Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সৃঞ্জয়-রজতের পথেই জামিন এ বার নিতুর

প্রথমে সৃঞ্জয় বসু। তার পরে রজত মজুমদার। এ বার ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কর্তা দেবব্রত ওরফে নিতু সরকার। সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারির মামলায় এই নিয়ে তিন জন জামিন পেলেন। সারদা কাণ্ডে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হওয়া নিতুকে মঙ্গলবার জামিন দেয় আলিপুরের জেলা জজ সমরেশপ্রসাদ চৌধুরীর আদালত। এর আগে, ৪ ফেব্রুয়ারি আলিপুর জেলা আদালত থেকেই জামিন পেয়েছেন তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ সৃঞ্জয়বাবু। তার পরে, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতা হাইকোর্ট থেকে জামিন পান রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল তথা সারদা গোষ্ঠীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা রজত মজুমদার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৫ ০৩:৫৪
Share: Save:

প্রথমে সৃঞ্জয় বসু। তার পরে রজত মজুমদার। এ বার ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কর্তা দেবব্রত ওরফে নিতু সরকার। সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারির মামলায় এই নিয়ে তিন জন জামিন পেলেন।

সারদা কাণ্ডে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হওয়া নিতুকে মঙ্গলবার জামিন দেয় আলিপুরের জেলা জজ সমরেশপ্রসাদ চৌধুরীর আদালত। এর আগে, ৪ ফেব্রুয়ারি আলিপুর জেলা আদালত থেকেই জামিন পেয়েছেন তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ সৃঞ্জয়বাবু। তার পরে, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতা হাইকোর্ট থেকে জামিন পান রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল তথা সারদা গোষ্ঠীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা রজত মজুমদার।

জামিনের সূত্রে পরপর তিন অভিযুক্ত গরাদ থেকে বেরিয়ে আসতে পারলেও ক্রীড়া ও পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র এখনও জেল-হাজতেই আছেন। হাইকোর্টে তাঁর জামিনের আবেদন জানিয়ে মামলা হয়েছে। কিন্তু এ দিন সেই মামলায় সওয়াল করেননি তাঁর আইনজীবীরা। মদনবাবুর আইনজীবীরা হাইকোর্টে জানান, সিবিআই এখনও সারদা মামলার সব নথি তাঁদের হাতে তুলে দেয়নি। ওই সব নথিপত্র খুঁটিয়ে না-দেখে তাঁরা সওয়াল করবেন না। সারদা মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত সৃঞ্জয়বাবুর জামিনের বিরোধিতা করে যে-মামলা হয়েছে, একই ভাবে সেটিরও তার শুনানি হয়নি এ দিন। সে-ক্ষেত্রেও সব নথিপত্র হাতে না-পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। তাঁর জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করে হাইকোর্টে মামলা করেছে সিবিআই।

ওই কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সূত্রেরই খবর, আলিপুর জেলা আদালত এ দিন দেবব্রত সরকার (নিতু)-কে এক লক্ষ টাকার ব্যক্তিগত জামিনে মুক্তি দিয়েছে। তাঁর আইনজীবী আদালতে জানান, সিবিআই দেবব্রতবাবুর বিরুদ্ধে এমন কোনও তথ্যপ্রমাণ দাখিল করতে পারেনি, যার জন্য তাঁকে জেল-হাজতে আটকে রাখা যায়। অভিযুক্তকে জামিন দেওয়া হলে তিনি তথ্যপ্রমাণ লোপাট করতে পারেন, এমন দাবিও করতে পারে না সিবিআই। কারণ, মামলার সব নথি এখন সিবিআইয়ের হেফাজতেই রয়েছে। সিবিআই অবশ্য নিতুর জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করে। তারা বলে, এই অভিযুক্ত প্রভাবশালী ব্যক্তি। তাঁর জামিনের আবেদন মঞ্জুর করা হলে তিনি সাক্ষীদের প্রভাবিত করতে পারেন। দু’পক্ষের সওয়াল শুনে আদালত ওই অভিযুক্তকে শর্তসাপেক্ষে জামিন দেন। শর্ত হল, তদন্তের প্রয়োজনে সিবিআই তলব করলেই দেবব্রতকে হাজির হতে হবে এবং সপ্তাহে এক দিন তাঁকে যেতে হবে সিবিআইয়ের আঞ্চলিক দফতরে।

জামিন পেয়ে গেলেও এ দিন অবশ্য বাড়ি যাওয়া হয়নি নিতুর। কারণ, জেল-হাজত থেকে তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি হয়নি। এখন তিনি আছেন এসএসকেএম হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের দোতলার কেবিনে। ভাই ভানু সরকারের ফোনে জামিন মঞ্জুরের খবর পান নিতু। ভিড় করেন অন্যান্য ক্লাবকর্তা, বন্ধুরা। নীল টি-শার্ট গায়ে খোশমেজাজেই বন্ধু, ক্লাবকর্তা ও আত্মীয়দের সঙ্গে কথা দেখা যায় তাঁকে। আবেগের বাঁধ ভাঙে ইস্টবেঙ্গলের ফুটবল সচিব সন্তোষ ভট্টাচার্যকে দেখে। জামিনের পরে আইনজীবীদের সঙ্গে আদালত থেকে সোজা এসএসকেএমে তাঁর কেবিনে যান সন্তোষবাবু। তাঁকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেন নিতু। তবে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে তিনি এই বিষয়ে কোনও কথা বলতে চাননি।

নিতুর জামিন হয়ে গেলেও মন্ত্রী মদনবাবুর জামিনের আবেদনের শুনানি আটকে গিয়েছে। ২৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন মদনবাবু। এ দিন শুনানির জন্য মামলাটি ওঠে বিচারপতি শুভ্রকমল মুখোপাধ্যায় ও বিচারপতি ইন্দ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে। সারদা রিয়েলটি মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত মদনবাবুর আইনজীবী শেখর বসু এবং মিলন মুখোপাধ্যায় ডিভিশন বেঞ্চে জানান, সিবিআই অনেক সাক্ষীর জবানবন্দি নিয়েছে। নিম্ন আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে অনেক সাক্ষী গোপন জবানবন্দি দিয়েছেন। কিন্তু সেই সব বক্তব্যের সমস্ত নথি এখনও তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয়নি। সেই সব নথি না-পেলে এই মামলায় তাঁদের সওয়াল করতে অসুবিধা হবে।

সিবিআই জানায়, সারদা রিয়েলটি মামলায় গত ১৭ নভেম্বর চার্জশিট পেশ করা হয়েছে। সে-দিনই ওই মামলার অন্যতম দুই অভিযুক্ত মদন মিত্র এবং সৃঞ্জয় বসুকে সিবিআই কার্যালয়ে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। অসুস্থতার কারণে সে-দিন মদনবাবু সিবিআইয়ের কার্যালয়ে যেতে পারেননি। তিনি হাজির হন ১২ ডিসেম্বর। তদন্তকারীদের প্রশ্নের সন্তোষজনক জবাব দিতে না-পারায় সে-দিনই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। ইতিমধ্যে মদনবাবুর বিরুদ্ধে চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি অতিরিক্ত চার্জশিট নিম্ন আদালতে পেশ করেছেন সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা।

মদনবাবুর আইনজীবীরা এ দিন ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন জানান, তাঁদের মক্কেল ফের গুরুতর অসুস্থ হয়ে এসএসকেএম হাসপাতালের ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন। জামিনের আবেদনের শুনানির দিন সিবিআই যাতে তাঁর চিকিৎসা সংক্রান্ত রিপোর্ট ডিভিশন বেঞ্চে দাখিল করে, সেই নির্দেশ দেওয়া হোক। ডিভিশন বেঞ্চ ১ এপ্রিল ওই রিপোর্ট পেশ করার জন্য সিবিআই-কে নির্দেশ দিয়েছে।

ডিভিশন বেঞ্চ সিবিআইয়ের আইনজীবী কে রাঘবচারুলু ও আসরাফ আলির কাছে জানতে চায়, সংশ্লিষ্ট নথি অভিযুক্তের কৌঁসুলিদের দেওয়া হবে কবে। সিবিআইয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২৭ মার্চের মধ্যে তারা ওই সব নথি দিয়ে দিতে পারবে। ডিভিশন বেঞ্চ তা শুনে জামিনের শুনানির দিন ধার্য করে ১ এপ্রিল।

কথা ছিল, এ দিনই সারদা রিয়েলটি মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত সৃঞ্জয়বাবুুর জামিন খারিজের মামলার শুনানি হবে। সৃঞ্জয়বাবু আলিপুর জেলা জজের আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পরে সিবিআই হাইকোর্টে ওই মামলা করেছে। সিবিআই এ ক্ষেত্রেও সৃঞ্জয়বাবুর আইনজীবীদের হাতে মামলার সব নথি তুলে না-দেওয়ায় এ দিন মামলার শুনানি হয়নি। সিবিআইয়ের আইনজীবী আসরাফ আলি জানান, ২৭ মার্চের মধ্যে সৃঞ্জয়বাবুর আইনজীবীদের হাতে মামলার সব নথি তুলে দেওয়া হবে। ওই মামলার শুনানির দিনও ধার্য হয়েছে আগামী ১ এপ্রিল।

ফের ইডি-র প্রশ্নের মুখে নেওটিয়া

চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্নকে সোমবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল পাঁচ ঘণ্টা ধরে। তার পরে, মঙ্গলবার ব্যবসায়ী হর্ষ নেওটিয়াকেও ফের জিজ্ঞাসাবাদ করল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি। দেবকৃপা ব্যাপার লিমিটেডের বিনিয়োগকারীদের সম্পর্কে তথ্য জানতে অক্টোবরে হর্ষকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। ওই ব্যবসায়ী যে-জবাব দিয়েছিলেন, সেই বয়ানের কিছু অংশ নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দেয় বলে ইডি সূত্রের খবর। বিভ্রান্তি দূর করার জন্য ওই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ব্যাখ্যা জেনে নেওয়ার প্রয়োজন হয়। সেই জন্যই এ দিন তাঁকে প্রায় দু’ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে ইডি। রাতে ফোনে যোগাযোগ করা হলে হর্ষ জানান, তাঁর এক পরিচিত ব্যবসায়ী দেবকৃপায় বিনিয়োগ করেছিলেন। সেই বিষয়ে এ দিন তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সারদার পাশাপাশি এ দিন রোজ ভ্যালির দুই কর্মীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে ইডি। দুপুরে আচমকাই ইডি-র সল্টলেকের দফতরে হাজির হন রোজ ভ্যালির কর্ণধার গৌতম কুণ্ডু। প্রায় চার ঘণ্টা সেখানে ছিলেন তিনি। তাঁর সঙ্গে কথা বলেন তদন্তকারীরা। ইডি সূত্রের খবর, গৌতমবাবুকে এ দিন তলব করা হয়নি। তিনি নিজে থেকেই এসেছিলেন। ইডি-র দফতর থেকে বেরিয়ে গৌতমবাবু জানান, তাঁকে ২৭ মার্চ তলব করেছে ইডি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE