ফিরে এসেছে সেই কিশোরী। —নিজস্ব চিত্র।
দিঘায় তরুণীর দেহ উদ্ধারের ঘটনায় নয়া মোড়। এত দিন ধরে জানা যাচ্ছিল, ওই দেহ দাসপুরের ধানখালের নিখোঁজ তরুণী মাম্পি দোলইয়ের। দেহটি তাঁদের মেয়ের বলে জানিয়েছিল মাম্পির বাবা-মা। এমনকী, দেহটির সৎকারও হয়ে গিয়েছে। এরই মধ্যে মঙ্গলবার রাতে ভিআইপি রোড সংলগ্ন কৈখালি থেকে নিখোঁজ মাম্পিকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ। এই খবর এলাকায় চাউর হতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। সঙ্গে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও।
যদিও পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের দাবি, “দিঘায় উদ্ধার হওয়া তরুণী যে মাম্পি নয়, তা নিয়ে আমরা নিশ্চিত ছিলাম। কিন্তু মেয়েটির পরিবার যদি তাকে শনাক্ত করে, আমাদের কিছু বলার নেই। তবে আমরা তদন্তে ইতি টানিনি। উদ্ধার করা হয়েছে মাম্পিকে। তাঁকে জীবিত অবস্থায় বাবা-মার হাতে তুলে দিতে পেরে ভাল লাগছে।’’
বুধবার মাম্পিকে ঘাটাল আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁকে মেদিনীপুর হোমে পাঠানোর নির্দেশ দেন। অন্য দিকে, মাম্পিকে লুকিয়ে রাখার অভিযোগে টুম্পা এবং মাম্পির প্রেমিক বাচ্চু আলি-সহ চার জনকে গ্রেফতার করে দাসপুর থানার পুলিশ। উল্লেখ্য, টুম্পা পাল এখন জেল হেফাজতে রয়েছেন। আর বাকি তিন অভিযুক্তকে বিচারক ১৪ দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
কিন্তু, খটকা থেকে যাচ্ছে বেশ কয়েকটি জায়গায়।
আরও পড়ুন: বন্যা কি ম্যান-মেড, তুঙ্গে তরজা
জানা গিয়েছে, দিঘার ঝাউবন থেকে উদ্ধার হওয়া মৃত তরুণীর শারীরিক গঠনের সঙ্গে মাম্পির কিছু তফাৎ রয়েছে। পুলিশের একটি সূত্রের খবর, মৃত তরুণীর বয়স আনুমানিক ২২। স্বাস্থ্য ভাল, উচ্চতাও বেশি। অন্য দিকে, মাম্পির বয়স ১৫, ছিমছাম চেহারা। তা সত্ত্বেও মাম্পির বাবা-সহ আত্মীয়েরা দেহটি চিনতে ভুল করলেন কী করে, উঠছে সেই প্রশ্নও। দ্বিতীয় খটকা, কোনও অজ্ঞাতপরিচয়ের দেহ উদ্ধার হলে কেউ দাবি করতেই পারেন সেটি তাঁর পরিচিতর। কিন্তু, তার সপক্ষে পুলিশকে বেশ কিছু তথ্য প্রমাণ দিতে হয়। নিয়ম হল, এই জাতীয় মৃতদেহের ছবি তুলে বিবরণ-সহ তা রাজ্যের বিভিন্ন থানায় পাঠাতে হয়। অপেক্ষা করতে হয় বেশ কিছু দিন। ভিসেরা, নেল ক্র্যাপিং, পিএম ব্লাড সংগ্রহ করে রাখতে হয়। প্রশ্ন, এই সব নিয়ম কি আদৌ মানা হয়েছিল? যদি মানা হয়েই থাকে, তা হলে কোনও ফাঁক নজরে পড়ল না?
পুলিশ সূত্রের খবর, গত ৮ অগস্ট দাসপুরের ধানখাল থেকে মাম্পি দোলই নিখোঁজ হন। মাম্পিকে কাজের প্রলোভন দেখিয়ে পাচারের অভিযোগ জানান তার বাবা সুনীল দোলই। অভিযোগের তির ছিল টুম্পা পাল নামে এক তরুণীর দিকে। ওই দিনই টুম্পাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। ইতিমধ্যে গত শনিবার দিঘার ঝাউবন থেকে উদ্ধার হওয়া এক তরুণীর দেহ। দেহটি তাঁর মেয়ের বলে দাবি করেন সুনীলবাবু। পরিবারের পক্ষ থেকে নিশ্চিত হওয়ার পর দেহটি সৎকারও করে দেওয়া হয়। তবে তদন্ত চলছিলই। আর সেই সূত্র ধরেই পুলিশ টুম্পাকে জেরা করে জানতে পারে, মাম্পি নিজের ইচ্ছাতে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল। পরিকল্পনা অনুযায়ী টুম্পা তাকে সাহায্য করেছিলেন। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, বাচ্চু আলি নামে এক যুবকের সঙ্গে মাম্পির সম্পর্ক ছিল। এর আগেও একবার মাম্পি বাচ্চুর সঙ্গে চলে গিয়েছিল। এ বারও মাম্পি বাড়ি ছাড়ার পর কৈখালিতে বাচ্চুর এক আত্মীয়ের বাড়িতে তাকে পৌঁছে দিয়েছিল বাচ্চুর বন্ধু পাপ্পু আলি।
মাম্পির বাবা সুনীল দোলই বুধবার দাসপুর থানায় দাঁড়িয়ে বলেন, “মেয়ের বুকে কালো দাগ ছিল। শরীরের ডান দিক একটু নিচু এবং বাম দিক অল্প উঁচু। তবে মুখ চেনা যায়নি। এই সব চিহ্ন দেখেই আমরা শনাক্ত করি। এত বড় ভুল হবে, ভাবতে পারিনি। আরও ভাল ভাবে দেখেই দাবি করা উচিত ছিল।” একই সুর মা রেখা দেবীর গলাতেও। সঙ্গে কিছুটা স্বস্তিও। তাঁর কথায়, ‘‘মেয়েটাকে যে এ ভাবে ফিরে পাব ভাবতেও পারিনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy