প্রতীকী ছবি।
সোনারপুরের বাসিন্দা পারুলবালা নস্কর (নাম পরিবর্তিত) কাজ করেন বাঘা যতীন এলাকার একটি বাড়িতে। ‘‘সকালে কোনও মতে বাসে বাঘা যতীনে পৌঁছই। সন্ধ্যায় প্রায়ই ভিড়ের জন্য বাসে উঠতে পারি না। অটোয় বাড়তি ভাড়া দিয়ে বাড়ি ফিরতে হলে আয়ের কিছুই আর বাঁচাতে পারব না। তাই নিরুপায় হয়ে উঠে পড়ি বিশেষ ট্রেনে,’’ স্বীকার করলেন পারুলবালা।
অতিমারির আগে পারুলবালারা যাতায়াত করতেন লোকাল ট্রেনে। লোকাল এখনও চালু হয়নি এবং সেই জন্যই তাঁরা অসহায় বলে জানালেন ওই মহিলা। পারুলবালা সেই লক্ষ লক্ষ মহিলা-পুরুষের প্রতিনিধি, পেটের টানে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, নদিয়ার মতো জেলা থেকে যাঁদের রোজ আসতে হয় কলকাতায়। পুজো অদূরে। কেনাকাটা এবং অন্যান্য প্রয়োজনে বহু মানুষকে মহানগরীতে আসতে হচ্ছে। কিন্তু লোকাল চালু না-হওয়ায় তাঁদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। বিভিন্ন জেলা থেকে সরকারি ও বেসরকারি বাস পর্যাপ্ত নয়। বাস না-পেয়ে যাত্রীদের একাংশ রেলকর্মীদের জন্য নির্দিষ্ট বিশেষ ট্রেনে (রক্ষী না-থাকলে) উঠে পড়ছেন। বজবজ, ডায়মন্ড হারবার, ক্যানিং, বারাসত, ব্যারাকপুর, ব্যান্ডেল, বর্ধমান শাখায় সমস্যা বেশি।
‘‘স্টাফ স্পেশাল ট্রেন রেলের কর্মীদের জন্য নির্দিষ্ট। কিন্তু অফিস, বাজার খুলে যাওয়ায় অজস্র মানুষ শহরে আসছেন। সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পথে সমস্যায় পড়ে শত শত যাত্রী চলে আসছেন স্টেশনে। রক্ষী দিয়ে তাঁদের ঠেকিয়ে রাখা মুশকিল,” বলেন শিয়ালদহের এক রেল আধিকারিক।
যাদবপুর, বালিগঞ্জের মতো স্টেশনে রক্ষীদের কড়াকড়িতে বিশেষ ট্রেনে উঠতে না-পেরে প্রায় প্রতিদিনই অনেকে ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন। পূর্ব রেলের হাওড়া ডিভিশনের তুলনায় শিয়ালদহে এই সমস্যা তীব্রতর। কলকাতার সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বনগাঁ, বারাসত, বারুইপুর, সোনারপুর, ক্যানিং, বজবজ প্রভৃতি এলাকার বাসিন্দাদের মূলত শহরতলির ট্রেনের উপরে নির্ভর করতে হয়। ওই সব অঞ্চল থেকে বাস চালু হলেও বাস খুব কম। প্রাক্-করোনা পরিস্থিতিতে সোনারপুর থেকে রোজ টিকিট কেটেই লক্ষাধিক যাত্রী ট্রেনে যাতায়াত করতেন। এখন যাদবপুর, বালিগঞ্জ স্টেশনে রক্ষীদের কড়াকড়িতে তাঁদের অনেকে বিশেষ ট্রেনেও উঠতে পারছেন না। যাদবপুর, বালিগঞ্জ, শিয়ালদহ রুটে সরকারি-বেসরকারি বাস চললেও যাত্রী-সংখ্যার তুলনায় তা খুবই কম। সন্ধ্যার পরে বাস কমে গেলে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হচ্ছে। বাড়ি ফেরার তাগিদে মরিয়া হয়ে রেলকর্মীদের জন্য নির্দিষ্ট ট্রেনে ওঠার চেষ্টা করছেন অনেকে। কেউ কেউ সেই ট্রেনে উঠে পড়ছেন, কিন্তু অধিকাংশই উঠতে পারছেন না।
এই অবস্থায় লোকাল চালু না-হলে যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলার সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন রেলকর্তাদের একাংশ। অধিকাংশ যাত্রীর বক্তব্য, শহরতলির ট্রেন চালু না-করলে সমস্যার সুরাহা হবে না। ভিড়-বাসে সংক্রমণের আশঙ্কা কোনও অংশে কম নয়। বরং দূরত্ব-বিধি মেনে কিছু যাত্রী লোকাল ট্রেনে যাতায়াতের সুযোগ পেলে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।রেল সূত্রের খবর, তারা লোকাল চালানোর প্রস্তুতি সেরে রেখেছে। তবে এই বিষয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা প্রয়োজন। মেট্রো চালু হয়েছে। কিন্তু লোকাল নিয়ে রাজ্য কিছু জানায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy