Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
State News

এক ঘণ্টার ‘অপারেশন’, হাবড়ায় বিডিও এবং তাঁর স্ত্রীর হাত-পা বেঁধে দুঃসাহসিক ডাকাতি

পুলিশ সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটে নাগাদ বিডিও আবাসনের পাঁচিল টপকে ভিতরে ঢোকে সাত-আট জনের এক দল সশস্ত্র দুষ্কৃতী।

ডাকাতির পর লন্ডভন্ড বিডিও-র ঘর। —নিজস্ব চিত্র।

ডাকাতির পর লন্ডভন্ড বিডিও-র ঘর। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৯ ১১:৪৮
Share: Save:

রাতের অন্ধকারে বিডিও আবাসনে ঢুকে চলল দুঃসাহসিক ডাকাতি। হাবড়া-১ ব্লকের বিডিও এবং তাঁর স্ত্রীর হাত-পা বেঁধে চলল লুঠপাট। সোনার গয়না, মোবাইল, টাকাপয়সা নিয়ে চম্পট দেয় সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা। এই ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ায়। ঘটনাচক্রে, হাবড়া-১ ব্লকটি পড়ে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নিজের বিধানসভা এলাকায়। রাজ্য প্রশাসনের এক আধিকারিকের বাড়িতে এই ঘটনায় প্রশ্নের মুখে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা।

পুলিশ সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটে থেকে তিনটের মধ্যে বিডিও আবাসনের পিছনের দিকের পাঁচিল টপকে ভিতরে ঢোকে ৪-৫ জন সশস্ত্র দুষ্কৃতী। বিডিও শুভ্র নন্দী তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, প্রথমে পিছনের দিকের কোলাপসিবল গেটের দু’টি তালা ভাঙে দুষ্কৃতীরা। এর পর পিছনের দিকে দরজা ভেঙে সটান ঢুকে পড়ে ভিতরে।

তদন্তকারীদের শুভ্রবাবু জানিয়েছেন, তালা ভাঙার সময় তাঁরা টের পাননি, ঘুমোচ্ছিলেন। কিন্তু দরজা ভাঙার আওয়াজে তাঁরা জেগে ওঠেন। কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা দরজা ভেঙে ঘরের ভিতরে ঢুকে পড়ে। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, দুস্কৃতীদের হাতে দা, চপারের মতো ধারালো অস্ত্র ছিল। কোনও আগ্নেয়াস্ত্র ছিল কি না তা এখনও স্পষ্ট নয়।

তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথমেই এক দুষ্কৃতী শুভ্রবাবুর গলায় ধারাল দা ঠেকিয়ে গয়না এবং টাকা বের করতে বলে। শাসায়, চিৎকার করলে খুন করে ফেলবে বলে। তত ক্ষণে বাকি ডাকাতরা শুভ্রবাবুর স্ত্রী পৌলমীর গায়ে থাকা সনার গয়না খুলে দিতে বলে। তিনি সেই গয়না ডাকাতদের হাতে দিলে, দুষ্কৃতীরা দু’জনেরই হাত পা মুখ বেঁধে দেয়। তার পর প্রায় ১ ঘণ্টা ধরে গোটা ঘর লণ্ডভণ্ড করে। ভোর প্রায় ৪টে নাগাদ তারা চম্পট দেয়।

পুলিশ সূত্রে খবর, নগদ প্রায় ১৪-১৫ হাজার টাকা এবং কিছু সোনার গয়না নিয়ে পালিয়েছে ডাকাতরা। নিয়ে গিয়েছে ৬ টি মোবাইল ফোনও। দুষ্কৃতীদের সকলের মুখ ঢাকা ছিল বলে জানা গিয়েছে। হাবরা -১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অজিত সাহা ঘটনার খবর পেয়ে শুভ্রবাবুর সঙ্গে দেখা করেন। গোটা ঘটনার কথা তিনি বিডিওর মুখ থেকে শোনেন। পরে অজিতবাবু বলেন, ‘‘দুষ্কৃতীদের মধ্যে এক জন ছাড়া বাকি সকলেই দেহাতি হিন্দিতে কথা বলছিল। এক জন ছিল যে বাংলায় কথা বলছিল।” তিনি জানিয়েছেন, বিডিও কোয়ার্টারের পিছন দিকে সিসি ক্যামেরা রয়েছে। তাতে দুষ্কৃতীদের ছবি ধরা পড়েছে। তবে মুখ ঢাকা থাকায় চিহ্নিত করা যায়নি।

এই ঘটনার পর বিডিও আবাসনে পৌঁছেছেন হাবড়ার আইসি গৌতম মিত্র এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রূপান্তর সেনগুপ্ত।পুলিশ আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।

আরও পড়ুন: গণিতই এখন ধ্যানজ্ঞান ‘বদলে যাওয়া’ রাজীবের

আরও পড়ুন: গভীর নিম্নচাপ থেকে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হল বুলবুল, অভিমুখ পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের দিকে

তবে মাত্র কয়েক হাজার টাকার জন্য ডাকাতরা প্রশাসনের একজন কর্তার বাড়িতে হানা দিল কেন তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে তদন্তকারীদের মনে। গোটা ঘটনার পিছনে অন্য কোনও কারণ আছে কি না তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলার এক শীর্ষ পুলিশ কর্তা। ডাকাতরা টাকা-গয়না না কোনও নথির খোঁজে এসেছিল তা-ও দেখছেন পুলিশ কর্তারা।

তবে অজিতবাবুর সন্দেহ, ডাকাতির জন্যই এসেছিল দুষ্কৃতীরা। তিনি বলেন, ‘‘শুভ্রবাবু বলেছেন, দুষ্কৃতীরা ঘরে ঢুকেই তিন লাখ টাকার খোঁজ করছিল।” দুষ্কৃতীদের ওই বয়ান থেকেই অজিতবাবুর ধারণা বিডিও-র ঘরে নগদ টাকা রয়েছে এমন তথ্যের উপর ভিত্তি করেই হানা দিয়েছে তারা। তদন্তকারীদের সন্দেহ, দুষ্কৃতীরা জানত ওই বাড়ি প্রশাসনের এক কর্তার। কারণ ডাকাতরা মোবাইল নিয়ে চম্পট দেওয়ার সময়, শুভ্রবাবু দুষ্কৃতীদের বলেছিলেন যে, একটি মোবাইল সরকারি। তার পরেও ডাকাতরা সেই মোবাইল নিয়ে চম্পট দেয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE