অনিল বিশ্বাস
দেশের বাড়িতে এলে যে ঘরটায় তিনি বসতেন, সেটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। ভাঙাচোরা পাঁচিলটা ঢেকে রেখেছে সবুজ লতা। পাশেই মুদির দোকান। সিপিএমের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক, প্রয়াত অনিল বিশ্বাসের নাতবৌ রূপা বিশ্বাস সেটি চালান। সেই দোকানের সামনে দাঁড়িয়েই তিনি বলে দিলেন, “হ্যাঁ, আমি বিজেপিকে ভোট দিই।”
নদিয়ার করিমপুরে যে গ্রামের ভিটেয় অনিল বিশ্বাসের জন্ম, সেই দাঁড়েরমাঠ এখন বিজেপির চারণভূমি। দাঁড়েরমাঠ হাইস্কুলের পরিচালন সমিতির টানা ১৫ বছরের সম্পাদক অভিমন্যু বিশ্বাস ছিলেন কট্টর সিপিএম। অনিলের পৈতৃক ভিটের সামনেই তাঁর ছেলে অনিমেষের কাপড়ের দোকান। তিনিও এখন বিজেপি করছেন। কেন? অনিমেষের সোজাসাপ্টা জবাব, “সিপিএম আছে নাকি যে করব? নেতারা অনেকেই তৃণমূলে। আমরা কী করব? তৃণমূলের হাত থেকে তো বাঁচতে হবে!” সেই রেশ ধরেই রূপা বলেন, “বরাবর সিপিএমটাই করতাম। কিন্তু আগের বার পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থীই দিতে পারল না। তা হলে কাকে ভোট দেব? সেই প্রথম বিজেপিকে ভোট দেওয়া।”
দাঁড়েরমাঠ যে পঞ্চায়েত এলাকায় পড়ে, সেই শিকারপুর এখন বিজেপির দখলে। রাজ্যে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরেও ২০১৩-র পঞ্চায়েত ভোটে সংখ্যাধিক্য ধরে রেখেছিল সিপিএম। কিন্তু পাঁচ বছর পরে তারা কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এ বার করিমপুর বিধানসভার উপনির্বাচনেও ছবিটা বিন্দুমাত্র পাল্টায়নি। গত মে মাসে লোকসভা নির্বাচনে দাঁড়েরমাঠ গ্রামের বুথে (২৩২ নম্বর) মোটে ৫১টি ভোট পেয়েছিল সিপিএম, আর এ বার জোট পেয়েছে সাকুল্যে ৩৩টি ভোট। করিমপুরের শেষ সিপিএম বিধায়ক সমরেন্দ্রনাথ ঘোষও শিকারপুরের লোক। ২০১৬ সালে মহুয়া মৈত্রের কাছে হেরে এখন তিনিও বিজেপিতে।
একটা সময়ের পরে অনিলেরও যে গ্রামের সঙ্গে বিশেষ যোগাযোগ ছিল, তা নয়। স্কুলজীবন করিমপুরে কাটিয়ে তিনি ভর্তি হন কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজে। কলেজের পাট চুকিয়ে চলে যান কলকাতায়। অনিলের মেয়ে অজন্তা বিশ্বাসও বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে ওঁদের কোনও যোগাযোগ নেই।’’
অনিলের বড়দা অশ্বিনী বিশ্বাসেরই নাতবৌ রূপা। গত বছর হৃদ্রোগে মারা যান নাতি অশোক। রূপার দাবি, অশোক ও তাঁর বাবা অভয় বিশ্বাসও বিজেপির দিকে ঝুঁকেছিলেন। লালঝান্ডা ধরে রেখেছেন এক মাত্র অনিলের মেজদা অজিত বিশ্বাসের ছেলে অনুপ। তবে তিনি থাকেন করিমপুরে। এক সময়ে সিপিএমের জোনাল বা এরিয়া কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। এখন সব পদ থেকে অব্যাহতি নিয়ে সাধারণ পার্টি সদস্য। আগের সেই সক্রিয়তাও আর নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy