Advertisement
E-Paper

ভরসা ফিরে এলেও রয়ে গেল সংশয়

বিনয়কে ঘিরে যাঁরা আশাবাদী, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন দিব্যা রানা, তিতলি খাতি, মুনিয়া প্রধানের মতো কলেজ পড়ুয়াদের অনেকেই। যাঁরা মোর্চার পতাকাতলে না থাকলেও গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে সহমত।

কিশোর সাহা

শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৭ ০৪:১৯
দার্জিলিঙের সভায় বিনয়। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

দার্জিলিঙের সভায় বিনয়। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

টানা বন্‌ধের ক্লান্তি, বিষণ্ণতা কাটিয়ে অনেক দিন পরে যেন খানিকটা তরতাজা হল দার্জিলিংয়ের জনজীবন। সৌজন্য, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার আলোচনাপন্থী নেতা বিনয় তামাঙ্গের ঘোষণা।

তা হল, ‘আন্দোলন হলেও আর বন্‌ধ নয় পাহাড়ে।’ যে ঘোষণার প্রভাব পড়ল বাণিজ্য শহর শিলিগুড়িতেও। তাই দার্জিলিঙের ম্যাল লাগোয়া ‘কফি-শপ’ থেকে শিলিগুড়ির ‘সিসিডি‘, কার্শিয়াং ট্যুরিস্ট লজের মোমোর কারিগর থেকে সিটি সেন্টারের কুলপি বিক্রেতা, শনিবার সর্বত্রই আলোচনার বিষয়, পাহাড় কি সত্যিই বন্‌ধের রাজনীতি থেকে সরবে! তাতে সিংহভাগ আশাবাদী। তবে পাহাড়-সমতলের অনেকের সংশয় কিন্তু বেশ জোরালো।

বিনয়কে ঘিরে যাঁরা আশাবাদী, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন দিব্যা রানা, তিতলি খাতি, মুনিয়া প্রধানের মতো কলেজ পড়ুয়াদের অনেকেই। যাঁরা মোর্চার পতাকাতলে না থাকলেও গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে সহমত। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তোলার চেষ্টা করেন। বেঙ্গালুরুর বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়ুয়া দিব্যা পুজোর ছুটিতে বাড়িতে এসেছিলেন। তিনি ম্যাল চৌরাস্তার নামী কফি শপে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন। দিব্যা, তিতলিরা বললেন, ‘‘গোর্খাল্যান্ড চাই। তা বলে মাসের পর মাস দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতে চাই না। মূলস্রোতে থেকেই শান্তিপূর্ণ ভাবে দাবি পেশ করে যেতে হবে। তা বিনয় ‘দাজু’ (নেপালিতে দাদাকে দাজু বলা হয়) ঠিকঠাক করতে পারবেন বলে মনে হচ্ছে।’’ দিল্লিতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পড়ুয়া মুনিয়ার সংযোজন, ‘‘কাজটা কঠিন। কিন্তু, সঙ্গে রাজ্য সরকার পাশে থাকায় চাইলে বিনয় রাতারাতি অনেক জনকল্যাণের কাজ করতে পারবেন। তবে টাকাটা নেতা-ঠিকাদার মিলে বাটোয়ারা করলে তা হবে দুঃখের।’’

দার্জিলিঙের হোটেল মালিক, ট্যুর অপারেটর, গাড়ি চালক কিংবা ফুটপাতের আনাজ ব্যবসায়ীরাও বন্‌ধ হবে না শুনে কিছুটা স্বস্তিতে। কিন্তু, ধনবাহাদুর তামাঙ্গ, মায়া তামাঙ্গের মতো ষাটোর্ধ্ব আনাজ ব্যবসায়ীদের দুশ্চিন্তা অন্যত্র। ধনবাহাদুর বলেন, ‘‘সে তো একবার গুরুঙ্গও আর বন্‌ধ হবে না বলেছিলেন। পরে দেখা গেল বন্‌ধে সকলকে টেক্কা দিয়েছেন। যে হারে মোর্চার গুরুঙ্গপন্থীরা পাশে দাঁড়াচ্ছে তাতে চেয়ারে বসে বিনয়ের মাথা ঘুরে গেলে কী হবে!’’

জিএনএলএফ, গোর্খা লিগ, জন আন্দোলন পার্টির নেতা-কর্মীরা অবশ্য গুরুঙ্গ অনুগামী বনাম বিনয়-শিবিরের মধ্যো গোলমালের আশঙ্কা উড়িয়ে দিতে পারছেন না। জিএনএলএফের কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক নেতা মনে করেন, গুরুঙ্গ অত সহজে মাঠ ছেড়ে দেবেন না। বিনয় শিবিরের নেতা অনীত থাপা অবশ্য বলেছেন, ‘‘মাঠে নেমে খেলার নামে মারপিট, গোলমাল, হিংসা ছড়ালে পাহাড়বাসী হলুদ কার্ড দেখাবেনই। আমরা দলের সকলকে প্ররোচনায় পা দিতে নিষেধ করেছি।’’ দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার অখিলেশ চতুর্বেদী কোথাও গণ্ডগোলের চেষ্টা দেখলেই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে এদিনও আশ্বাস দিয়েছেন।

তবুও সুবাস ঘিসিঙ্গ থেকে বিমল গুরুঙ্গ, দীর্ঘ যাত্রা পথে কত রক্তক্ষয়, ব্যবসা, বাণিজ্য, পড়াশোনায় কি বিপুল ক্ষতি হয়েছে সেটা প্রবীণরা জানেন। তাই কার্শিয়াঙের মোমোর কারিগর বা কালিম্পঙের ডম্বর চকের কিউরিও শপের মালিকের সংশয় কিছুটা রয়েই গিয়েছে। শিলিগুড়ির হোটেল মালিক বাবলা ঘোষ বললেন, ‘‘পাহাড় ছন্দে ফিরবে। কিন্তু, মোর্চার দুই শিবিরের মধ্যে গোলমাল চললে ছন্দপতনের আশঙ্কা থেকেই যায়।।’’

শিলিগুড়ি বিনয় তামাঙ্গ Binay Tamang Darjeeling GJM
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy