাঁধানো তুলসীতলা।

Tulsi Cyclone Yaas
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy