নারায়ণী দেবী। —নিজস্ব চিত্র
এলাকার সবাই জানতেন ছোট মেয়ের কাছে পাটনাতে ভালই আছেন নারায়ণী দাস। কোচবিহারের মাথাভাঙা পুরসভার ন’নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ছিলেন তিনি।
প্রায় বছর খানেক আগে প্রতিবেশীরা জানতে পারেন বার্ধক্য জনিত কারণে মৃত্যু হয়েছে প্রায় সত্তর ছুঁই ছুঁই বৃদ্ধার। পাটনাতেই শেষকৃত্য সম্পন্ন করেছে বৃদ্ধার মেয়ে। খবর পেয়ে বাকি দুই মেয়েও রীতি অনুযায়ী শ্রাদ্ধ করেন মায়ের।
এক বছর পর সেই নারায়ণীই ফিরে এসেছেন। যদিও ‘মৃত’ মা মেজ মেয়ের বাড়িতে জায়গা পাননি। জায়গা হয়েছে নদীর চরে। সেখানে স্থানীয় বাসিন্দারাই তৈরি করে দিয়েছেন একটি মাথা গোঁজার ঝুপড়ি।
কিন্তু কী ভাবে এমনটা হল?
নারায়ণীর তিন মেয়ে। বড় দুই মেয়ের বিয়ে দেওয়ার পর ছোট মেয়ের সঙ্গেই থাকতেন নারায়ণী। এরপর ছোট মেয়ের বিয়ের পালা। নারায়ণীর পাশের বাড়িতেই থাকেন আরতি বর্মন। তিনি বলেন, “বছর আড়াই আগে পাটনায় ছোট মেয়ের বিয়ে দেন। তার কয়েকমাস পরেই ছোট মেয়ে বৃদ্ধার জমি জমা, ভিটে বাড়ি বিক্রি করে নিয়ে যায় পাটনায়। তার কিছু মাস পরেই আমরা জানতে পারি ওঁর মৃত্যু হয়েছে।”
আরও পড়ুন: শ্মশানে শেষ শয্যায় মৃত মা! সেলফি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়াল ছেলে
মাথাভাঙা পুরসভার ন’নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বিশ্বজিৎ দে বলেন, “হঠাৎ একদিন দেখি ওই বৃদ্ধা রাস্তায় বসে রয়েছেন। তাঁকে দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। তাঁকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম তিনি মেজ মেয়ের কাছে এসেছিলেন। সেই মেয়ে তাঁকে ঘরে জায়গা দিতে রাজি হয়নি। তাই তাঁর জায়গা হয়েছে রাস্তায়।”
অশীতিপর ওই বৃদ্ধার কাছ থেকে এর পর আসল ঘটনা জানতে পারেন এলাকার মানুষ। বৃদ্ধা বলেন,“ছোট মেয়ে পাটনায় নিয়ে যাওয়ার পর থেকেই আমার উপর অত্যাচার শুরু করে। ততদিনে জমি বাড়ি বিক্রির সব টাকা মেয়ের কাছে। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে পাটনাতে লোকের বাড়িতে কাজ করা শুরু করি। কিন্তু শরীর দিয়ে পারছিলাম না। এর পর মেয়ে-জামাইকে হাতে পায়ে ধরি। বলি বাড়ি যাব।”
আরও পডু়ন: ‘গুন্ডা ট্যাক্স’ না দেওয়ায় হামলা কড়েয়ার নির্মাণ সংস্থায়, ভাঙচুর, মারধর কর্মীদের
বৃদ্ধাকে মেয়ে-জামাই পাটনা থেকে শিলিগুড়ির বাসে তুলে দেয়। শিলিগুড়িতে নেমে মাথাভাঙার বাসে ওঠেন তিনি। তাঁর কাছে ভাড়া দেওয়ার পয়সাও ছিল না। কন্ডাক্টর মাথাভাঙা বাস স্ট্যান্ডে বৃদ্ধাকে কয়েকদিন আগে নামিয়ে দেন। তার পর খুঁজে খুঁজে মেজ মেয়ের বাড়ি যান তিনি। সেখানেও জায়গা না পেয়ে রাস্তায়। যদিও প্রতিবেশিরা বলেন, “ নারায়ণীর যা সম্পত্তি ছিল তা থাকলে উনি বাকি জীবন যথেষ্ট সচ্ছল ভাবে কাটাতে পারতেন। কারওর মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হত না।
বিশ্বজিৎ বলেন, “এর পর আমরা সবাই মিলে বৃদ্ধাকে স্থানীয় শুতুঙ্গা নদীর চরে একটি ছোট ঝুপড়ি তৈরি করে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।” তিনি দাবি করেন যাতে পুরসভা বা প্রশাসন বৃদ্ধার থাকা খাওয়ার কোনও ব্যবস্থা করেন।
মালদহ, দুই দিনাজপুর, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কালিম্পং সহ উত্তরবঙ্গের খবর, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা খবর পড়ুন আমাদের রাজ্য বিভাগে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy