Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

কফিন পাল্টে পটনার দেহ হুগলির হাতে

বাক্স-বদল নয়। এ বার কফিন-বদল। কফিন-বন্দি এক জনের বাড়ি হুগলি। অন্য জনের পটনা। ঘড়িতে প্রায় মধ্যরাত। কফিন বুঝে নিয়ে হুগলির আত্মীয়রা দমদম বিমানবন্দর থেকে রওনা হয়ে গিয়েছিলেন। বেশ কিছুটা যাওয়ার পর বিমানবন্দরের পণ্য বিভাগ থেকে ফোন— ‘‘তাড়াতাড়ি ফিরে আসুন। ভুলে অন্য লোকের দেহ দিয়ে দেওয়া হয়ে গিয়েছে আপনাদের।’’

সুনন্দ ঘোষ ও অনমিত্র চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৪৩
Share: Save:

বাক্স-বদল নয়। এ বার কফিন-বদল।

কফিন-বন্দি এক জনের বাড়ি হুগলি। অন্য জনের পটনা।

ঘড়িতে প্রায় মধ্যরাত। কফিন বুঝে নিয়ে হুগলির আত্মীয়রা দমদম বিমানবন্দর থেকে রওনা হয়ে গিয়েছিলেন। বেশ কিছুটা যাওয়ার পর বিমানবন্দরের পণ্য বিভাগ থেকে ফোন— ‘‘তাড়াতাড়ি ফিরে আসুন। ভুলে অন্য লোকের দেহ দিয়ে দেওয়া হয়ে গিয়েছে আপনাদের।’’

দু’জনের নাম এক নয়। দু’টি কফিন এক বিমানে আসেনি। তা হলে কী ভাবে ঘটল এমন বিভ্রাট?

কলকাতা বিমানবন্দর সূত্রের খবর, বুধবার রাতে হুগলির এক জনের দেহ ভরা একটি কফিন এসেছিল বেঙ্গালুরু থেকে। পটনার বিমানে ওঠানোর জন্য আর কফিন আসে গুয়াহাটি থেকে। বুধবার রাতে হুগলির মৃতের আত্মীয়রা বিমানবন্দরের পণ্য বিভাগ থেকে যখন দেহ বুঝে নেন, ভুল করে তখন তাঁদের অন্য কফিনটি তুলে দেওয়া হয়।

এর পরই হাজির হন পটনার কফিনের দাবিদার। দেখেই তিনি বুঝে যান, মস্ত ভুল হয়ে গিয়েছে। চেঁচামেচি জুড়ে দেন। ফোন পেয়ে হুগলির লোকেরা তখন কফিন নিয়ে ফেরেন।

বিমানবন্দরে এমন নাটকের সূত্রপাত কী ভাবে?

বেঙ্গালুরুর হাসপাতালে বুধবার সকালে মারা যান মানকুণ্ডুর সুনীল সাহা (৬৫)। বুধবার রাত দশটা নাগাদ ইন্ডিগোর বিমানে তাঁর কফিন-বন্দি দেহ কলকাতায় আসে। বিমানে করে মরদেহ আনতে গেলে পণ্য হিসেবে আনতে হয়। অনেকেই কফিনের উপরে কাগজ সেঁটে সেখানে মৃতের নাম লিখে আনেন। কিন্তু, সুনীলবাবুর ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। কফিন-বন্দি দেহ আনার জন্য যে ‘এয়ার বিল’ করা হয়, সেখানেও মৃত ব্যক্তির নাম লেখা থাকে না।

যিনি বিমানবন্দর থেকে কফিন বুঝে নেবেন, লেখা থাকে তাঁর নাম। সুনীলবাবুর নাতি পার্থ বৈরাগী এ দিন বলেন, ‘‘ঠিক ছিল, বিমানবন্দর থেকে দেহ নিয়ে আমরা মানকুণ্ডু শ্মশানে যাব। সঙ্গে গাড়িও নিয়ে গিয়েছিলাম।’’

অন্য দিকে পটনার দেবেন্দ্র প্রসাদ (৫৩) হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার রাতে মারা যান গুয়াহাটির একটি হাসপাতালে। তিনি সেখানে ইউকো ব্যাঙ্কের চিফ ম্যানেজার ছিলেন। গুয়াহাটির ব্যাঙ্কে তাঁর সহকর্মী, পটনারই বাসিন্দা মনোজ কুমার বুধবার সন্ধ্যায় ইন্ডিগোর উড়ানে দেবেন্দ্রর কফিন-বন্দি দেহ নিয়ে আসেন কলকাতায়। সেই কফিনের উপরেও দেবেন্দ্রর নাম সাঁটা কাগজ ছিল না। আর ‘এয়ার বিল’-এ ছিল মনোজ কুমারের নাম।

সুনীলবাবুর আত্মীয়রা পৌঁছনোর আগেই মনোজ কুমার কলকাতা বিমানবন্দরের পণ্য বিভাগে পৌঁছে যান। কিন্তু দেহটি না-নিয়েই তিনি পটনার বিমানের বুকিং করতে চলে যান। মনোজ কুমার বলেন, ‘‘দেহটির জন্য পটনার বিমানে নতুন করে বুকিং করতে হয়। তাই আমি সময় নিচ্ছিলাম।’’

বিমানবন্দরের এক অফিসার বলেন, ‘‘সন্ধেবেলায় মনোজ যদি দেহ নিয়ে নিতেন, তা হলে এই ভুল বোঝাবুঝি হতো না। তিনি ঘুরে আসছি বলে চলে যান। এর পরেই সুনীলবাবুর কফিন এসে পৌঁছয়।’’ এই সময়ে ইন্ডিগোর পণ্য বিভাগের কর্মীদের ‘শিফট’ বদল হয়। তার পরেই দেহ নিতে আসেন সুনীলবাবুর আত্মীয়রা। নতুন কর্মীরা দেবেন্দ্রর দেহ তুলে দেন সুনীলবাবুর স্বজনদের হাতে।

সুনীলবাবুর নাতি পার্থ এ দিন বলেন, ‘‘আমরা দেখি কাগজে মনোজ কুমারের নাম লেখা। সেটা দেখাতে আমাদের বলা হয়, ইন্ডিগোর যে কর্মী আমাদের হাতে দেহ তুলে দেবেন, এটা তাঁর নাম।’’ ইন্ডিগো-র এক অফিসার অবশ্য বলেন, ‘‘মনোজ কুমার নামে আমাদের কোনও কর্মী নেই।’’

মনোজ বলেন, ‘‘আমি তো বুকিং সেরে ফিরে কফিন দেখেই বুঝতে পারি, এটা আমাদের নয়। কারণ, গুয়াহাটিতে আমিই কফিনটি কিনেছি!’’

বুধবার শেষ রাতে সুনীলবাবুর শেষকৃত্য হয়ে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে মনোজকে যখন ফোনে ধরা হয়, তত ক্ষণে পটনায় দেবেন্দ্রর শেষকৃত্যও হয়ে গিয়েছে। মনোজ জানান, এ দিন সকাল সওয়া ন’টার উড়ানে দেবেন্দ্রর দেহ নিয়ে তিনি পটনা পৌঁছেছেন।

মনোজ কুমার যদি আরও দেরিতে ভুল বুঝতে পারতেন, তা হলে কী হতো?

তিনি বলেন, ‘‘ভাবুন তো এক বার! তা হলে তো ওঁরা দেবেন্দ্রর দেহ নিয়ে রাতেই হুগলি চলে যেতেন। কফিন খোলার পরে ভুল বুঝতে পারতেন। তত ক্ষণে আমিও হয়তো ভুল দেহ নিয়ে পটনা উড়ে যেতাম!’’

মনোজের গলার কাঁপুনিটা বোঝা যাচ্ছিল স্পষ্ট।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coffin Exchanged
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE