Advertisement
১৯ মে ২০২৪
Abu Hasem Khan Chowdhury

তৃণমূলকে ‘সমর্থন’, বলেও বিতর্কের মুখে পিছু হঠলেন ডালু

মত খণ্ডন করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী ও বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান।

আবু হাসেম (ডালু) খান চৌধুরী।

আবু হাসেম (ডালু) খান চৌধুরী। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মালদহ ও কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২১ ০৬:৪৬
Share: Save:

ভোটের পরে প্রয়োজনে তৃণমূলকে সমর্থন করা উচিত বলে মন্তব্য করেও বিতর্কের মুখে পিছু হঠলেন কংগ্রেস সাংসদ আবু হাসেম (ডালু) খান চৌধুরী। প্রদেশ কংগ্রেস এবং সিপিএমের নেতৃত্ব এক সুরেই জানিয়ে দিয়েছেন, ভোটে বিজেপি ও তৃণমূলকে হারিয়ে বিকল্প শক্তির সরকার গড়ার জন্যই তাঁরা লড়াই করছেন। ভোটের পরে কাউকে সমর্থনের কথা ভাবার প্রশ্ন নেই। পরে সুর বদল করে ডালুবাবু দাবি করেছেন, তাঁর মন্তব্যের ‘ভুল ব্যাখ্যা’ করা হয়েছিল।

মালদহে কোতুয়ালি ভবনে বসে সোমবার ডালুবাবু নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতি প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘ভোটের ফল কী হবে, তা এখন বলা মুশকিল। ভোটের পরে তেমন কোনও পরিস্থিতি তৈরি হলে, তৃণমূলকেই সমর্থন করব।’’ ডালুবাবুর যুক্তি, ‘‘রাজনৈতিক দর্শনগত ভাবে তৃণমূলের সঙ্গেই আমাদের মিল রয়েছে। সাম্প্রদায়িক দলকে আমরা কখনও সমর্থন করব না।’’ তবে এ কথা যে তিনি ‘ব্যক্তিগত ভাবে’ বলছেন, তা-ও উল্লেখ করেছিলেন ডালুবাবু। যে মত খণ্ডন করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী ও বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান।

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রও মঙ্গলবার ফের স্পষ্ট করে দিয়েছেন, বিজেপি ও তৃণমূল দু’দল মিলেও যাতে সরকার গড়তে না পারে, তেমন ভাবে দু’পক্ষের শক্তি কমিয়ে দেওয়াই সংযুক্ত মোর্চার লক্ষ্য। বারাসতে দলীয় বৈঠকের পরে সূর্যবাবু বলেন, ‘‘আমাদের লড়াই দুই শক্তির বিরুদ্ধে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কে দিয়ে বিজেপিকে ঠেকানো যাবে না। আমরাই ঠেকাব। তৃণমূলের হাত ধরার প্রশ্নই ওঠে না।’’ ভোটের পরে ত্রিশঙ্কু পরিস্থিতি হলে তাঁরা কী করবেন, এই প্রশ্নে সিপিএম নেতারা পাল্টা প্রশ্ন তুলছেন, বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে কী ‘খেলা’ হবে, তা কী কেউ জানে! সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি ইতিমধ্যেই বলেছেন, বিজেপিকে ঠেকাতে গেলে তৃণমূলকেও পরাস্ত করতে হবে। তাঁদের মতে, এক দলকে ছেড়ে শুধু অন্য দলের কথা বলা বামেদে পক্ষে ‘আত্মঘাতী’ হবে।

দলীয় সাংসদের মন্তব্য প্রসঙ্গে এ দিন অধীরবাবু বলেন, ‘‘ডালুবাবু কোন প্রশ্নের উত্তরে কী বলেছেন, জানি না। তবে তৃণমূলের লোকজন যে ভাবে লাইন দিয়ে বিজেপিতে যাচ্ছে, তাতে তৃণমূলকে ভোট দিয়ে লাভ কী? ভোটের পরেও তো একই জিনিস ঘটতে পারে। বাম-কংগ্রেসকে নিয়ে তৃতীয় শক্তি বাংলায় সরকার গড়ার লক্ষ্যে এগোচ্ছে, কাউকে মুখ্যমন্ত্রী করার জন্য নয়।’’ বিরোধী দলনেতা মান্নানও স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, ভোটের আগে ‘বিভ্রান্তি’ সৃষ্টি করে লাভ নেই। মান্নানের বক্তব্য, ‘‘কয়েক দিন আগেই প্রদেশ সভাপতি অধীর এবং পরিষদীয় দলনেতা হিসেবে আমি এআইসিসি নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেছি, স্বয়ং সনিয়া গাঁধীর সঙ্গেও বৈঠক হয়েছে। কোথাও কখনও এমন কথা হয়নি। বিজেপি ও তৃণমূলকে পরাস্ত করার জন্যই সংযুক্ত মোর্চা লড়াই করছে। সরকার গড়বে সংযুক্ত মোর্চা, অন্য কাউকে সমর্থন করার প্রশ্ন নেই।’’

প্রদেশ কংগ্রেস এবং সিপিএম নেতৃত্বের ভিন্ন মতের পরে এ দিন বিকালে ডালুবাবু বিবৃতি দিয়ে দাবি করেন, তাঁর বক্তব্য খাপছাড়া ভাবে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘কংগ্রেস, বাম, আইএসএফের মতো গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ দল নিয়ে সংযুক্ত মোর্চা গঠন করা হয়েছে। মালদহের ১২টি আসনেই সংযুক্ত মোর্চা জয়ী হবে।’’

ডালুবাবুর সুর বদলের আগে এ দিন আলিমুদ্দিনে সিপিএমের পলিটবুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম এই প্রশ্নে বলেছিলেন, ‘‘কংগ্রেস তো ব্যক্তিগত মতে চলে না। প্রদেশ কংগ্রেস বা এআইসিসি নেতৃত্ব বলতে পারবেন। তবে ডালুবাবু আগে চিট ফান্ড নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিলেন, পরে বলেছিলেন ওটা ঠিক হয়নি, তাঁকে দিয়ে লিখিয়ে নেওয়া হয়েছিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE