Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
State news

নেশা ছাড়ানোর ওষুধেই দেদার নেশা চলছে গ্রামবাংলায়

গোয়েন্দাদের সন্দেহ, খালি সীমান্তবর্তী জেলা নয়, ছড়িয়েছে কলকাতা এবং আশেপাশেও। আইনের মোড়কে চলা এই মাদক চক্রের পিছনের মাথা কারা, তা নিয়ে এখনও অন্ধকারে নারকোটিক কন্ট্রোল ব্যুরোর (এনসিবি) গোয়েন্দারা।

সিজার মণ্ডল
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৮ ১৬:১২
Share: Save:

মাদকের নেশা ছাড়ানোর ওষুধই রমরমিয়ে বাজারে বিকোচ্ছে নেশার জন্য। মাত্র একশ টাকা খরচ করলেই দিনভর মৌতাত। পুলিশের ঝক্কিও নেই।

মালদহ, মুর্শিদাবাদের গ্রামে গ্রামে কয়েক মাসেই ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে নেশার এই নয়া ‘দাওয়াই’। গোয়েন্দাদের সন্দেহ, খালি সীমান্তবর্তী জেলা নয়, ছড়িয়েছে কলকাতা এবং আশেপাশেও। আইনের মোড়কে চলা এই মাদক চক্রের পিছনের মাথা কারা, তা নিয়ে এখনও অন্ধকারে নারকোটিক কন্ট্রোল ব্যুরোর (এনসিবি) গোয়েন্দারা।

পোষাকি নাম বুপরেনরফাইন। খোলা বাজারে এই ওষুধ বিক্রি নিষিদ্ধ। কেবল মাত্র সরকারি হাসপাতাল বা নেশা মুক্তি কেন্দ্রে চিকিত্সার জন্য পাঠানো হয় এই ওষুধ। অথচ সেই ইঞ্জেকশনের অ্যাম্পল লালগোলা, জঙ্গিপুর বা সুজাপুরের প্রত্যন্ত গ্রামে অনায়াসে মেলে। প্রতি গ্রামেই আছেন কোনও না কোনও হাতুড়ে, আর তাঁদের কাছেই মজুত এই নিষিদ্ধ মাদক।

আরও পড়ুন: মহিলাদের দিয়ে মাদক বিক্রির চক্র, মাথারা আড়ালেই

শুক্রবার এনসিবি-র গোয়েন্দারা মুর্শিদাবাদে লালগোলার বাজিপুর-রাধাকান্তপুর থেকে রেজাউল করিম নামে এক হাতুড়েকে গ্রেফতার করেন। তাকে নিয়ে রবিউল নামে আরও এক হাতুড়ের বাড়িতে হানা দেন গোয়েন্দারা। রবিউল পালিয়ে গেলেও উদ্ধার হয় বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির তৈরি প্রায় চোদ্দশ অ্যাম্পল বুপরেনরফাইন। লুপিন বা কুপারের মত নামি কোম্পানির ওষুধও আছে উদ্ধার হওয়া অ্যাম্পলের মধ্যে। প্রতিটি প্যাকেটের গায়ে লেখা— সরকারি হাসপাতাল বা নেশা মুক্তি কেন্দ্রে সরবরাহর জন্য নির্দিষ্ট।

ধৃত রেজাউল করিম

জেরায় রেজাউল জানিয়েছে, গত কয়েক মাস ধরে ক্রমাগত ধরপাকড়ের জন্য হেরোইনের জোগান কমে গিয়েছে। পাল্লা দিয়ে দামও বেড়েছে। খুচরো বাজারে যে হেরোইনের পুরিয়ার দাম আগে ছিল পাঁচশ-ছ’শ টাকা, সেই পুরিয়ার দামই বেড়ে দ্বিগুণ। রেজাউলের দাবি, হেরোইনের জোগান কমার সঙ্গে সঙ্গে কয়েক মাস আগে এই মাদক ইঞ্জেকশন বাজারে আসে। প্রতিটি অ্যাম্পলের দাম ১৪ টাকা হলেও কালোবাজারে রেজাউল কিনত ২৫ টাকা প্রতি অ্যাম্পল। প্রতি অ্যাম্পলে থাকে দু’ই মিলিগ্রাম ওষুধ। “আফিম বা হেরোইনের নেশা ছাড়াতে, নেশারুদের এই ওষুধ দেন চিকিৎসকরা। সেই ওষুধই নেশা করার জন্য ব্যবহার করছে এখানকার মানুষ। রেজাউলের দাবি, এক একটা অ্যাম্পল দিয়ে তিনজনকে নেশার ইঞ্জেকশন দিত সে” — বলেন এনসিবি-র এক গোয়েন্দা। ধৃতের দাবি, মালদহর সুজাপুর থেকে সে এই নেশার ইঞ্জেকশন কিনত।

আরও পড়ুন: দুবাই, নাশিক হয়ে শহরের কলেজে মাদক

কিন্তু সরকারি হাসপাতালে সরবরাহ করার ওষুধ মাদক কারবারিদের কাছে কী ভাবে পৌঁছচ্ছে?

সরকারি হাসপাতালের ভাঁড়ার থেকেই এক শ্রেণির কর্মীর যোগসাজশে চোরাপথে এই ওষুধ পৌঁছচ্ছে মাদক কারবারিদের কাছে, সন্দেহ গোয়েন্দাদের। আবার নামি কোম্পানির ওষুধ জাল করা হচ্ছে, এমন সম্ভবনাও উড়িয়ে দিতে পারছেন না তাঁরা। “কিছুদিন আগেই এই রকম ইঞ্জেকশন উদ্ধার করার পর, উত্তরাখণ্ডের উৎপাদনকারী কোম্পানির কাছে জানতে চেয়েছিলাম কারা ওই ওষুধ কিনেছিল। তাঁরা জানিয়েছে ওই ব্যাচ নম্বরের কোনও ওষুধ আদৌ তারা তৈরি করেনি” — জানান এক শীর্ষ এনসিবি কর্তা। দু’টি সম্ভবনার কথা মাথায় রেখেই চক্রের মাথাদের হন্যে হয়ে খুঁজছেন গোয়েন্দারা। এনসিবি-র আঞ্চলিক অধিকর্তা দিলীপ শ্রীবাস্তব স্বীকার করেন যে এই মাদক যে ভাবে ছড়াচ্ছে তা রীতিমত উদ্বেগের। তিনি বলেন— “আমরা ওষুধ কোম্পানিগুলিকে চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছি, কাদের এই ওষুধ তারা বিক্রি করেছিলেন। অন্য দিকে ধৃত রেজাউলকে জেরা করে চক্রের বাকি সদস্যদের হদিশ পাওয়ার চেষ্টা চলছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE