Advertisement
E-Paper

সরকারিতে বিলম্ব, খরচের ধাক্কা বেসরকারিতে

শোভনার পরিবার জানিয়েছে, নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৭ দিন ভর্তি ছিল মেয়েটি। কিন্তু হেমাটোলজি বিভাগে বেড পাওয়া যায়নি। থাকতে হয়েছিল মেডিসিন বিভাগে। অভিযোগ, চিকিৎসকেরাই বলেছিলেন, চিকিৎসা না-পেয়ে অবস্থা ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। তাঁরা যেন অন্য হাসপাতালে নিয়ে যান।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৮ ০৪:৩৭

কলকাতার একটি মাঝারি মানের বেসরকারি হাসপাতালে ৬ মাস চিকিৎসা হয়েছে রক্তের ক্যানসারে আক্রান্ত ৪ বছরের শোভনা দে বিশ্বাসের। আপাতত খরচ হয়েছে ৫ লক্ষ ১০ হাজার টাকা। পূর্ব মেদিনীপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের শিশুটির বাবা একটি দোকানের কর্মচারী। আত্মীয়েরা যে যা পেরেছেন দিয়েছেন। গ্রামের ক্লাব চাঁদা তুলেছে। কলকাতার একটি পুজো কমিটি টাকা তুলে দিয়েছে, বিক্রি হয়েছে মায়ের গয়না। বাবা যে দোকানের কর্মী ছিলেন, তার মালিকও টাকা দিয়েছেন।

শোভনার পরিবার জানিয়েছে, নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৭ দিন ভর্তি ছিল মেয়েটি। কিন্তু হেমাটোলজি বিভাগে বেড পাওয়া যায়নি। থাকতে হয়েছিল মেডিসিন বিভাগে। অভিযোগ, চিকিৎসকেরাই বলেছিলেন, চিকিৎসা না-পেয়ে অবস্থা ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। তাঁরা যেন অন্য হাসপাতালে নিয়ে যান। মেডিক্যাল কলেজ এবং এসএসকেএমে ঘুরেও জায়গা পায়নি পরিবার। তখন বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় শোভনাকে।

মছলন্দপুরের বাসিন্দা গৌতম চন্দ্র নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ঘাড় ও গলার ক্যানসারের চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন। তার ইসিজি-র ডেট পড়েছে আগামী সেপ্টেম্বরে। শেষ পর্যন্ত বেসরকারি জায়গা থেকে তিনি পরীক্ষা করাতে বাধ্য হয়েছেন। এসএসকেএমে আর এক রোগীর ইকো-ডপলার পরীক্ষার তারিখ পাওয়া গিয়েছে ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে!

সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা ‘ফ্রি’ হলেও অস্বাভাবিক ভিড় এবং এই বিলম্বের কারণে অনেকেই চলে যান বেসরকারি হাসপাতালে। ভিড় এবং দেরির প্রসঙ্গ মেনে নিয়েই সরকারি হাসপাতালের প্রবীণ ক্যানসার বিশেষজ্ঞ সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় জানান, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে শিক্ষিত মধ্যবিত্তের বড় অংশের মানসিক বাধাও কাজ করে। লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটে ডাক্তার দেখানো, সাদামাঠা শয্যা, সকলের সঙ্গে হাসপাতালের শৌচাগার ভাগ করার বিষয়গুলি তাঁরা এড়াতে চান।

এ ছাড়া, অনেক দামি ওষুধ অনেক সময় সরকারি হাসপাতালে পাওয়া যায় না। তখন ওষুধ কিনতে ও বাইরে থেকে পরীক্ষা করাতে প্রচুর টাকা লাগে। তার উপরে, এত দিন ক্যানসারের ওষুধ মেডিক্যাল কলেজগুলি ছাড়া অন্য হাসপাতালে মিলত না। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে জেলা সদর বা কলকাতায় বেশ কয়েক মাস থাকা গরিব মানুষের পক্ষে অসম্ভব হয়ে উঠত। সুবীরবাবুর অভিজ্ঞতায়, ‘‘কিছু দিন তাঁরা চিকিৎসা করান, তার পরে হাসপাতালে আসা বন্ধ করেন। কার্যত স্বেচ্ছামৃত্যু বেছে নেন তাঁরা।’’

আর যাঁরা বেসরকারি হাসপাতালে যান? নানা খাতে প্রবল খরচ আছেই। এ ছাড়া অভিযোগ, কেমোথেরাপির কোনও ওষুধ বাজারে যে দামে পাওয়া যায়, তা নিজস্ব ডিসপেন্সারি থেকে বেশি দামে কিনতে বাধ্য করে কয়েকটি কর্পোরেট হাসপাতাল। যদিও ওই হাসপাতালগুলির তরফে দাবি, এতে খারাপ মানের বা জাল ওষুধের সমস্যা থাকে না। আর খরচ প্রসঙ্গে অ্যাসোসিয়েশন অব হসপিটালস অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়া-র ডিরেক্টর ও ভাইস প্রেসিডেন্ট রূপক বরুয়ার ব্যাখ্যা, ‘‘ওষুধের মানের সঙ্গে আপস করা হয় না। সেরা সার্জনদের ফি বেশি। রেডিওথেরাপির জন্য ২০-২৫ কোটির বিদেশি যন্ত্র ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া, হাসপাতালের পরিকাঠামো স্টার হোটেলের মতো। তারও খরচ রয়েছে।’’ তবে ব্যাখ্যা যা-ই হোক, বাস্তব বলছে, খরচ চালাতে না-পেরে হোমিওপ্যাথি বা জড়িবুটির আশ্রয় নেন অনেকেই।

আশার কথা, চিকিৎসায় বিলম্ব এড়াতে নীতি পাল্টাচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর। স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ক্যানসারের কয়েকটি দামি ওষুধ নতুন করে সরকারি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। অঙ্কোলজিস্ট নিয়োগ হচ্ছে জেলা হাসপাতালগুলিতে। ক্যানসারের ওষুধ সেখানে মিলবে। তাতে যদি রোগী ও তাঁদের পরিবারের অসহায়তা অন্তত কিছুটা কমানো যায়, ভিড় এবং চিকিৎসায় বিলম্ব কমানো যায় শহরের সরকারি হাসপাতালে।

Hospital Expense
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy