Advertisement
E-Paper

কাউন্সেলিংয়ের তবে মানে কী? আরজি করে আন্দোলনের তিন মুখের পোস্টিং ‘পরিবর্তন’ নিয়ে স্বাস্থ্য ভবনে জুনিয়র ডাক্তারেরা

অনিকেতরা জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য ভবনের এই পদক্ষেপকে ‘প্রতিহিংসা’ হিসাবেই দেখছেন তাঁরা। নাগরিক সমাজকে পাশে নিয়ে যে ভাবে আন্দোলন করা যায়, তা করা হবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০২৫ ২১:১০

— নিজস্ব চিত্র।

দেবাশিস হালদার, অনিকেত মাহাতো, আসফাকুল্লা নাইয়া— আরজি কর আন্দোলনের অন্যতম তিন মুখের সরকারি ‘পোস্টিং’ নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। তাঁদের অভিযোগ, কোথায় তাঁরা নিয়োগ চান, নিয়ম মেনে কাউন্সেলিং প্রক্রিয়ায় তা সিনিয়র রেসিডেন্টদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। তার পরেও শুধুমাত্র তাঁরা তিন জন পছন্দের জায়গায় ‘পোস্টিং’ পাননি। কেন, সেই প্রশ্নই তুলেছেন অনিকেতরা। তাঁদের আরও প্রশ্ন, এ রকমই যদি করা হয়, তা হলে কাউন্সেলিংয়ের অর্থ কী? অনিকেতদের অভিযোগ, স্বাস্থ্য ভবন ‘অনৈতিক কাজ’ করছে।

স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা (ডিএমই)-র সঙ্গে কথা বলে মঙ্গলবার এই পোস্টিংয়ের ‘পরিবর্তন’ নিয়ে লিখিত বক্তব্য জমা দিয়েছেন দেবাশিস। অন্য দিকে, অনিকেত এবং আসফাকুল্লা তাঁদের পোস্টিংয়ে ‘পরিবর্তন’-এর খবর মঙ্গলবার পেয়েছেন। তাঁরা এখনও কোনও লিখিত বক্তব্য জমা দেননি স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তার কাছে। দেবাশিস জানিয়েছেন, এই বিষয়ে আইনি পরামর্শ নিচ্ছেন তাঁরা। মঙ্গলবার সকাল থেকে এই পোস্টিংয়ের প্রতিবাদে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে প্রতিবাদে বসেছিলেন ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্‌স ফোরাম (ডব্লিউবিডিএফ)-এর সদস্যেরা। তাঁরা সকলেই স্বাস্থ্য ভবনের সামনে থেকে মঙ্গলবার রাতে বেরিয়ে যান।

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক দেবাশিসের ‘পোস্টিং’ হয়েছে মালদহের গাজোলে। অভিযোগ, কাউন্সেলিংয়ে হাওড়ায় নিয়োগের কথা বলা হলেও মেধাতালিকা বেরোনোর পর দেখা যায়, গাজোলে পোস্টিং হয়েছে তাঁর। একই রকম ভাবে পছন্দের জায়গায় নয়, অন্যত্র পোস্টিং হয়েছে আরজি কর আন্দোলনের অন্য দুই নেতা অনিকেত এবং আসফাকুল্লারও। এর পরেই সরব হন অনিকেতরা। কাউন্সেলিং নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। একই সঙ্গে তাঁরা স্পষ্ট ভাবে বুঝিয়ে দেন কাউন্সেলিং প্রক্রিয়ার সবটা। অনিকেত জানান, এটি রুটিন বদলি নয়। সিনিয়র রেসিডেন্টদের স্নাতকোত্তর পরীক্ষার পরে তিন বছরের ‘বন্ড’ থাকে। সেই বন্ড অনুযায়ী সরকারের তরফে তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘‘আমরা সরকারি চাকরিজীবী নই। স্বাস্থ্যভবনের নির্দেশিকায় পরিষ্কার লেখা আছে যে, কাউন্সেলিং হবে। সেই প্রক্রিয়ার জন্য ভ্যাকেন্সি লিস্ট (শূন্যপদের তালিকা) প্রকাশিত হবে। কোন কোন হাসপাতালে শূন্যপদ রয়েছে, কোথায় এই সিনিয়র রেসিডন্টদের প্রয়োজন রয়েছে, স্বাস্থ্য ভবন তা খতিয়ে দেখে তালিকা প্রকাশ করবে।’’

অনিকেত জানান, ওই তালিকা প্রকাশ হওয়ার পরেই শুরু হয় কাউন্সেলিং প্রক্রিয়া। মেধার ভিত্তিতে হয় ওই প্রক্রিয়া। মেধাতালিকায় থাকা চিকিৎসকেরা পোস্টিংয়ের জন্য বেছে নিতে পারেন পছন্দের জায়গা। যাঁদের নাম তালিকার উপরের দিকে থাকবে, তাঁরা আগে সুযোগ পাবেন। এর পরেই পিজিটি-কে নির্দিষ্ট কলেজে নিয়োগ করা হবে। অনিকেত জানান, তিন বছরের ‘বন্ড’ থাকে। তার মধ্যে এক বছরের জন্য রাজ্যের কোনও মেডিক্যাল কলেজে নিয়োগ করা হয় নির্দিষ্ট পিজিটি-কে। পরের দু’বছর জেলা বা মহকুমা হাসপাতালে কাজ করতে হয় ওই চিকিৎসককে। জুনিয়র ডাক্তারেরা জানিয়েছেন, বন্ড পোস্টিং রাজ্যে চালু ছিল অনেক বছর। প্রথমে কাউন্সেলিংয়ের নিয়ম ছিল। মাঝে বন্ধ ছিল, তার পরে ২০২৩ সালে আবার সেই নিয়ম চালু হয়।

অনিকেতের অভিযোগ, নিয়োগের নির্দেশিকায় দেখা গিয়েছে, প্রথম তালিকায় ৭৭১ জনের মধ্যে একমাত্র দেবাশিসকেই তাঁর পছন্দের হাসপাতালে নিয়োগ করা হয়নি। তাঁকে হাওড়া মহকুমা হাসপাতাল থেকে সরিয়ে মালদহের গাজোলের হাসপাতালে নিয়োগ করা হয়েছে। পরের তালিকায় ৮৭১ জনের মধ্যে অনিকেত, আসফাকুল্লা— যাঁদের মেধার ভিত্তিতে আরজি কর এবং আরামবাগ মেডিক্যাল কলেজে নিয়োগ পাওয়ার কথা ছিল, তাঁদের পাঠানো হয়েছে পুরুলিয়া এবং রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজে।

অনিকেতের প্রশ্ন, ‘‘কেন আমাদের তিন জনকে কাউন্সেলিংয়ে এক জায়গায় নিয়োগ দেওয়ার কথা বলার পর অন্য হাসপাতালে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে?’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘আমাদের তিন জনেরই মেধাতালিকা অনুসারে যেখানে নিয়োগ পাওয়ার কথা ছিল, সেখানে পাঠানো হয়নি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘ডিএমই, স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম, স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষ সচিবের কাছে এই নিয়ে প্রশ্ন রেখেছি। বিশেষ সচিব আমাদের বলেন, কনফিডেন্সিয়াল নির্দেশের মাধ্যমে তিন জনের পোস্টিং বদল করা হয়েছে।’’ এর পরেই অনিকেত বলেন, ‘‘কোন নীতির ভিত্তিতে এই কাজ করা হল? স্বচ্ছতা কেন লঙ্ঘিত হল? বিশেষ সচিব জানিয়েছেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যা বলেছেন, তা-ই করেছি। এর পরে তাঁর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ স্বাস্থ্যসচিবের কাছে যাই। তিনি বলেন, আমরা সরকারের অংশ। যা মনে করি, তা-ই করব।’’ অনিকেতের দাবি, তাঁরা যে প্রশ্ন করেছেন, তাঁর জবাব মেলেনি। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের তিন জনকে সরানোর কী প্রয়োজন হল? কোনও সদুত্তর নেই। সরকারি নির্দেশিকা ছাড়া কিছু জানতে পারলাম না।’’

অনিকেতরা জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য ভবনের এই পদক্ষেপকে ‘প্রতিহিংসা’ হিসাবেই দেখছেন তাঁরা। নাগরিক সমাজকে পাশে নিয়ে যে ভাবে আন্দোলন করা যায়, তা করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। এই বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ কী করা হবে, তা নিয়ে বুধবার আইনি পরামর্শ নেওয়া হবে বলেও জানান তাঁরা।

Junior Doctor
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy