Advertisement
E-Paper

দক্ষিণবঙ্গে যেন আর এক চম্বল

জেলায় যখনই অপরাধ হয়েছে, পুলিশ প্রশাসন ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। কখনও চুঁচুড়ার রবীন্দ্রনগরে সাতসকালে ভরা বাজারে খুন হয়েছেন ব্যবসায়ী, কখনও খুন হয়েছেন নিরীহ টোটোচালক।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:২৩
শেষযাত্রায়: মনোজ উপাধ্যায়ের দেহ নিয়ে শহর পরিক্রমা দলীয় কর্মীদের। ছবি: তাপস ঘোষ।

শেষযাত্রায়: মনোজ উপাধ্যায়ের দেহ নিয়ে শহর পরিক্রমা দলীয় কর্মীদের। ছবি: তাপস ঘোষ।

রুক্ষ প্রান্তরের বিভীষিকা এখানে নেই। তবু, দিন দিন ‘চম্বল’ হয়ে উঠছে কলকাতার প্রতিবেশী হুগলি!

প্রতিহিংসা, প্রতিশোধ, খুনের পর খুন, ডাকাতি, বোমাবাজি— বছরের গোড়া থেকেই দুষ্কৃতী-তাণ্ডবে বারবার খবরের শিরোনামে এসেছে হুগলি শিল্পাঞ্চলের নানা এলাকা। বছরের শেষ পর্বে এসেও সেই ট্র্যাডিশন পাল্টাল না। মঙ্গলবার রাতে বাড়ির কাছেই দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হয়ে গেলেন ভদ্রেশ্বরের পুরপ্রধান মনোজ উপাধ্যায়।

জেলায় যখনই অপরাধ হয়েছে, পুলিশ প্রশাসন ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। কখনও চুঁচুড়ার রবীন্দ্রনগরে সাতসকালে ভরা বাজারে খুন হয়েছেন ব্যবসায়ী, কখনও খুন হয়েছেন নিরীহ টোটোচালক। বলাগড়ে রাস্তায় মধ্যে ‘গ্যাং ওয়ার’-এরও সাক্ষী হয়েছে এই জেলা। দুষ্কতীদের বাড়বাড়ন্ত রুখতে বছরের মাঝামাঝি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশমতো শিল্পাঞ্চলের ন’টি থানাকে নিয়ে গড়া হয়েছে চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেট। কিন্তু অপরাধে লাগাম পড়ল কই? মনোজবাবু খুনের পরে তাঁদের নিরাপত্তা নিয়েও চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন শাসকদলের অনেক নেতাই। ফের প্রশ্ন উঠছে কমিশনারেটের ভূমিকা নিয়ে।

হতাশার সুর শোনা গিয়েছে চন্দননগর কমিশনারেটের এক কর্তার গলাতেও। তিনি বলেন, ‘‘রমেশ মাহাতো, নেপু গিরি, হুলো-কেলোর মতো বড় বড় দুষ্কৃতীরা সকলে জেলে আছে। কিন্তু পুলিশের খাতায় নাম নেই, এমন অল্পবয়স্ক ছেলেদের হাতেও বন্দুক চলে আসছে। কী করে অপরাধ রোখা যাবে? আর এ সবের পিছনে রাজনৈতিক নেতাদের প্রশ্রয় রয়েছে।’’

গঙ্গার পশ্চিম পাড় বরাবর হুগলি শিল্পাঞ্চল জুড়ে কয়েক দশক ধরেই দুষ্কৃতীদের রমরমা চলছে। চলতি বছরে তা আরও বেড়েছে। এক সময়ে এই শিল্পাঞ্চল দাপিয়ে বেরিয়েছে হুব্বা শ্যামল নামে এক দুষ্কৃতী। বেশ কয়েক বছর আগে সে খুন হয়। কিন্তু জেলার অপরাধ জগতে ‘সাপ্লাই লাইন’ থেমে থাকেনি। হুব্বার ডান হাত রমেশ মাহাতো এখন জেলে বন্দি থেকেও শাগরেদদের মাধ্যমে ‘রাজত্ব’ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ। পুলিশের একাংশ মানছে, শ্রীরামপুরের হুলো-কেলো বা চন্দননগরের কাশী, চুঁচুড়ার সঞ্জিত-মানিকের দলবলের দাপটে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত।

এক সময়ে শিল্পাঞ্চলে বন্ধ কারখানার মালপত্রই ছিল এই সব দুষ্কৃতীর নিশানা। কিন্তু এখন তাদের নিশানা বদলে গিয়েছে। নগরায়ণের দাপটে দুষ্কৃতীরা এখন দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে বা দিল্লি রোডের দু’ধারের এবং ডানকুনি থেকে উত্তরপাড়া বা চন্দননগরে জমির কারবারে নেমে পড়েছে। প্রোমোটারির জন্য পুকুর বোজানো বা পুরনো বাড়ির দখল নিয়ে জমি হাতিয়ে নেওয়ার খেলাতেও দুষ্কৃতীরা পুরোদমে নেমেছে বলে অভিযোগ।

গত কয়েক মাসে শিল্পাঞ্চলে যত অপরাধ হয়েছে, তার মধ্যে এখনও পর্যন্ত ব্যান্ডেলের বৃদ্ধা সুলেখা মুখোপাধ্যায় খুনের তদন্তেই সবচেয়ে বেশি সাফল্য পেয়েছে পুলিশ।
ধরা পড়ে পরিচারিকা-সহ তিন জন। কিন্তু এখনও অনেক মামলাতেই পুলিশ অন্ধকারে। তা নিয়ে ক্ষোভও কম নয়।

বুধবার ভদ্রেশ্বর পুরভবনে যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতেই পুলিশের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা। বিক্ষোভে সামিল রাজীব দুবে নামে এক তৃণমূল কর্মীর কথায়, ‘‘দাদা (মনোজ উপাধ্যায়) আজ নেই বলে আমরা পুলিশের বিরুদ্ধে বলছি ঠিকই। তবে এটাও ঠিক, আমাদের দলের অনেক নেতা দুষ্কৃতীদের সঙ্গে জড়িয়ে পুলিশকে নিষ্ক্রিয় করে রেখেছে। ভদ্রেশ্বর-চাঁপদানি এলাকায় ছোট ছোট ছেলেদের হাতেও এখন বন্দুক ঘুরছে।’’

Chambal Hoogly চম্বল হুগলি
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy