Advertisement
১৮ মে ২০২৪

রূপান্তরকামীদের নিগ্রহ রুখতে শিবির কলেজে

হিজড়ে, বৃহন্নলা, রূপান্তরকামীদের জন্য কোল পেতে দিয়েছে আধুনিক উচ্চশিক্ষা। কিন্তু অনেক কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়েই সহপাঠীদের কাছে স্বাভাবিক ব্যবহার পাচ্ছেন না তাঁরা। সচেতনতার অভাবই এর মূল কারণ বলে মনস্তত্ত্ববিদদের অভিমত।

মধুমিতা দত্ত
শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৩০
Share: Save:

হিজড়ে, বৃহন্নলা, রূপান্তরকামীদের জন্য কোল পেতে দিয়েছে আধুনিক উচ্চশিক্ষা। কিন্তু অনেক কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়েই সহপাঠীদের কাছে স্বাভাবিক ব্যবহার পাচ্ছেন না তাঁরা। সচেতনতার অভাবই এর মূল কারণ বলে মনস্তত্ত্ববিদদের অভিমত। তাই রূপান্তরকামীদের বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তোলার জন্য এ বার কলেজে কলেজে বিশেষ শিবিরের আয়োজন করা হচ্ছে। সম্প্রতি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে এই অনুমতি দিয়েছে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর।

সমাজের নানা ক্ষেত্রে মানসিক, শারীরিক হেনস্থার শিকার হতে হয় রূপান্তরকামীদের। যাঁরা উচ্চশিক্ষার জন্য কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যান, অন্তত তাঁদের মানসিকতা অন্য রকম হওয়া উচিত বলেই মনে করেন শিক্ষাজগৎ ও মনস্তত্ত্ববিদেরা। কিন্তু বাস্তব বলছে অন্য কথা। দেখা যাচ্ছে, শিক্ষাঙ্গনেও টিটকিরি, কটূক্তি, র‌্যাগিং, এমনকী শারীরিক হেনস্থা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না রূপান্তরকামীরা। সহমর্মীরা মনে করেন, মানসিকতার বদল ঘটাতে না-পারলে এই সমস্যার সুরাহা হবে না। তাই এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে বিশেষ শিবিরের আয়োজন করা হচ্ছে কলেজে।

এই ধরনের শিবির খোলার জন্য রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতরের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন রাজ্য রূপান্তরকামী উন্নয়ন পর্ষদের সদস্য অনিন্দ্য দত্ত। উচ্চশিক্ষা দফতর সম্মতি দিয়েছে। অনিন্দ্যবাবু রবিবার জানান, ছোটবেলা থেকে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে রূপান্তরকামীদের অমানবিক ব্যবহারের শিকার হতে হয়। কলেজে গিয়েও তাঁরা এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পান না। ‘‘রূপান্তরকামী বলে অনেককে কলেজে র‌্যাগিংয়েরও শিকার হতে হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছচ্ছে যে, বাধ্য হয়ে কলেজ ছাড়তে হচ্ছে ভুক্তভোগীদের। এই সব ক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সাহায্যও তাঁরা তেমন ভাবে পান না। কারণ, রূপান্তরকামীদের নিয়ে এক অকারণ বিরূপতা, এক অজানা সমস্যায় ভোগেন অনেকেই। তাই আমরা এই বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে চাইছি,’’ বললেন অনিন্দ্যবাবু।

কলেজে কলেজে সচেতনতা শিবির করার জন্য শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে অনুরোধ করেছিলেন রূপান্তরকামী উন্নয়ন পর্ষদের ওই সদস্য। ডিপিআই জয়শ্রী রায়চৌধুরীর কাছ থেকে সম্প্রতি সম্মতিপত্র পাওয়া গিয়েছে। জয়শ্রীদেবী বলেন, ‘‘আমরা প্রয়োজনীয় সম্মতি দিয়েছি। এ বার কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে কথা বলে ওঁরা শিবিরের দিন ঠিক করবেন।’’

রূপান্তরকামীদের বিষয়ে পুলিশের মধ্যে আগেই সচেতনতা শিবির চালু হয়েছে বলে জানান অনিন্দ্যবাবু। এ বার তাঁরা যেতে চাইছেন কলেজে কলেজে। প্রথমে বেছে নেওয়া হয়েছে কলকাতার বেশ কয়েকটি কলেজকে। শুধু ছাত্রছাত্রী নয়, ওই সব শিবিরে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদেরও সামিল করা হবে। অনিন্দ্যবাবু জানান, প্রথম দিকের সচেতনতা শিবিরে উপস্থিত থাকার জন্য শিক্ষামন্ত্রীকেও আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। কলকাতার কলেজে শুরু করে ধীরে ধীরে রাজ্যের সব প্রান্তের কলেজে শিবির করা হবে।

রূপান্তরকামীদের মধ্যে দেশে প্রথম কলেজ-অধ্যক্ষা হয়েছেন মানবী বন্দ্যোপাধ্যায়। লিঙ্গ সচেতনতা সেল থাকলেও অধিকাংশ কলেজে রূপান্তরকামীদের জন্য আলাদা কোনও সেল থাকে না। মানবীদেবী অবশ্য জানালেন, তিনি ইতিমধ্যেই কৃষ্ণনগরে তাঁদের মহিলা কলেজে রূপান্তরকামীদের জন্য বিশেষ সেল চালু করেছেন। রূপান্তরকামী পরিচয়ে ওই কলেজে ভর্তিও নেওয়া হয়েছে। কলেজ পরিদর্শনে এসে ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট এ্যান্ড অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল বা নাক-এর সদস্যেরা সেই সেলও দেখেছেন। ‘‘রূপান্তরকামীদের নিয়ে কলেজে কলেজে এই ধরনের সচেতনতা শিবির চালু করাটা খুবই ভাল উদ্যোগ,’’ বললেন মানবীদেবী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Stop Harassment Transgender Starts Campaign
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE