—ফাইল চিত্র।
রোগটা কী, তা নিয়ে প্রশাসনের তরফে যথারীতি ঢাক-ঢাক গুড়গুড় চলছে। তারই মধ্যে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে আরও এক জনের মৃত্যু হল কলকাতায়। তাঁর নাম নুরজাহান খাতুন। বছর চল্লিশের ওই মহিলা বৃহস্পতিবার ভোরে একবালপুরের একটি নার্সিংহোমে মারা যান। মৃত্যুর কারণ যে ডেঙ্গি, পুর কাউন্সিলর তা স্বীকার করেছেন। কিন্তু রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, ওই মহিলার মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখতে হবে।
এই নিয়ে চলতি সপ্তাহে মহানগরে তিন জন ডেঙ্গি-আক্রান্তের মৃত্যু হল। উত্তর কলকাতার মানিকতলা, মুরারিপুকুরের পরে এ দিন ডেঙ্গিতে প্রাণহানি ঘটল দক্ষিণ কলকাতার একবালপুরেও। অথচ প্রশাসনের তরফে জানানো হচ্ছে, ডেঙ্গি নিয়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়নি! পরিস্থিতি নাকি নিয়ন্ত্রণেই আছে।
নার্সিংহোম সূত্রে জানা গিয়েছে, ১১ সেপ্টেম্বর নুরজাহান জ্বর, বমি, গায়ে-পায়ে যন্ত্রণার উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। উপসর্গ দেখেই তাঁর দ্রুত রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করেন চিকিৎসকেরা। নার্সিংহোমের এক কর্তা বলেন, ‘‘ওই রোগিণীর রক্তপরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা পড়েছিল। যথাসময়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করা হলেও তাঁকে বাঁচানো যায়নি। এ দিন ভোরে ডেঙ্গি-শকের জেরে তাঁর হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে যায়।’’
নুরজাহান কলকাতা পুরসভার ৭৫ নম্বর ওয়ার্ডের কবিতীর্থ সরণির বাসিন্দা। ওই এলাকার বেশ কিছু বাসিন্দা জ্বরে আক্রান্ত। নুরজাহানের মৃত্যু প্রসঙ্গে এলাকার কাউন্সিলর বিলকিশ বেগম বলেন, ‘‘ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েই তিনি মারা গিয়েছেন। প্রয়োজনীয় নথি সংগ্রহ করে পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরকে দেওয়া হয়েছে।’’ পুরসভার স্বাস্থ্য উপদেষ্টা তপনকান্তি মুখোপাধ্যায় জানান, নার্সিংহোমের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় নথি ও তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। মৃতার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। সৎকারের জন্য তাঁরা বিহারে চলে গিয়েছেন। সম্পূর্ণ তথ্য সংগ্রহের পরেই সব নথি স্বাস্থ্য ভবনে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
কলকাতা পুরসভা সূত্রে এ দিন জানা গিয়েছে, শহরে ডেঙ্গি-আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৯০২। ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭৩২। ডেঙ্গিতে মৃত্যুর কোনও তথ্য দেওয়া হয়নি। স্বাস্থ্য দফতর ডেঙ্গি নিয়ে কিছু বলতেই রাজি নয়। স্বাস্থ্য ভবনের তরফে জানানো হয়েছে, ডেঙ্গিতে মৃত্যুর অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। চিকিৎসা-নথি যাচাই চলছে। তবে ডেঙ্গিই মৃত্যুর কারণ, এমন কোনও ঘটনার কথা এখনও জানা যায়নি। যাঁদের মৃত্যু হয়েছে, একাধিক রোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁরা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
পরজীবী বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিস্থিতি সঙ্কটজনক। জনস্বাস্থ্যের নিয়ম অনুযায়ী সংক্রামক রোগের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রথম থেকেই অতিসক্রিয়তা জরুরি। কিন্তু গত দু’তিন বছরের মতো এ বারেও প্রশাসনের সক্রিয়তার অভাব চোখে পড়ার মতোই! তাই ডেঙ্গি-পরিস্থিতি অচিরেই আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy