Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Dr. R. Ahmed Dental College and Hospital

R Ahmed Dental Hospital: ‘করোনা-ছুটি’, তলানিতে আর আহমেদের পরিষেবা

করোনা শুরুর আগে পর্যন্ত এই হাসপাতালে দৈনিক ১৫০-২০০ রোগীর দাঁত তোলা হত। সেখানে ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত ৫৮২ জনের দাঁত তোলা হয়েছে!

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০২১ ০৭:৫০
Share: Save:

করোনা আবহে প্রায় দেড় বছর ধরে চিকিৎসকদের পরিশ্রম, কাজের সময়, ঝুঁকি দ্বিগুণ হয়েছে। ডাক্তারবাবুরা হাঁফ ছাড়ার অবকাশ পাচ্ছেন না। অথচ, রাজ্যে দাঁতের চিকিৎসার অন্যতম মেডিক্যাল কলেজ তথা একমাত্র রেফারাল কেন্দ্র আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজ হাসপাতালের ছবিটা এর বিপরীত বলেই অভিযোগ। অভিযোগ, দু’সপ্তাহে বা মাসে এক বার গিয়েই চিকিৎসকেরা হাজিরা খাতায় নাম লিখে যাচ্ছেন!

করোনা প্রকোপের শুরু থেকে এখানে অধিকাংশ চিকিৎসক কাজ করাই কার্যত বন্ধ করেছেন বলে বার বার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে অধ্যক্ষ তপন গিরিকে মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র সংসদ একাধিক চিঠি দিয়েছে। গত কয়েক মাসে কলেজ কাউন্সিলের যত বৈঠক হয়েছে, তাতে এই বিষয়কে ঘিরে ধুন্ধুমার হয়েছে। চিকিৎসকেরা কেন কোনও বড় অস্ত্রোপচার করছেন না, তা নিয়ে শেষ বার গোলমাল
হয়েছে গত ২২ জুলাইয়ের কলেজ কাউন্সিলের বৈঠকে। তবু অবস্থার পরিবর্তন হয়নি।

হাসপাতালে অস্ত্রোপচার ও অন্য চিকিৎসার খতিয়ান দেখলেই অভিযোগ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। করোনা শুরুর আগে পর্যন্ত এই হাসপাতালে দৈনিক ১৫০-২০০ রোগীর দাঁত তোলা হত। অর্থাৎ, মাসে দাঁত তোলা হত কম করে পাঁচ হাজার রোগীর। সেখানে ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত ৫৮২ জনের দাঁত তোলা হয়েছে! সাধারণ দাঁত তোলার জন্য আসা রোগীদের এক, তিন এমনকি পাঁচ মাস পরেও তারিখ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। দিনে ৭-৮টি বায়াপ্সি হত এখানে। কিন্তু ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত বায়াপ্সি হয়েছে ২৬১টি। সিস্টের অস্ত্রোপচার হত দিনে ৪-৫টি। ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১-এর জুন পর্যন্ত দেড় বছরে সিস্টের অস্ত্রোপচার হয়েছে ৬৫টি! রাজ্যের সবচেয়ে বেশি দাঁতের ক্যানসার ও দুর্ঘটনাজনিত গুরুতর আঘাতের অস্ত্রোপচার হত এই হাসপাতালেই। ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে সেই সব পুরোপুরি বন্ধ।

হাসপাতালের নতুন ভবনের দোতলায় মেজর ওটি বন্ধ পড়ে ছিল চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত। অভিযোগ, রোগীকে অজ্ঞান করে কোনও অস্ত্রোপচার গত দেড় বছর ধরে সেখানে হয়নি। আরও অভিযোগ, এই ধরনের অধিকাংশ কেস রেফার করা হচ্ছে এসএসকেএম হাসপাতালে অথবা প্রাইভেট চেম্বারে! সূত্রের খবর, কলেজ কাউন্সিলের বৈঠকে অভিযোগ উঠেছে যে, কিছু চিকিৎসক হাসপাতালে আসাই কার্যত বন্ধ করে দিয়েছেন।
এক ভুক্তভোগী রোগী আসরফ আলি জানাচ্ছেন, ২০২০ সালের ২১ ডিসেম্বরে বহির্বিভাগে দাঁত তুলতে গিয়েছিলেন তিনি। তাঁকে তারিখ দেওয়া হয়েছিল ২০২১ সালের ১৩ এপ্রিল! সন্দীপ বসু নামে এক রোগী বহির্বিভাগে দাঁত তুলতে যান ২০২১ সালের ১১ জানুয়ারি। তাঁকে তারিখ দেওয়া হয় ১০ মে!

অথচ, এই মেডিক্যাল কলেজে রয়েছেন ২ জন অ্যানাস্থেটিস্ট, ১ জন মেডিক্যাল অফিসার, ১ জন প্রফেসর, ২ জন অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, ৪ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসার, ৪ জন জিডিএমও। তার পরেও কেন পরিষেবার এই হাল? কেন সাধারণ পরিষেবাও অমিল? হাসপাতালের ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জারি বিভাগের প্রধান স্বপন মজুমদার এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে অস্বীকার করেন‌। অধ্যক্ষ তপন গিরির সংক্ষিপ্ত জবাব, ‘‘প্রোটোকল মেনেই সব কাজ হচ্ছে। এর বেশি কিছু বলব না।’’

কী সেই প্রোটোকল? রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, “অস্ত্রোপচার বন্ধ রাখতে হবে বা কমিয়ে দিতে হবে, এমন কোনও প্রোটোকল ছিল না। এখন সব চিকিৎসার ক্ষেত্রে যেটা বলা হয়, তা হল চিকিৎসা শুরুর আগে রোগীর ক‍রোনা পরীক্ষা করতে হবে। এ ক্ষেত্রেও সেই প্রোটোকল ছিল, এখনও আছে।” পাশাপাশি তিনি জানান, করোনার জন্য সর্বত্র রোগীর সংখ্যা কমেছে। তাঁর এ-ও বক্তব্য, “তবে আর আহমেদে একটিও বড় অস্ত্রোপচার না হওয়াটা অস্বাভাবিক। কেন এমন হল খোঁজ নিচ্ছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE