পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে আক্রমণ করে শ্রীরামপুর লোকসভার তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যকে কেন্দ্র করে ফের উত্তপ্ত রাজ্য রাজনীতি। এ বার সেই আক্রমণের জবাব দিল রাজভবন। কল্যাণের মন্তব্যের তদন্ত চেয়ে পাল্টা আইনি লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিল রাজ্যপালের দফতর। শনিবার ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনী (এসআইআর)-কে সমর্থন করেন রাজ্যপাল। জবাবে তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ দাবি করেন, “প্রথমে বলুন রাজ্যপালকে, যেন উনি বিজেপির অপরাধীদের রাজভবনে আশ্রয় দেওয়া বন্ধ করেন। উনি সেখানে অপরাধীদের রাখছেন, তাদের বন্দুক ও বোমা দিচ্ছেন এবং বলছেন যে তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে হামলা করো।”
এমন মন্তব্যের পরই পাল্টা কড়া প্রতিক্রিয়া এসেছে রাজভবনের তরফে। শাসকদলের বর্ষীয়ান সাংসদের এমন মন্তব্যকে রাজভবন ভবন ‘গুরুতর এবং ভিত্তিহীন’ বলে ব্যাখ্যা করে অবিলম্বে প্রকাশ্যে তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
রবিবার সকালে প্রকাশিত রাজভবনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সাংসদ, নাগরিক সমাজের সদস্য এবং সাংবাদিক মিলিয়ে সর্বোচ্চ ১০০ জন ইচ্ছুক ব্যক্তিকে অবিলম্বে রাজভবনে ঢুকতে দেওয়া হবে, যাতে তাঁরা নিজেরা যাচাই করে দেখতে পারেন— এই অভিযোগের কোনও বাস্তব ভিত্তি আছে কি না। বিবৃতিতে স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করা হয়েছে, যদি অভিযোগ অসত্য প্রমাণিত হয়, তবে সাংসদ কল্যাণকে বাংলার মানুষের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে এবং ঘৃণাত্মক বক্তব্যের জন্য তাঁকে আইনি প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হতে হবে। এখানেই থেমে থাকেনি রাজভবন। তারা প্রশ্ন তুলেছে কলকাতা পুলিশের ভূমিকা নিয়েও। রাজভবন জানিয়েছে, যেহেতু রাজভবনের নিরাপত্তা কলকাতা পুলিশের হাতে, তাই কী ভাবে তাদের অনুমতি নিয়ে তথাকথিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ ভবনের ভিতরে প্রবেশ করল, তারও অবিলম্বে তদন্ত হওয়া উচিত। রাজভবনের বিবৃতি বলছে, “এটি জ়েড-প্লাস নিরাপত্তাপ্রাপ্ত রাজ্যপাল এবং রাজভবনের সমস্ত কর্মীর জন্য চরম হুমকি।”
বিবৃতিতে আরও দাবি করা হয়েছে, রাজ্যপালের নিরাপত্তা আধিকারিকেরা তাঁকে পরামর্শ দিয়েছেন যে, অভিযোগের তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি রাজভবন ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যান। কিন্তু রাজ্যপাল সেই পরামর্শ মানতে অস্বীকার করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “আমি রাজভবনেই থাকব, যা-ই ঘটুক।” রাজভবনের দিক থেকে ইঙ্গিত মিলেছে, এই অভিযোগ যেহেতু একজন লোকসভা সদস্য করেছেন, তাই সমগ্র বিষয়টি বিচার-বিশ্লেষণের জন্য লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার কাছে পাঠানো হবে।
প্রসঙ্গত, এসআইআর নিয়ে আনন্দ বোস বলেছিলেন, ‘‘এসআইআর অত্যাবশ্যক, কারণ এটি নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ করার একটা গুরুত্বপূর্ণ পথ।’’ তাঁর মতে, এই প্রক্রিয়াটি ভোটারদের মধ্যে বিশ্বাস ফিরিয়ে আনবে এবং ভবিষ্যতে সুষ্ঠু ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন নিশ্চিত করবে। তিনি আরও বলেছিলেন, ‘‘বিহারে এসআইআর প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই সফল হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের মানুষও এই প্রক্রিয়াকে গ্রহণ করবেন।’’ রাজ্যপালের এমন প্রতিক্রিয়ার জবাবে কল্যাণ ওই মন্তব্য করেছিলেন।