Advertisement
E-Paper

‘ধার’ ফেরত না দেওয়ায় তলব

মিল বাঁচাতে চটকল শ্রমিকদের কাছেই হাত পেতেছিলেন মিল কর্তৃপক্ষ। আর্থিক মন্দার দোহাই দিয়ে তাঁদের আর্জি ছিল, শ্রমিকদের দৈনিক ভাতা থেকে একটা নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা কেটে সেই অর্থেই চটকলের ‘পুনরুজ্জীবন’ চান তাঁরা। দু’বছর পরে সুদ-সহ সে টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও ছিল। তবে, দশক ঘুরে গেলেও উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটি এবং হাওড়ার চেঙ্গাইলের ওই দুই চটকল কর্তপক্ষ সে আশ্বাসে আর সাড়া দেননি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:০৩

মিল বাঁচাতে চটকল শ্রমিকদের কাছেই হাত পেতেছিলেন মিল কর্তৃপক্ষ।

আর্থিক মন্দার দোহাই দিয়ে তাঁদের আর্জি ছিল, শ্রমিকদের দৈনিক ভাতা থেকে একটা নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা কেটে সেই অর্থেই চটকলের ‘পুনরুজ্জীবন’ চান তাঁরা।

দু’বছর পরে সুদ-সহ সে টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও ছিল। তবে, দশক ঘুরে গেলেও উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটি এবং হাওড়ার চেঙ্গাইলের ওই দুই চটকল কর্তপক্ষ সে আশ্বাসে আর সাড়া দেননি। শ্রমিকদের কাছে ‘ধার’ নেওয়া সেই টাকা বেমালুম ‘মেরে’ দেওয়ার অভিযোগে ওই দুই দুই চটকল কর্তপক্ষের বিরুদ্ধে সম্প্রতি শ্রম দফতরে অভিযোগ দায়ের করেছিল একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।

অভিযোগ পেয়ে নড়েচড়ে বসেছে শ্রম দফতর। উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটির ওই চটকলের ম্যানেজারকে তলব করেছেন সহকারী শ্রম-কমিশনার। শ্রম দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শীঘ্রই তলব করা হবে হাওড়ার চেঙ্গাইলের অন্য চটকল কর্তৃপক্ষকেও। শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকও বিষয়টি শুনে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বলছেন, “শ্রম কমিশনারকে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে জানাতে বলেছি।”

চটকলের আর্থিক মন্দার দোহাই দিয়ে ২০০৫-০৭, দু-বছরে নৈহাটির ওই চটকল কর্তপক্ষ শ্রমিকদের কাছ থেকে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা তুলেছিলেন বলে শ্রম দফতরের খবর। প্রায় একই ছবি হাওড়ার চেঙ্গাইলের চটকলটিতেও। ১৯৯১-৯৩ দু-বছরে ওই চটকলে মিল মালিকরা শ্রমিকদের কাছে ‘ধার’ নিয়েছিলেন প্রায় ২.৩৫ কোটি টাকা। হাওড়ার ওই জুটমিল কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, সেই সময়ে ‘বিআইএফআর’-এ চলে যাওয়া চটকলের পুনরুজ্জীবনের স্বার্থেই শ্রমিকদের কাছে থেকে চাঁদা তুলে ওই তহবিল গড়েছিলেন তাঁরা।

কিন্তু পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুসারে সে টাকা না পেয়ে শ্রমিকরা মুখ খোলেননি কেন?

তাঁদের দাবি, টাকা ‘আত্মসাতের’ অভিযোগ জানাতে শ্রম-দফতর কিংবা পুলিশের কাছে পা বাড়াতে গেলেই এ যাবৎ তাঁরা বাধা দেওয়া হচ্ছিল। চটকলের বাম-ডান শ্রমিক ইউনিয়নগুলিই ‘সমস্যা’ মিটিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে অভিযোগ জানাতে বাধা দিয়েছিলেন তাঁদের। বিভিন্ন ইউনিয়নের নেতাদের চাপেই এত দিন তাঁরা অভিযোগ জানাতে পারেনি বলে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষে অভিযোগ করেছেন বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়। চেঙ্গাইলের কানোরিয়া জুটমিলের বাম-ডান, ৬টি শ্রমিক ইউনিয়ন অবশ্য এ ব্যাপারে তৎপর হয়েছে এখন। দিন কয়েক আগে তারাও এ ব্যপারে মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে নালিশ জানিয়েছে খোজ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে।

রাজ্যের পরিবেশ দফতরের প্রাক্তন মুখ্য আইন-অফিসার তথা পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎবাবু চটকল শ্রমিক স্বার্থে দীর্ঘ দিন ধরেই কাজ করে আসছেন। শ্রমিকদের বিনা পারিশ্রমিকে আইনি সহায়তা করে আসছে তাঁর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন চন্দননগরের ‘আইনি সহায়তা কেন্দ্র’। তাঁর অভিজ্ঞতা, “চটকল শ্রমিকদের এখন দৈনিক ভাতা ২১৫ থেকে ২৫০ টাকা। কিন্তু পঁচিশ বছর আগে, চেঙ্গাইলের ওই চটকলটি যখন শ্রমিকদের কাছে ‘ধার’ নিয়েছিল তখন তাদের দৈনিক ভাতা ছিল আরও কম।” শ্রমন্ত্রীর কাছে তাঁর লিখিত অভিযোগে বিশ্বজিৎবাবু জানান, দু’টি চটকলেই মিল কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের দৈনিক ভাতা থেকে ৩০ টাকা করে কেটে নিত। এ ভাবেই নৈহাটি মিল কর্তৃপক্ষ দু-বছরে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা তুলেছিল। চেঙ্গাইলের মিল কর্তৃপক্ষের কাছে শ্রমিকদের প্রাওনা ২ কোটি ৩৫ লক্ষেরও বেশি টাকা।

রাজ্যের চটকল এবং তার শ্রমিকদের আর্থ-সামাজিক জীবন যাপন নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করছেন মুম্বইয়ের ‘স্কুল অফ জুট অ্যান্ড টেক্সটাইল ম্যানেজমেন্ট’-এর দীপঙ্কর বসু। তিনি বলেন, “রাজ্যের বেশ কিছু চটকলে এ ভাবেই টাকা আত্মসাৎ করেছে মিল কর্তৃপক্ষ। কাজ হারানোর ভয়ে শ্রমিকরা এ ব্যাপারে মুখও খুলতে চাইতেন না।” তাঁর অভিজ্ঞতা, শ্রমিক ইউনিয়নগুলি ‘কাজ’ করে কার্যত মালিক পক্ষের হয়েই। তাই এ ব্যাপারে শ্রমিকরা মুখ খুলতে গেলেই মধ্যস্থতায় এগিয়ে এসে এত দিন পরিস্থিতি সামাল দিয়ে এসেছেন ইউনিয়নের নেতারা।

jutemill naihati jutemill chengail jutemill latest news online news latest news online
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy