শুধু দেবাশিস হালদারই নয়, দূরে পোস্টিং হল অনিকেত মাহাতো এবং আসফাকুল্লা নাইয়ারও! আরজি করকাণ্ডের পর আন্দোলনের সামনের সারিতে যে সব জুনিয়র ডাক্তার ছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম মুখ হয়ে উঠেছিলেন এই তিন জুনিয়র ডাক্তার। বৈঠকে বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও। এ বার সেই আন্দোলনের তিন মুখের পোস্টিং নিয়েই দানা বেঁধেছে বিতর্ক। প্রতিবাদে মঙ্গলবার দুপুরে স্বাস্থ্যভবনে অবস্থানে বসেছেন অনিকেতরা। তাঁদের দাবি, স্বাস্থ্যসচিবের থেকে সদুত্তর না পেলে অবস্থান থেকে নড়বেন না তাঁরা।
সোমবারই জানা গিয়েছিল, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক দেবাশিস হালদারের পোস্টিং হয়েছে মালদহের গাজোলে। অভিযোগ, কাউন্সেলিংয়ে হাওড়ায় নিয়োগের কথা বললেও মেধাতালিকা বেরোনোর পর দেখা যায়, গাজোলে পোস্টিং হয়েছে দেবাশিসের। অথচ জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি, গাজোলের ওই হাসপাতালে কোনও শূন্যপদই ছিল না! এর পরেই প্রতিবাদে সরব হন দেবাশিস-সহ ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরাম (ডব্লিউবিডিএফ)-এর সদস্যেরা। মঙ্গলবার সকালে স্বাস্থ্য ভবন অভিযানেরও ডাক দেওয়া হয়। পরে জানা যায়, শুধু দেবাশিসই নয়, একই রকম ভাবে দূরে পোস্টিং হয়েছে আরজি কর আন্দোলনের অন্য দুই নেতা অনিকেত ও আসফাকুল্লার। পর পর আরজি কর আন্দোলনের তিন চিকিৎসকের পোস্টিং নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।
আরও পড়ুন:
সিনিয়র রেসিডেন্টদের নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়ম হল, এই প্রক্রিয়ায় স্বাস্থ্য ভবনের তরফে একটি কাউন্সেলিং হয়। সেখানে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের কাছে জানতে চাওয়া হয়, তিনি কোথায় পোস্টিং চান। নিয়ম মেনে দেবাশিস, অনিকেতদের ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছিল। কাউন্সেলিংয়ে অনিকেত, আসফাকুল্লারা জানান, তাঁরা যথাক্রমে আরজি করে এবং আরামবাগ হাসপাতালে পোস্টিং চান। সেইমতো সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে যোগ দিতে চেয়ে বন্ডেও সই করেন অনিকেতরা। অথচ অভিযোগ, মেধাতালিকা বেরোনোর পর দেখা যায়, দেবাশিসের মতো পোস্টিং বদলে গিয়েছে তাঁদেরও! আরজি করের পরিবর্তে অনিকেতকে পাঠানো হয়েছে রায়গঞ্জে, আর আসফাকুল্লার পোস্টিং হয়েছে পুরুলিয়ার দেবেন মাহাতো মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে!
ডব্লিউবিডিএফের দাবি, ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ থেকেই আরজি কর আন্দোলনের তিন মুখের সঙ্গে এমনটা করা হয়েছে। কারণ, কাউন্সেলিংয়ে মোট ৭৭৮ জন চিকিৎসক অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাঁদের কারও পোস্টিং এ ভাবে বদলানো হয়নি। কেবলমাত্র দেবাশিসরাই ব্যতিক্রম। এ বিষয়ে অনিকেত বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের প্রান্তিক কোনও জায়গায় যেতে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু আমরা নিয়োগে স্বচ্ছতা চেয়েছিলাম। অথচ কাউন্সেলিংয়ের পর মেধাতালিকা বেরোনোর পর দেখা গেল, আমাকে পাঠানো হচ্ছে রায়গঞ্জ, আসফাকুল্লাকে পাঠানো হচ্ছে পুরুলিয়া, দেবাশিসকে পাঠানো হচ্ছে গাজোল। তা হলে আর স্বচ্ছতা কোথায় হল?’’ আসফাকুল্লার গলাতেও একই সুর। তাঁর কথায়, ‘‘মেধাতালিকাকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা চলছে। ১৫০০ জনের মধ্যে কেন তিন জনের পোস্টিং বদলে গেল, আমরা সেই উত্তর জানতে চাই।’’ আপাতত স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমের দফতরের সামনে অবস্থানে বসে রয়েছেন অনিকেত, আসফাকুল্লা-সহ বেশ কয়েক জন। তাঁদের দাবি, স্বাস্থ্যসচিব দেখা না করা পর্যন্ত তাঁরা অবস্থান থেকে নড়বেন না।